Advertisement
E-Paper

সমান

সে নাবাহিনীতে যুদ্ধের কাজে মহিলাদের নিয়োগ করা হয় না, এমন প্রথাকে মেয়েদের প্রতি বৈষম্য বলিলে একটি প্রতিযুক্তি কার্যত অনিবার্য।

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৭ ০০:০০

সে নাবাহিনীতে যুদ্ধের কাজে মহিলাদের নিয়োগ করা হয় না, এমন প্রথাকে মেয়েদের প্রতি বৈষম্য বলিলে একটি প্রতিযুক্তি কার্যত অনিবার্য। যুদ্ধের কাজে যে পরিমাণ শারীরিক শক্তির প্রয়োজন, মহিলাদের তাহা নাই— এই যুক্তিটি আসিবেই। অমর্ত্য সেন এই তর্কটিকে নিশ্চিত ভাবেই পরের ধাপে লইয়া যাইতেন। প্রশ্ন তুলিতেন, মেয়েদের শারীরিক বল পুরুষের তুলনায় কম, তাহাও কি বঞ্চনারই ফল নহে? পুরুষতন্ত্র নিশ্চিত করিয়াছে, জন্মাবধি ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের পুষ্টির জোগান কম থাকিবে। রক্তাল্পতায় ভোগা অথবা স্বাভাবিকের তুলনায় শারীরিক ওজন কম হওয়া— অপুষ্টির এই প্রাথমিক মাপকাঠিগুলিতে মেয়েদের অবস্থা কার্যত গোটা দুনিয়াতেই ছেলেদের তুলনায় খারাপ। ভারতে পরিস্থিতিটি ভয়াবহ। কাজেই, শারীরিক সক্ষমতার মাপকাঠিতে মেয়েদের ছাঁটিয়া ফেলিতে হইলে তাহার মধ্যে বঞ্চনার যুক্তিটি অনপনেয়। কিন্তু, সেই তর্ক যদি সরাইয়া রাখা যায়, যদি শারীরিক সক্ষমতার ফারাকটিকে ‘প্রাকৃতিক’ ও ‘স্বাভাবিক’ বলিয়া মানিয়া লওয়া যায়, তবুও প্রশ্ন: আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে শারীরিক শক্তির গুরুত্ব তুলনায় কতখানি? এখন যুদ্ধ অনেক বেশি প্রযুক্তিনির্ভর, কৌশলসিদ্ধ। তাহাতে কায়িক শক্তির তুলনায় অনেক বেশি প্রয়োজন মানসিক সক্ষমতা, বুদ্ধি। পুষ্টির হাজার অভাবেও এই মাপকাঠিতে মেয়েদের পিছাইয়া রাখা যায় নাই। কাজেই, সেনাবাহিনীর চাকুরির দরজাটিও তাহাদের জন্য বন্ধ রাখিবার কোনও কারণ নাই। বস্তুত তাহার একমাত্র ফল, দেশের সেনাবাহিনী যত জন দক্ষ সৈনিক পাইতে পারিত, ইচ্ছাকৃত ভাবে সংখ্যাটি তাহার অর্ধেক করিয়া ফেলা। সেনাপ্রধান বিপিন রাবত জানাইলেন, ভারত এই ভুল আর করিবে না। মহিলারা সম্মুখসমরে যাইবার সুযোগও পাইবেন। সে সুযোগ পুরুষদের সমান হইবে কি না, তাহা এখনও অজ্ঞাত, কিন্তু দরজাটি যে খুলিল, তাহা নেহাত কম কথা নহে।

সেনাবাহিনী অবশ্যই পুরুষতন্ত্রের অতি জরুরি দুর্গ, কিন্তু জীবনের হরেক কোনায় এমন ছোট-বড় হাজার দুর্গ রহিয়াছে, যাহার প্রতিটির দরজাতেই যুক্তির কামান দাগা জরুরি। রণক্ষেত্রের সম্পূর্ণ বিপ্রতীপে যে সুখী গৃহকোণের অবস্থান, তাহাও কি পুরুষতন্ত্র-নির্ধারিত লিঙ্গ-ভূমিকার মঞ্চ নহে? ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে সাক্ষ্য দিবেন। কিঞ্চিৎ লঘুস্বরেই তিনি এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে যে ‘ছেলেদের কাজ’ ও ‘মেয়েদের কাজ’-এর বিভাজনের কথা বলিয়াছিলেন, তাহা প্রকৃত প্রস্তাবে পুরুষতন্ত্রের শিক্ষা। মনের গভীরে জাঁকিয়া বসা এই ধারণাগুলিকে বিদায় করিবার সময় আসিয়াছে। প্রতিটি পরিসরেই বারংবার বলিতে হইবে, কাজের কোনও লিঙ্গ-বিভাজন হয় না। সেনাবাহিনীর সব কাজে যেমন মেয়েদের অধিকার আছে, তেমনই গৃহস্থালির কাজও পুরুষের অসাধ্য নহে, সেই কাজ তাহাদের পক্ষে অসম্মানেরও নহে। লিঙ্গসাম্যের সংগ্রামে দুইটি পরিসরই সমান গুরুত্বপূর্ণ। ভাবিয়া দেখিলে, পুরুষতন্ত্রের অচলায়তন ভাঙা কঠিন হইলেও অসম্ভব নহে। ‘মেট্রোসেক্সুয়াল’ পুরুষের ধারণাটিকে এই সমাজ অস্বীকার করিতে পারে নাই, অবজ্ঞা করাও সম্ভব হয় নাই। আবার, ভারতেই গত বৎসর বিমানবাহিনীতে তিন জন মহিলা বিমানচালক নিযুক্ত হইয়াছিলেন। অর্থাৎ, দরজাগুলি খুলিতে পারে। কিন্তু তাহার জন্য রাজনীতি প্রয়োজন। লিঙ্গ-রাজনীতি।

women enrollment Indian army
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy