Advertisement
E-Paper

কেবলই ছবি

গীতা মাহালির গৃহে দ্বিপ্রাহরিক ভোজন ব্যর্থ হয় নাই। সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের ছবি, তিনি টিন-দরমার বা়ড়িতে ভূম্যাসনে ডাল-ভাত খাইতেছেন।

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৭ ০০:২০

গীতা মাহালির গৃহে দ্বিপ্রাহরিক ভোজন ব্যর্থ হয় নাই। সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের ছবি, তিনি টিন-দরমার বা়ড়িতে ভূম্যাসনে ডাল-ভাত খাইতেছেন। পার্শ্বে হাস্যমুখ গীতা। অমিত শাহ প্রথম নহেন, সম্ভবত শেষও নহেন। নেতারা দরিদ্র পরিবারের হেঁশেলে ঢুকিয়া খাইতে বসিয়াছেন, আর মিডিয়া ভাঙিয়া পড়িয়াছে, ক্যামেরার ফ্ল্যাশের ঝলকানি নিরন্তর— ভারতীয় রাজনীতিতে এই ‘ফোটো-অপ’ এখন নিয়মিত ঘটনা। তবে, অমিত শাহের গল্পে একটি ছোট প্যাঁচ রহিয়াছে। গীতা মাহালির বাড়িতে নহে, প্রথমে তাঁহার পাত পড়িবার প্রস্তাব ছিল দলীয় পঞ্চায়েত সদস্য সাধনা মণ্ডলের গৃহে। কিন্তু সেই বাড়ি পাকা, সাধনার শ্বশুরমহাশয়ের আবার তিনতলা বাড়ি। সেখানে খাইলে পঞ্চব্যঞ্জন পাতে পড়িত বটে— বস্তুত, সংবাদে প্রকাশ, পাঁচ নহে, সাত রকম পদের আয়োজন হইয়াছিল— কিন্তু ‘ফোটো অপ’টি মাঠে, বা পাকা দালানে, মারা যাইত। সেই বাড়ি অতএব নাকচ হইয়া যায়। বাছিয়া লওয়া হয় দলিত মাহালি পরিবারকে। ভারতীয় রাজনীতিতে গরিবের মার নাই। দলিতের দাওয়ায় বসিয়া নৈশভোজেও রাহুল গাঁধীর ভোটভাগ্য পাল্টায় নাই বটে, কিন্তু তাহাতে দরিদ্রনায়ারণের উপর নেতাদের বিশ্বাস চটে নাই।

অমিত শাহ এক দলিত গৃহবধূর ঘরে আহার করিলে তাহা কেন রাজনৈতিক বার্তা হয়, তাহার কারণ বিশ্লেষণ করিলে ভারতীয় সমাজের অর্থ-বর্ণ-শ্রেণি বিভাজনের চরিত্রটি স্পষ্ট হইবে। গীতা দলিত। তিনি দরিদ্রও বটে। উচ্চাবচতার সব মাপকাঠিতেই অমিত শাহের অবস্থান তাঁহার ঢের ঊর্ধ্বে। এবং, তাঁহাদের ফারাকটি এমনই যে ছবিতে তাহা বিলক্ষণ ধরা পড়ে। তাঁহার গৃহে প্রতীকী ভোজনের প্রতীকটি হইল— উচ্চকোটির মানুষ হইয়াও নেতা এমনই মহান যে ‘ছোটলোক’-এর ঘরে খাইতেও দ্বিধা বোধ করেন না। এই বার্তাটি, ভোজনরত নেতার ছবিটি ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের পক্ষে গভীর, তীব্র অপমানের। ছবিতে তাঁহাদের উপস্থিতি নেহাতই ‘কনট্রাস্ট’ হিসাবে— তাঁহাদের ‘অন্ধকার’-এর প্রেক্ষিতে নেতা আরও উজ্জ্বল হইয়া উঠিবেন, ইহাই তাঁহাদের মাহাত্ম্য। শুধু অমিত শাহের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করা অন্যায় হইবে, দলমতনির্বিশেষে নেতারা এই কাজটি করেন। তবে, তাঁহারা ভুলিয়া যান, দরিদ্র ভারতবর্ষের সহিত সংযোগ কতখানি ক্ষীণ হইয়া গেলে এক দিনের প্রতীকী সান্নিধ্য ‘খবর’ হইতে পারে, এই কথাটি কিন্তু লুকাইবার আর উপায় নাই।

কাহারও হয়তো এই প্রসঙ্গে মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর কথা মনে পড়িবে। সঙ্গে মনে পড়িবে সরোজিনী নাইডুর সেই উক্তিও: ‘বাপু যদি জানিতেন, তাঁহাকে গরিব রাখিতে কত টাকা খরচ করিতে হয়!’ মনে পড়া ভাল। তাহাতে বৈপরীত্যটি প্রকট হয়। ১৯৪৬-এ বেলেঘাটা-বাস পর্বের শেষে গাঁধী নিজের হাতে বাংলায় লিখিয়া দিয়াছিলেন, ‘আমার জীবনই আমার বাণী।’ আর কোনও মানুষের ক্ষেত্রে বুঝি কথাটি এতখানি সত্য নহে। দরিদ্র মানুষের সঙ্গে থাকিবার অধিকারটি গাঁধী তাঁহার জীবন দিয়া অর্জন করিয়াছিলেন। সেই অধিকার ভিন্ন সাধনার ফল। তাহা অমিত শাহদের অগম্য। ফলে, যে পরিবারে দারিদ্রের ছবিটি ক্যামেরায় ভাল ধরা পড়ে, তাহাকে বাছিয়া লইয়াই তাঁহাদের দরিদ্র-প্রেম শেষ করিতে হয়।

Political leaders Public relation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy