Advertisement
E-Paper

পুতিনের আক্ষেপ

প্রেসিডেন্ট পদে আসীন থাকিয়া তিনি নিজেই তো আর বিরোধী নেতা তৈরি করিয়া দিতে পারেন না! বিরোধী না থাকিলে ভোটেরও কোনও অর্থ থাকে না, এই বাণী শুনাইলেন তিনি।

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:৪১

রাশিয়ার নির্বাচন আসিতে আর কয়েক মাস বাকি। ফলে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অত্যন্ত বিচক্ষণ পায়ে নির্বাচনী প্রচার মঞ্চে প্রবেশ করিতেছেন। তাঁহার প্রবেশের প্রথম মুহূর্তটি একটি নাটকীয় ঘোষণার দৌলতে বেশ বিশিষ্ট হইয়া রহিল। তিনি ছদ্ম-দুঃখের সহিত প্রশ্ন তুলিলেন, রাশিয়ার হইল কী, কোনও বিরোধী নেতা নাই কেন? ছদ্ম-দুঃখের সঙ্গে মিলিল ব্যঙ্গের কাঁটাও: প্রেসিডেন্ট পদে আসীন থাকিয়া তিনি নিজেই তো আর বিরোধী নেতা তৈরি করিয়া দিতে পারেন না! বিরোধী না থাকিলে ভোটেরও কোনও অর্থ থাকে না, এই বাণী শুনাইলেন তিনি। বাস্তবিক, কিছু দিন ধরিয়াই পুতিন নানা রকম সাক্ষাৎকার ইত্যাদিতে বলিয়া চলিতেছেন, আহা, প্রতিযোগিতা কি কেবল অর্থনীতিরই একচেটিয়া, রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা না থাকিলে চলিবে? নিজেই রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিসরটি টুঁটি টিপিয়া মারিয়া ফেলিয়াছেন যে নেতা, তাঁহার এমন ‘দুঃখ’প্রকাশের নাট্যশালা দেখিয়া চমকিত হইতে হয়। যাঁহার সযত্ন তত্ত্বাবধানে বিরোধী নেতার সহিত তাঁহার নিজের সমীক্ষাগত ভোটপার্থক্য হয় ৮ শতাংশ বনাম ৬১ শতাংশ, তিনি যে কী করিয়া নিজের দেশে গণতন্ত্রের দাবি করেন, তাহাই বিস্ময়! বস্তুত, ভ্লাদিমির পুতিন বিশ্বের নেতাদের মধ্যে একটি ঐতিহাসিক বিশিষ্টতার দাবিদার। ক্রমাগত, বড় বড় নৈতিক কথা বলিতে বলিতে এই চরম কর্তৃত্ববাদী নেতা পিছন-হাতে সকল প্রতিযোগী ও প্রতিদ্বন্দ্বী নেতাদের বন্দি করিয়া, মামলায় অভিযুক্ত করিয়া, কিংবা সোজাসুজি হত্যা করিয়া রাজনৈতিক কেরিয়ার ‘শেষ’ করিতেছেন, এবং গণতন্ত্রের শ্বাসরোধ করিতেছেন। মুখে এক কথা, কাজে আর এক— পৃথিবী জুড়িয়া এই দ্বিচারিতা সকল রঙের সকল নেতাই করিয়া থাকেন। কিন্তু পুতিন যে অসামান্য দক্ষতার সহিত এ কাজ করিয়াছেন এবং করিতেছেন, তাহার তুলনা পাওয়া ভার।

কিছু দিন আগে অন্যতম প্রতিশ্রুতিময়, প্রাক্তন ক্রীড়া-তারকা, বিরোধী নেতা কাসপারভকে যখন পুতিনপন্থী প্রচারমাধ্যম তাড়া করিয়া ডাকিনী-খেদানোর চমৎকার দৃষ্টান্ত স্থাপন করিতেছে, সেই সময় কাসপারভ একটি দামি কথা বলিয়াছিলেন। বলিয়াছিলেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন কেবল রাশিয়ার অভ্যন্তরে নহেন, গোটা পৃথিবীতেই অ-গণতন্ত্রের প্রথম পূজারি। সেই কারণেই অন্যান্য দেশের নির্বাচনের মধ্যেও পুতিনের রাশিয়ার হস্তক্ষেপ এখন প্রায় প্রমাণিত সত্য। গত বৎসর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার ভূমিকা ঠিক কী প্রকার ছিল, তাহা হয়তো এখনও স্পষ্ট নয়, কিন্তু ভূমিকা যে ‘ছিল’, ইহা যথেষ্ট স্পষ্ট। যে নেতা এই ভাবে অন্যত্রও ভোটে দিনকে রাত করিতে উদ্যত হন, তাঁহাকে আর যাহাই হউক, গণতন্ত্রে নিবেদিতপ্রাণ আদর্শবাদী রাজনীতিক বলা দুষ্কর।

প্রসঙ্গত, কাসপারভ ইহাও বলিয়াছিলেন যে, রাশিয়ার নিজস্ব রাজনীতি অতি গভীর ভাবে বিশ্ব-রাজনীতির সহিত সংযুক্ত। রাশিয়ার বাহিরে লোকে তাহা হয়তো ভাল বুঝিতে পারে না। আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্তে এখন দক্ষিণপন্থার রমরমা বিকাশের সহিত রাশিয়ার অগণতান্ত্রিক রাজনীতির পরিবেশটির একটি নাড়ির যোগ আছে। রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমগুলি সরকারি বদান্যতাপ্রাপ্ত। সরকারি তর্জনীতে তাহারা অন্যান্য দেশে দক্ষিণপন্থার জয় দেখাইতে ব্যস্ত। স্বভাবতই প্রচারের মূল বক্তব্য হইল, পুতিন দূরদৃষ্টিময় শক্তিশালী নেতা, তাঁহার বদলে এক জন সাকাশভিলি কিংবা কাসপারভকে গিয়া যদি ইউক্রেন-এর বিদ্রোহীদের শায়েস্তা করিতে হয়, তবে রাশিয়ার সর্বনাশ। স্বেচ্ছাচারী কর্তৃত্ববাদী নেতারা তাঁহার কাছে শিখিতে পারেন, কী ভাবে সরকারি প্রচারকে ‘ব্যবহার’ করিতে হয়। কী ভাবে বিরোধী নেতাদের সামগ্রিক জনসমর্থনকে দুই-অঙ্কের শতাংশ-হিসাবের বাহিরে রাখিতে হয়।

Vladimir Putin Election Russia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy