Advertisement
E-Paper

ক্রমশ প্রকাশ্য

প্রকৃতপ্রস্তাবে ট্রাম্প কিঞ্চিৎ কোণঠাসা মাত্র। দুই বছর তাঁহার বিচিত্র কীর্তিকলাপ দেখিবার এবং বিচিত্রতর সুভাষিতাবলি শুনিবার পরেও তাঁহার ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসায় নাই কোনও ‘নীল ঝড়’।

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৮ ০০:০০

আট বৎসর বাদে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নতর কক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস দখল করিল ডেমোক্র্যাট দল। উচ্চতর কক্ষ সেনেটে অবশ্য রিপাবলিকানদের দাপট বাড়িয়াছে। অর্থাৎ, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এই ফলকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘পতনের সূচনা’ বলিয়া অভিহিত করিলেও, প্রকৃতপ্রস্তাবে ট্রাম্প কিঞ্চিৎ কোণঠাসা মাত্র। দুই বছর তাঁহার বিচিত্র কীর্তিকলাপ দেখিবার এবং বিচিত্রতর সুভাষিতাবলি শুনিবার পরেও তাঁহার ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসায় নাই কোনও ‘নীল ঝড়’। মার্কিন অর্থনীতির, বিশেষত কর্মসংস্থান পরিস্থিতির আপেক্ষিক উত্তরণ প্রেসিডেন্টকে সাহায্য করিয়াছে বটে, কিন্তু তাঁহার রাজনৈতিক সমর্থন-ভিত্তির নিজস্ব জোরকে তুচ্ছ করিবার উপায় নাই। অন্য দিকে, তাঁহার বিরোধীরা নিজেদের সংহত করিয়াছেন, সেই সংহতিই হাউস-এ পালাবদল আনিয়াছে। এই প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা লইয়াছে নাগরিক সমাজের নেতৃত্ব, যাহা বহুলাংশে স্বতঃপ্রণোদিত। রাজনীতির অঙ্গনে অবতীর্ণ হইবার দিন হইতে মুসলমান, লাতিন আমেরিকান ও মহিলাদের নিরন্তর আক্রমণ করিয়াছেন ট্রাম্প। তাহার বিরুদ্ধে বিপুল প্রতিবাদ এত দিন পথে চলিতেছিল, ভোটের বাক্সে তাহার প্রতিফলন দেখা গেল এই বার। এবং সর্বাধিক নজর কাড়িয়া লইয়াছেন ‘আক্রান্ত’রাই। ইতিহাস সৃষ্ট করিয়া হাউসে প্রবেশ করিতেছেন মুসলমান, নেটিভ আমেরিকান, লাতিন বংশোদ্ভূত এবং কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা সদস্যেরা। প্রথম ঘোষিত সমকামী গভর্নর হইবেন জ্যারেড পলিস। কংগ্রেসের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হইতে চলিয়াছেন ২৯ বৎসর বয়সি আলেকসান্দ্রিয়া ওকাসিয়ো-কোর্তেস। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সহিত যুক্ত ১১ জন ডেমোক্র্যাট সদস্যের জয়ও তাৎপর্যপূর্ণ।

অতঃপর? ডেমোক্র্যাট হাউস লইয়া ট্রাম্প কী করিবেন? নির্বোধ ভিন্ন কেহ তাঁহার সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করিবে না। ইতিমধ্যেই তিনি চমক দেখাইয়াছেন। হাউস হাতছাড়া হইবার কিয়ৎক্ষণ বাদেই রণক্ষেত্রে নামিয়া সরাইয়া দিয়াছেন স্বাধীনচেতা অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনসকে। অপ্রিয় প্রশ্ন করিয়া কোপে পড়িয়াছেন সিএনএন-এর হোয়াইট হাউসের বিশেষ প্রতিবেদক জিম অ্যাকোস্টা। এবং, ডেমোক্র্যাটদের ট্রাম্প হুমকি দিয়াছেন— তাঁহার বিরুদ্ধে তদন্ত হইলে, তিনিও বলিবেন ‘যুদ্ধং দেহি’। পক্ষান্তরে, বিরোধী নেতা ন্যান্সি পেলোসির বক্তব্যে সঙ্কেত মিলিয়াছে: ডেমোক্র্যাটরা আগ বাড়াইয়া সংঘাতের পথে হাঁটিবেন না। সেনেট হস্তগত না করিয়া প্রেসিডেন্টকে ইমপিচ করিবার ভাবনা যে অবিমৃশ্যকারিতা, সে কথা তাঁহারা জানেন। কিন্তু ট্রাম্প-প্রশাসনের উপর আইনসভার নিয়ন্ত্রণ বাড়িবে, তাহাতে সংশয় নাই। গণতন্ত্রের পক্ষে ক্ষমতার এই ভারসাম্যটি শুভ।

ট্রাম্পের বিভিন্ন নীতির উপরে এই নির্বাচনের কী প্রভাব পড়িবে, তাহা ক্রমশ প্রকাশ্য। অনেক বিষয়েই ডেমোক্র্যাটরা তাঁহার পথের কাঁটা হইয়া উঠিতে পারেন। তবে অনেক বিষয়েই আবার তাঁহারা ট্রাম্পের নীতির পক্ষেও বটে। যেমন, মুক্ত বাণিজ্য, ভিসা নীতি বা পারমাণবিক সহযোগিতার প্রশ্নে ডেমোক্র্যাটরা পরম্পরাগত ভাবে রিপাবলিকানদের তুলনায় কট্টরপন্থী। সেই হিসাবে, ডেমোক্র্যাটদের ক্ষমতাবৃদ্ধি ভারতের পক্ষে অনুকূল না-ও হইতে পারে। নরেন্দ্র মোদীর সরকার দৃশ্যত বুঝিয়াছে যে, দুই দলের কাহারও সহিত অধিক ঘনিষ্ঠতায় ভারতের লাভ নাই। এই বোধের কারণেই ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যাপারে আগ বাড়াইয়া মন্তব্য করা হইতে বিরত থাকিবার বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছে দিল্লি। বিচক্ষণতা এই সরকারের চরিত্রলক্ষণ নহে। তাহার কূটনীতির বোধ সম্পর্কেও বিভিন্ন উপলক্ষে গভীর সংশয়ের কারণ ঘটিয়া থাকে। এই একটি প্রশ্নে অন্তত অন্য সঙ্কেত পাওয়া গেল ভাল।

Donald Trump USA International Affairs
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy