Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Newsletter

স্থিতিশীলতা ধ্বংসের এই চক্রান্তকে ব্যর্থ করতেই হবে

দক্ষিণ ২৪ পরগনা যে পরিস্থিতির সাক্ষী হচ্ছে এখন, তা হল মিথ্যার জেরে তৈরি হওয়া এক সামাজিক অস্থিরতা। এই মিথ্যা আচমকা এমনি এমনিই রটতে শুরু করল, এমন কিন্তু নয়। এই মিথ্যা রটানো হয়েছে এবং পরিকল্পনামাফিক পরিস্থিতিকে অশান্ত করে তোলা হয়েছে। সেই ফাঁদে আমরা পা দেব কেন?

সম্প্রতি এই সমস্ত ভুয়ো ছবিই ঘুরে বেড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যা ঘিরে ছড়িয়েছে গুজব। ছবি: হোয়াটসঅ্যাপ থেকে পাওয়া।

সম্প্রতি এই সমস্ত ভুয়ো ছবিই ঘুরে বেড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যা ঘিরে ছড়িয়েছে গুজব। ছবি: হোয়াটসঅ্যাপ থেকে পাওয়া।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৩৬
Share: Save:

সুখবর ছড়িয়ে পড়তে বেশ সময় লাগে এ দেশে। কিন্তু গুজব বা ভুয়ো খবর হু হু করে ছড়ায় দাবানলের বেগে। তেমনই এক দাবানলের কবলে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। গুজবের জেরে গণপ্রহারের ঘটনা ঘটে গিয়েছে একাধিক স্থানে। গণপ্রহারে মৃত্যুও ঘটে গিয়েছে দুটো। এই ভাবে নিজেদেরকে আমরা নিজেরাই কেন হারিয়ে দিচ্ছি, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সেই প্রশ্নটা তোলা দরকার।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা যে পরিস্থিতির সাক্ষী হচ্ছে এখন, তা হল মিথ্যার জেরে তৈরি হওয়া এক সামাজিক অস্থিরতা। এই মিথ্যা আচমকা এমনি এমনিই রটতে শুরু করল, এমন কিন্তু নয়। এই মিথ্যা রটানো হয়েছে এবং পরিকল্পনামাফিক পরিস্থিতিকে অশান্ত করে তোলা হয়েছে। সেই ফাঁদে আমরা পা দেব কেন?

ঠিক কী রটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনায়? রটেছে যে, এক দল বহিরাগত দুষ্কৃতী ছড়িয়ে পড়েছে গোটা জেলায়, জল বা খাবার চাওয়ার অছিলায় বিভিন্ন বাড়িতে ঢুকে পড়ছে তারা, বাড়িতে লোকজন কম রয়েছে দেখলেই তারা অতর্কিতে হামলা চালাচ্ছে, খুন করছে, কারও কারও কিডনিও কেটে নেওয়া হচ্ছে। বলাই বাহুল্য এই রটনা আদ্যন্ত ভিত্তিহীন। জেলার পুলিশ এবং প্রশাসনই জোর দিয়ে দাবি করছে সে কথা। কারা রটাচ্ছে এই মিথ্যা? যারা অস্থিরতা চায়, তারাই যে রটাচ্ছে এই মিথ্যা, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র সংশয়ের অবকাশ নেই। মনে রাখতে হবে, সামাজিক পরিসরে শান্তি, শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বহাল থাকলে দুষ্কৃতীদের সমস্যা হয়। সমাজকে অশান্ত-চঞ্চল করে তুলতে পারলে, স্থিতিশীলতা ভেঙে দিতে পারলে নানা দুষ্কর্মের সুবিধা হয়। স্থিতিশীলতা নষ্ট করার লক্ষ্যেই যে এই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তা নিয়ে সন্ধিগ্ধ হওয়ার প্রয়োজন নেই।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন: ভয়ঙ্কর গুজব ছড়ানো হচ্ছে রাজ্যের কিছু জায়গায়, সতর্ক থাকুন, এ সবই মিথ্যে

শুধুমাত্র দক্ষিণ ২৪ পরগনা বা দক্ষিণবঙ্গ এই অপপ্রচারের নিশানা, এমনটা ভাবলে ভুল হবে। গোটা বাংলা বা গোটা ভারতকেই অশান্ত করে তুলতে চায় কোনও দুষ্টচক্র। সামাজিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে অনেক বড়সড় কোনও অঘটন ঘটাতে চায় তারা। কোনও বহিঃশক্তির ইশারায় এই অস্থিরতা তৈরি করা হচ্ছে না, আমরা কিন্তু নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি না। অতএব সতর্ক আমাদের থাকতেই হবে, স্থিতিশীলতা ভেঙে পড়তে দিলে চলবে না।

যে পরিস্থিতি সম্প্রতি তৈরি হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনায়, তা আমাদের কাছে সম্পূর্ণ অচেনা কোনও পরিস্থিতি নয়। এর আগেও ‘ছেলেধরা’ বা ‘ভ্রাম্যমান হামলাকারী’ গুজব ছড়িয়ে বাংলার বা ভারতের নানা প্রান্তে চাঞ্চল্য ছড়ানোর চেষ্টা হয়েছে। কখনও উত্তরপ্রদেশ, কখনও কর্নাটক, কখনও অসম, কখনও মেঘালয় সে সব গুজবে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। অসমে ছেলেধরা সন্দেহে দুই পর্যটক যুবককে পিটিয়ে মেরে ফেলার ভয়ঙ্কর স্মৃতি আজও দগদগে। তাই নতুন করে সেই একই চক্রান্তের শিকার হয়ে যাওয়া মস্ত বড় মূর্খামি হবে।

এ দেশকে অশান্ত করে তোলার বা এ দেশের সামাজিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করার চেষ্টা বছরের পর বছর ধরে চলছে। সে অপচেষ্টা যারা চালায়, তারা যে দেশের ঘোর শত্রু, সে কথা আর বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না। শত্রুদের পাতা ফাঁদে আমরা কখনও পা দিইনি, এমন নয়। ভুল আমরা করেছি কখনও কখনও। সেই কারণেই ভয়ঙ্কর স্মৃতিগুলো আজও দগদগে হয়ে রয়েছে। কিন্তু দেশজোড়া অস্থিরতা বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া সামাজিক অস্থিতিশীলতা আমরা কখনওই তৈরি হতে দিইনি। এ বারও দেব না। ভুল থেকে নেওয়া শিক্ষা আমাদের কাজে লাগাতেই হবে। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে সে শিক্ষা আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। পারিনি বলেই ভিত্তিহীন গুজবটা হু হু করে ছড়াতে পেরেছে, পারিনি বলেই গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকটা গণপ্রহার এবং গণপ্রহারে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গিয়েছে। অবিলম্বে আমাদের প্রত্যেককে সতর্ক হতে হবে। সামাজিক স্থিতিশীলতা ধ্বংস করার চক্রান্তকে সর্বশক্তি দিয়ে রুখতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE