Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Newsletter

শশিকলার এক পাশে আজ রাজদরবার, অন্য পাশে আস্তাকুঁড়

রহস্য, সংশয়, ক্ষোভ, বিতর্ক, ধোঁয়াশার আবর্তে দাঁড়িয়েই তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রিত্বের দোরগোড়ায় শশিকলা নটরাজন। জয়ললিতার প্রয়াণের পর থেকে এ পর্যন্ত শশিকলার যা কিছু গতিবিধি দেখা গেল, তাতে প্রবল রাজনৈতিক ধুরন্ধরতার আভাস মিলল।

জয়ার জায়গা কি নিতে পারবেন শশিকলা? ছবি: পিটিআই

জয়ার জায়গা কি নিতে পারবেন শশিকলা? ছবি: পিটিআই

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৩৬
Share: Save:

রহস্য, সংশয়, ক্ষোভ, বিতর্ক, ধোঁয়াশার আবর্তে দাঁড়িয়েই তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রিত্বের দোরগোড়ায় শশিকলা নটরাজন। জয়ললিতার প্রয়াণের পর থেকে এ পর্যন্ত শশিকলার যা কিছু গতিবিধি দেখা গেল, তাতে প্রবল রাজনৈতিক ধুরন্ধরতার আভাস মিলল। কিন্তু চাতুর্যেই হোক বা কূট কৌশলে, প্রথমে দলের শীর্ষ পদ এবং তার পরে সরকারের শীর্ষ পদ পর্যন্ত পৌঁছনোর পথটা মোটের উপর মসৃণ রাখতে সফলই হলেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলা রয়েছে। সে মামলার রায় আসন্ন। আদালতের রায় বিপক্ষে যাবে, নাকি স্বস্তি আনবে, তা এখনই বলা যায় না। কিন্তু জনমানসে যে সংশয়ের জাল তাঁকে ঘিরে তৈরি হচ্ছে, সে জাল কাটতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় আদালতে তাঁর জন্য অনেক বড় বিপদ যে অপেক্ষায়, সে কথা নিশ্চিত করে বলে দেওয়া যায়।

জয়ললিতা অতীত হতেই উদগ্র ভঙ্গিতে শশিকলার হাতে দলের নেতৃত্ব সঁপে দিয়েছেন এআইএডিএমকে-র শীর্ষ নেতারা। বিরোধিতার স্বর কোথাও ছিল না, এমন নয়। কিন্তু বিপুল গরিষ্ঠতা সে নগণ্য লঘুতায় বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেনি। দলের শীর্ষ পদে বসার পর থেকে আরও দ্রুত মুখ্যমন্ত্রিত্বের দিকে এগোচ্ছিলেন শশিকলা। এ ক্ষেত্রেও গোটা মন্ত্রিসভা যেন শশিকলার রাজ্যাভিষেকের উদগ্র প্রতীক্ষায় ছিল। বিরোধিতার স্বর আরও ক্ষীণ হয়ে এসেছিল।

গোটা পর্বে খুব স্পষ্ট করেই বোঝা গিয়েছে, দলের শীর্ষ স্তরকে, মন্ত্রিসভাকে এবং প্রশাসনকে অত্যন্ত নিপুণ ভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন শশিকলা নটরাজন। কিন্তু ‘আম্মা’র লক্ষ লক্ষ অনুগামীর ভাবাবেগকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে পেরেছেন কি তিনি? এই প্রশ্ন কিন্তু খুব বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে।

‘আম্মা’র মৃত্যু নিয়ে সংশয়ের মেঘ যত ঘনীভূত হচ্ছে, শশিকলার উত্থান মঞ্চ কিন্তু ততই শ্রীহীন হয়ে পড়ছে। ধুরন্ধর শশিকলা নিজেও সে কথা বুঝছেন নিশ্চয়ই। বুঝছেন বলেই তিনি মুখ্যমন্ত্রিত্বের শপথ নেওয়ার প্রাক্‌-মুহূর্তে বিলেত থেকে চিকিৎসক আনিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন হয়েছে, জয়ললিতার চিকিৎসায় যে কোনও ত্রুটি ছিল না এবং মৃত্যুতেও যে কোনও অস্বাভাবিকতা নেই, সে কথা চিকিৎসকদের দিয়ে বলানো হয়েছে। কিন্তু এই সাংবাদিক সম্মেলন সাধারণ্যে কতটা বিশ্বাস জাগাতে পেরেছে, তা নিয়ে সন্দেহ বিস্তর।

মুখ্যমন্ত্রিত্বে আসীন হওয়ার পর কয়েক মাসের মধ্যে বিধানসভায় নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে শশিকলা নটরাজনকে। সংশয় না কাটলে কিন্তু সেই জন-আদালতে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। আর তেমন হলে এত দিন ধরে নিপুণ হাতে সাজিয়ে তোলা সব পাকা রাজনৈতিক ঘুঁটি কেঁচে যেতে সময় লাগবে না।

বিচারবিভাগীয় আদালতের রায়ও প্রকাশ্যে আসবে অচিরেই। দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে পরিস্থিতি খুব কঠিন হবে। এ কাঠিন্যের সম্মুখীন শশিকলা আগেও হয়েছেন, কারাবাসও করেছেন। কিন্তু সে সময় মাথার উপর জয়ললিতার প্রকাণ্ড ছায়া ছিল। সে ছায়ায় থাকার সুবাদে অনেক কাঠিন্য সরল হয়ে গিয়েছিল, অনেক কালিমা নিঃশেষে মুছে গিয়েছিল। আজ কিন্তু শশিকলার মাথার উপর সে ছায়া নেই। বরং তাঁর নিজের ছায়াই প্রলম্বিত হতে হতে জয়ার ছায়াকে ঢেকে দেওয়ার চেষ্টায়। এই পরিস্থিতিতে আদালতের দিক থেকে ধাক্কা এলে সামলাতে পারবেন তো শশিকলা নটরাজন? প্রশ্নচিহ্নটা নিশ্চয়ই শশিকলার সামনেও ক্রমশ বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে।

ধূমকেতুর গতিতে উদিত হলেন তিনি তামিল রাজনীতির আকাশে। কিন্তু একই সঙ্গে উল্কাবেগে পতনের আশঙ্কাটাও তৈরি হয়ে গেল। যদি ঠেকাতে পারেন, তা হলে রাজনীতিতে আসা সার্থক শশিকলার। যদি না পারেন, খুব দ্রুত ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে পৌঁছে যেতে পারেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE