Advertisement
E-Paper

অতুল কীর্তি

অতীত যদি মনুষ্যচরিত্রের নির্দেশক হয়, তবে বলিতেই হইবে, এমন বুকে চাপড় মারিয়া চ্যালেঞ্জ ছুড়িবার অভ্যাসটি শ্রীশর্মার চরিত্রানুগ নহে। কেহ বলিতেই পারেন, যুগের হাওয়া। কর্তারা কথায় কথায় বুক চাপড়ান, মুষ্টি পাকান, হুঙ্কার দেন। বস্তুত, দিল্লির ক্ষমতার অলিন্দ অধুনা পৌরুষের আখড়া হইয়াছে, যেখানে যুক্তি অপেক্ষা পেশির আস্ফালন, আলোচনা অপেক্ষা রণহুঙ্কারের গ্রহণযোগ্যতা ঢের বেশি।

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৮ ০০:৩১
রামসেবক শর্মা। ফাইল চিত্র।

রামসেবক শর্মা। ফাইল চিত্র।

আধার কর্তৃপক্ষ টুইট করিয়া জানাইয়াছেন, কেহ যেন ভুলিয়াও নিজের আধার নম্বর জনসমক্ষে প্রকাশ না করেন। তাহা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সরল নাগরিক ভাবিতে পারেন, নূতন আইন তৈরি হইল বুঝি। অথবা— এই জমানার যেমন দস্তুর— প্রধানমন্ত্রী বুঝি অধ্যাদেশ আনিয়াছেন। না, ইহা শ্রীরামসেবক শর্মার কীর্তির ফল। শ্রীশর্মা সামান্য লোক নহেন। ইউআইডিএআই-এর প্রথম মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক ছিলেন তিনি। বর্তমানে ট্রাই-এর চেয়ারম্যান। অভিজ্ঞ অফিসার, প্রযুক্তি এবং তথ্যনিরাপত্তা বিষয়ে তাঁহার জ্ঞান প্রশংসিত। এবং, অবিবেচক হিসাবে তাঁহার বদনাম ছিল না। এ হেন রামসেবক শর্মার সহিত তাঁহার বর্তমান কীর্তিটি মেলানো কঠিন। তিনি টুইটারে নিজের আধার নম্বরটি জানাইয়া চ্যালেঞ্জ ছুড়িয়াছিলেন, কেহ তাঁহার তথ্য ফাঁস করিয়া দেখাক। বিদ্যুৎগতিতে জবাব আসিয়াছে। তাঁহার ফোন নম্বর হইতে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর, সব তথ্য-সহ জনৈক হ্যাকার জানাইয়াছে, আরও ফাঁস করা যাইত, নেহাত বিবেচনাবোধে ছাড়িয়া দেওয়া হইল। তাহার পরই আধার কর্তৃপক্ষের ঘোষণা, এবং আইনের কথা স্মরণ করাইয়া দেওয়া। অর্থাৎ, আধার নম্বর প্রকাশ করা যে বিপজ্জনক— তাহা না হইলে আর তড়িঘড়ি আইনের কথা স্মরণ করাইয়া দেওয়া কেন— কর্তৃপক্ষ তাহা স্বীকারই করিয়া লইলেন।

শ্রীশর্মার কীর্তিটি অতুল কীর্তি কি না, সেই সিদ্ধান্তের ভার ভবিষ্যতের উপর থাকুক। আপাতত প্রশ্ন করা যাউক, কেন তিনি হঠাৎ এমন হঠকারিতা করিয়া বসিলেন? অতীত যদি মনুষ্যচরিত্রের নির্দেশক হয়, তবে বলিতেই হইবে, এমন বুকে চাপড় মারিয়া চ্যালেঞ্জ ছুড়িবার অভ্যাসটি শ্রীশর্মার চরিত্রানুগ নহে। কেহ বলিতেই পারেন, যুগের হাওয়া। কর্তারা কথায় কথায় বুক চাপড়ান, মুষ্টি পাকান, হুঙ্কার দেন। বস্তুত, দিল্লির ক্ষমতার অলিন্দ অধুনা পৌরুষের আখড়া হইয়াছে, যেখানে যুক্তি অপেক্ষা পেশির আস্ফালন, আলোচনা অপেক্ষা রণহুঙ্কারের গ্রহণযোগ্যতা ঢের বেশি। শ্রীশর্মাও বুঝি সেই স্রোতেই ভাসিয়া গেলেন। কে বলিতে পারে, তিনি হয়তো ভাবিয়াছেন, অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করাই এই জমানার প্রধান গুণ হিসাবে বিবেচিত হইতেছে।

তবে, তেমন শুভনাস্তিক হইলে বলিবেন, ইহা কোনও ব্যাখ্যাই নহে। ব্যাখ্যা করিতে হইলে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ভিন্ন গতি নাই। শ্রীশর্মার অভিজ্ঞতা যতখানি, তাহাতে তিনি নিজের আধার নম্বর প্রকাশ করিবার ফল জানিবেন না, তেমনটা ভাবিবার কোনও অবকাশই নাই। তিনি বিলক্ষণ জানিতেন, কোনও না কোনও হ্যাকার মুহূর্তের মধ্যে তাঁহার ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করিয়া দিবে। এবং, তিনি তেমনটাই চাহিয়াছিলেন। কারণ, তাহাতে আধার সংক্রান্ত বিতর্কের অভিমুখটি ঘুরাইয়া দেওয়া যায়। যাঁহারা আধার-বিরোধী, তাঁহাদের দাবি হইল, আধার নম্বর প্রকাশ করাকে বাধ্যতামূলক না করা। তর্কটিকে বিকেন্দ্রিত করিয়া আধারের মাধ্যমে তথ্য ফাঁসের সম্ভাব্যতার আলোচনায় আনিয়া ফেলিতে পারিলে তাহার আর কোনও নির্দিষ্ট উত্তর মিলিবার সম্ভাবনা থাকে না। আধার সম্পূর্ণ নিরাপদ কি না, সেই তর্কের শেষ, অন্তত এই মুহূর্তে, অসম্ভব। পক্ষে-বিপক্ষে মতামত চলিতেই থাকিবে। দুর্জনে বলিবে, মূল তর্ক হইতে নজর ঘুরাইয়া দেওয়াই এই জমানার প্রধান বৈশিষ্ট্য। শ্রীশর্মা খেলাটি ধরিতে ভুল করেন নাই।

Adhar Card Ram Sewak Sharma রামসেবক শর্মা Trai UIDAI Social Media
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy