Advertisement
E-Paper

পিতার অবকাশ

পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীরা আগেই পিতৃত্বের ছুটি অর্জন করিয়াছেন। কিন্তু স্কুলশিক্ষকরা এ যাবৎ এই বিষয়ে কার্যত বঞ্চিত ছিলেন। শেষ পর্যন্ত সেই বৈষম্য ঘুচিতেছে।

শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:০০

পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীরা আগেই পিতৃত্বের ছুটি অর্জন করিয়াছেন। কিন্তু স্কুলশিক্ষকরা এ যাবৎ এই বিষয়ে কার্যত বঞ্চিত ছিলেন। শেষ পর্যন্ত সেই বৈষম্য ঘুচিতেছে। স্কুল শিক্ষা দফতর জানাইয়া দিয়াছে, (সর্বাধিক দুই) সন্তানের আঠারো বৎসর বয়স পর্যন্ত সরকারি বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের শিক্ষকরা ত্রিশ দিন অবধি এই ছুটি লইতে পারিবেন। আশা, অন্য সমস্ত পেশার ক্ষেত্রেও পিতৃত্বের ছুটি ক্রমশ স্বীকৃতি পাইবে। কিছু কিছু সাম্য ব্যক্তি বা পরিবারের সীমা অতিক্রম করিয়া বৃহত্তর সমাজের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ হইয়া উঠে। মাতৃত্বের পাশাপাশি পিতৃত্বের ছুটি মঞ্জুরির গুরুত্বও সুদূরপ্রসারী। লক্ষণীয়, চাকুরিদাতারা অনেক ক্ষেত্রেই সরাসরি বা প্রকারান্তরে মাতৃত্বকালীন অবকাশের যুক্তি দর্শাইয়া মহিলা কর্মীদের নিয়োগে অনিচ্ছুক থাকেন। তাঁহাদের ‘সহজ’ হিসাব— এই ছুটির কারণে মেয়েদের নিয়োগ করিলে কাজের ক্ষতি। কর্মনাশের সহিত ধর্মনাশের ভাবনাটিও যে প্রবল, তাহা অবশ্য অস্বীকার করা চলে না। পুরুষ অপেক্ষা নারী হীনবল— লিঙ্গ-বিষম সমাজে আবহমান কাল প্রোথিত ধারণাও তাঁহাদের চালিত করিত না, এমন বলা যায় কি? কিন্তু দৃষ্টিবৈষম্য বাস্তবতার কারণেই হউক আর মানসিকতার কারণেই হউক, পিতৃত্বকালীন অবকাশ চালু হইবার ফলে তাঁহারা নির্ঘাত ধর্মসঙ্কটে পড়িবেন। মাতৃত্বের ছুটির অজুহাতে মেয়েদের বাতিল করা হইলে এখন পিতৃত্বের ছুটির কারণে পুরুষকেও বাতিল করিতে হয়, হস্তে পেনসিল ব্যতীত বিশেষ কিছুই পড়িয়া থাকে না! এহ বাহ্য, মৌলিক এবং গুরুতর কথাটি ইহাই যে, সন্তানপালনের দায়িত্বে লিঙ্গসাম্যের স্বীকৃতির পথে একধাপ আগাইবার আশা উপস্থিত হইল।

তবে, আগাইবার পথটি অসংখ্য কণ্টকে আকীর্ণ। মানসিকতার কণ্টক। ভারতীয় সমাজ চিরদিনই মাতৃত্বকে যে গুরুত্বে বিবেচনা করিয়া থাকে, পিতৃত্বে সেই ভার আরোপ করে নাই। বাংলা গল্প-উপন্যাসে বা চলচ্চিত্রে মাতার প্রসববেদনা উপস্থিত হইলে পিতার হুঁকা হস্তে উদ্বিগ্ন পদচারণা ব্যতিরেকে পিতৃত্বের দায় বিশেষ স্মরণে আসে না। পিতৃত্বকালীন অবকাশের প্রচলনে পিতার দায়িত্ব পদচারণা হইতে কিয়দংশে বাড়াইবার সামাজিক কর্তব্য আরোপিত হইল বটে, কিন্তু সনাতন ধারণা হইতে মুক্তি না মিলিলে যথেষ্ট ফল মিলিবে না। পিতৃত্বের ছুটি লইয়া পুরুষ সহকর্মীগণের উপহাস ও বিদ্রুপও প্রাথমিক ভাবে বাড়িতে পারে। কূট প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইতে পারে: ভারতের অঙ্গরাজ্য হইতে কেন্দ্রীয় আইনসভা, সর্বত্রই মাতৃত্বকালীন অবকাশ ছয় থেকে বাড়াইয়া নয় মাস করিবার প্রস্তাব আসিয়া থাকে, অথচ পিতৃত্বকালীন অবকাশ বলবৎ করিবার ব্যাপারে এক মাসের পিটুলিগোলা কেন? ভাবখানি যেন— উদ্বেগ ব্যতীত পিতার আর কীই বা ভূমিকা! তবে, মানিতেই হইবে, সমাজমানসের অগ্রগতি সচরাচর ধীর গতিতেই ঘটে। মনে রাখা দরকার, মাতৃত্বকালীন অবকাশের প্রয়োজন স্বীকার করিতেও রাষ্ট্র ও সমাজের দীর্ঘ সময় লাগিয়াছে, এবং বহু সংগ্রামে সেই অধিকার আদায় করিতে হইয়াছে। বস্তুত, সেই অধিকার আদায়ের লড়াই এখনও শেষ হয় নাই। পিতার দায়িত্ব আছে, ইহা বুঝিতেও সময় লাগিবে, তাহা অস্বাভাবিক নহে। হয়তো আরও অনেক বেশি সময় লাগিবে, কারণ যে ব্যবস্থার মধ্যে এই পরিবর্তন সাধিত হইতেছে, তাহার নাম পিতৃতন্ত্র।

Paternity Leave School Teachers West Bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy