Advertisement
E-Paper

যুদ্ধ কিন্তু কোনও আবেগ দিয়ে হয় না

হাল্লা এবং শুন্ডির যুদ্ধবৃত্তান্ত আমরা জানি। তবুও এক অদ্ভুত রক্তপিপাসা, আরও এক বার বলছি নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে রেখেই, অবাক করার মতন বিষয় বইকি।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৫২
এ দেশের বীর সৈনিকদের হত্যার ঘটনার বদলা নিতে আর এক দল বীর সৈনিককে রণাঙ্গণে পাঠাতে চাইছি আমরা, আরও এক দিন, আরও এক বার আরও একটা মোমবাতি মিছিল করব বলে? ছবি: পিটিআই।

এ দেশের বীর সৈনিকদের হত্যার ঘটনার বদলা নিতে আর এক দল বীর সৈনিককে রণাঙ্গণে পাঠাতে চাইছি আমরা, আরও এক দিন, আরও এক বার আরও একটা মোমবাতি মিছিল করব বলে? ছবি: পিটিআই।

এখন অন্য কোনও কথা বলার সময় নয়। এখন হাল্লা চলেছে যুদ্ধে। হাল্লা চাক বা না চাক, তাকে যুদ্ধে যাওয়ানো হবেই। কারণ, তেমনটাই মানুষ চাইছে। শুন্ডির পিন্ডি চটকানো ছাড়া এই মুহূর্তে কোনও প্রিয় সাধ নেই আর এ দেশের মানুষের যেন।

পুলওয়ামার ওই ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর, ওই অত বীর সৈনিকের প্রাণ যাওয়ার পর গোটা দেশ যে তীব্র আবেগের ঢেউয়ের মধ্যে পড়বে, তাতে বিন্দুমাত্র অস্বাভাবিক কিছু নেই। আমরা গোটা দেশ এখন জর্জর— বেদনায়, ক্ষোভে, দুঃখে, হতাশায় এবং ক্রোধে। সেটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু যুগ যখন সোশ্যাল মিডিয়ার, ক্রোধ যখন অপরিমেয়, শত্রুনাম যখন চিহ্নিত, তখন তুমুল আবেগের ওই স্রোতে কট্টর বিদ্বেষের বেনোজল যে ঢুকবে তা-ও বোধহয় নতুন কোনও কথা নয়। অতএব দেশ জুড়ে এখন রণহুঙ্কার, হ্যাশট্যাগে এখন প্রতিশোধের গর্জন, ট্রেনে-বাসের আলোচনায় মানচিত্র থেকে পাকিস্তান দেশটাকেই মুছে দেওয়ার তুমুল ঘোষণা, মোদী-রাজনাথদের উদ্দেশে যুদ্ধে বেরিয়ে পড়ার অবাধ পরামর্শ— এই সব চলতেই থাকছে। থাকছে, কারণ এই সমস্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারী আমরা যুদ্ধপ্রাঙ্গণের থেকে কয়েক সহস্র যোজন দূরের নিরাপদ দূরত্বে বসে ড্রয়িং রুম আস্ফালনে মত্ত। শীর্ণ বাহু, দীর্ণ হৃদয়, জীর্ণ মস্তিষ্ক নিয়ে আমরা এখন স্বপ্ন দেখছি গুঁড়িয়ে দেওয়ার, স্বপ্ন দেখছি সীমান্ত পেরিয়ে আমাদের বীর সৈনিকেরা একের পর এক শত্রু শিবির ধ্বংস করতে করতে এগিয়ে চলেছেন। চলেছেন বিজয়কেতন ওড়াতে ওড়াতে, সেই কেতনে আমাদের সৈনিকদের হত্যার প্রতিশোধের অঙ্গীকার লেপন করা। যেমনটা ফিল্মে হয়ে থাকে, জ্যায়সা ফিল্মো মেঁ হোতা হ্যায়। অতএব আমরা বাস্তববোধ বিবর্জিত অবস্থায় দেশপ্রেমের সদম্ভ প্রমাণের তাগিদে, যুদ্ধ ছাড়া গতি নেই এই মৌতাতে বেশ বুঁদ হয়ে রয়েছি।

মৌতাতটা ভাঙার কথা ছিল তখনই, যখন ওই সোশ্যাল মিডিয়াতেই কোনও এক প্রাক্তন সেনাকর্তা মনে করিয়ে দেন, যুদ্ধ কিন্তু কোনও আবেগ দিয়ে হয় না, হয় অসংখ্য সৈনিকের বাস্তবিক লড়াইয়ের মাধ্যমেই। যে লড়াইয়ের প্রথম শর্ত, ওই সৈনিককে ওই রণাঙ্গণে ওই সময়ে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে, মৃত্যুকে যে কোনও মুহূর্তের পরিণতি হিসাবে জেনেই। প্রাক্তন ওই সেনাকর্তা লিখেছেন, আমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি, ওই যে এক এক জন সৈনিক, তাঁরা আমারই দেশের সাধারণ মানুষ। আত্মীয়-পরিজন-ঘরবসত-সহ নিতান্ত সাধারণ মানুষ। আমার প্রতিশোধস্পৃহা এবং যুদ্ধ করো এই আস্ফালনের অর্থ ওই মানুষটিকে রণাঙ্গণে পাঠাতে চাইছি আমরা— অবশ্যই নিজেকে অনেক নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে রেখে। এ দেশের বীর সৈনিকদের হত্যার ঘটনার বদলা নিতে আর এক দল বীর সৈনিককে রণাঙ্গণে পাঠাতে চাইছি আমরা, আরও এক দিন, আরও এক বার আরও একটা মোমবাতি মিছিল করব বলে? নাকি মৌতাতটা ভাঙছেই না আমাদের?

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

হাল্লা এবং শুন্ডির যুদ্ধবৃত্তান্ত আমরা জানি। তবুও এক অদ্ভুত রক্তপিপাসা, আরও এক বার বলছি নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে রেখেই, অবাক করার মতন বিষয় বইকি। এ এক আশ্চর্য সময় যখন শোক আমাদের স্থিতধী না করে রণোন্মাদ রক্তপিপাসু করে তোলে। এই গভীর অসুখের সময়েও স্বস্তির কথা একটাই, সোশ্যাল মিডিয়াতেই ভেসে উঠছে ভিন্ন স্বর, জেগে উঠছে তারা, চরাচরব্যাপী বিষাক্ত এক আবেগের বিরুদ্ধে মাথা তুলে বলছে, এই পথ ঠিক নয়।

আরও পড়ুন: ‘বহুত বড়ি গলতি’, পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষার হুঁশিয়ারি মোদীর, সেনাবাহিনীকে ‘স্বাধীনতা’

আরও পড়ুন: সন্ত্রাসবাদকে রুখতে সরকারের পাশে আছি, সর্বদলীয় বৈঠকে বার্তা দিল বিরোধীরা

একা রাজাই এখন উলঙ্গ নয়, উলঙ্গ আমরা সবাই। এখন সেই শিশুকে বড় দরকার, যে আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলবে, তোমাদের কাপড় কোথায়?

Pulwama Attack পুলওয়ামা পুলওয়ামা হামলা Terror Attack Terrorism Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy