Advertisement
E-Paper

বিকল্প অবস্থান

এই সতর্কবাণী এমন এক সময়ে আসিল, যখন হোলিকে উপলক্ষ করিয়া দেশের নানা কোণে উদ্বেগজনক কথাবার্তা চলিতেছিল।

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৮ ০০:০৩

ধর্ম বস্তুটিকে একটিমাত্র মাত্রায় দেখা ধর্মান্ধদের বৈশিষ্ট্য। ধর্মান্ধ আর ধার্মিকদের মধ্যে বড় পার্থক্য এখানেই। ধার্মিকরা জানেন, ধর্মের গোড়ার কথাটি মানবিকতা, এবং সেই সূত্রে অন্য ধর্ম কিংবা সংস্কৃতির প্রতি সহনশীলতা ও শ্রদ্ধা জরুরি। সম্প্রতি হিন্দুসমাজের মধ্য হইতে বহুমাত্রিক ধর্মবোধের বক্তব্যটি জোর গলায় শোনা গেল রামকৃষ্ণ মিশনের সৌজন্যে। হিন্দুত্ববাদের নাম করিয়া দেশ জুড়িয়া গো-রক্ষকদের যে তাণ্ডব চলিতেছে, তাহার বিরুদ্ধেই মিশনের প্রধান প্রতিবাদ। কিন্তু কেবলমাত্র সেই প্রসঙ্গে আবদ্ধ না থাকিয়া একটি আরও বড় কথা তাঁহাদের বক্তব্য হইতে বাহির হইয়া আসিল। হিন্দু ধর্মে সর্বধর্ম-সমন্বয় ও মানবিক মূল্যবোধ কত জরুরি, দোল বা হোলির মতো উত্সব-আয়োজনে অহিন্দুদেরও অংশগ্রহণের কতখানি অবকাশ থাকা উচিত, তাঁহারা মনে করাইয়া দিলেন। দেশের পরিবেশ যেখানে পৌঁছাইয়াছে, তাহাতে এই সতর্কবাণী অতিশয় জরুরি ছিল। রামকৃষ্ণ মিশনের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার ফলে হিন্দু সমাজের ভিতরেই হিন্দুত্ববাদের রাজনৈতিক ধ্বজাধারীদের বিরুদ্ধে দাঁড়াইবার একটি বিকল্প অবস্থান তৈরি হইল।

এই সতর্কবাণী এমন এক সময়ে আসিল, যখন হোলিকে উপলক্ষ করিয়া দেশের নানা কোণে উদ্বেগজনক কথাবার্তা চলিতেছিল। গত সপ্তাহে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ হোলি-বিষয়ক একটি প্রশাসনিক ঘোষণা করেন, যাহাতে বলা হয় সে রাজ্যের অন্য ধর্মের মানুষ যেন মনে রাখেন যে সংখ্যাগুরুদের ধর্মীয় উত্সব পালনের পরিসরটি কত জরুরি, কোনও মতে যেন সেই পরিবেশে ব্যাঘাত না ঘটে। কেবল ঘোষণা নয়, হোলির দিন তিনি নিজে যখন গোরক্ষপুরের বিশাল শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দিলেন, ৬০০০ পুলিশ তাঁহাকে ঘিরিয়া থাকিল, সম্ভবত উত্সব পালনের ‘স্বাধীনতা’টি নিশ্চিত করিতেই! আইপিএস অফিসাররাও এই কাজে নিযুক্ত হইলেন। বিরাট পুলিশবাহিনীর উপস্থিতিই বুঝাইয়া দেয়, সংখ্যাগরিষ্ঠতার নামে ধর্মাচার পালনের উদ্ধত হিন্দুত্ব ও রামকৃষ্ণ মিশনের সর্বধর্মসমন্বিত উত্সব পালনের সংস্কৃতির মধ্যে তফাত কোথায়।

প্রতি বছর হোলির দিন এই শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দিয়া আসিয়াছেন গোরক্ষনাথ মন্দিরের পুরোহিত যোগী আদিত্যনাথ। কিন্তু এই বার যেহেতু তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, একটি প্রশ্ন উঠিবেই: প্রকাশ্যে ধর্মীয় শোভাযাত্রা করিয়া তিনি সংবিধানসম্মত কাজ করিলেন কি? একই সমস্যা মথুরা ও বরসানায় উত্তরপ্রদেশ রাজ্য প্রশাসন আয়োজিত দুই দিনব্যাপী রঙ্গোত্সব লইয়াও। রাজ্য প্রশাসন কি এই ভাবে সরাসরি কোনও বিশেষ ধর্মের অনুষ্ঠানের আহ্বান ও আয়োজন করিতে পারে? সরকারি তহবিল হইতেই এই বিপুল ব্যয়ভার বহন করা হইয়াছে, যেখানে সংখ্যালঘু উত্সবে কোনও সরকারি অর্থ ব্যয়িত হয় না। এই সব প্রশ্নের পরিসর এ-দেশে অতি দ্রুত কমিয়া আসিতেছে, যোগীদের অসীম সৌভাগ্য! প্রতিরোধহীন ভাবে তাঁহারা ধর্মীয় উত্সবে মাতিতে পারিতেছেন, বলিতে পারিতেছেন, মুসলিমরা যখন ইদ পালন করেন, খ্রিস্টানরা বড়দিন পালন করেন, তখন হিন্দু মুখ্যমন্ত্রীও নিশ্চয়ই নিজ ধর্মের প্রকাশ্য পালন করিতে পারেন। এই প্রেক্ষিতেই রামকৃষ্ণ মিশনের বক্তব্যটি প্রাসঙ্গিক। এবং জরুরি।

Ramakrishna Mission religion Hinduism Humanity
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy