আর কতটা পথ হাঁটলে তবে পুরোপুরি মানুষ হয়ে ওঠা যাবে? এখনও আর কতটা এগোলে বলতে পারব, মানবজাতি পুরোপুরি সভ্য? নানা ক্ষেত্রে অগ্রগতির শিখর স্পর্শ করেছে মানুষ, পৃথিবীর সীমা ছাড়িয়ে মহাকাশও জয় করেছে, গোটা বিশ্বকে অগ্রগতির বর্ণাঢ্য বিচ্ছুরণ দেখিয়েছে। কিন্তু সেই ঔজ্জ্বল্যের সঙ্গেই এক জমাট অন্ধকারের নিয়ত সহাবস্থান। সেই অন্ধকারে বসেই কোনও বাবার মনে হয় কন্যাসন্তান জীবনের বোঝা। সেই অন্ধকারে বসেই তিন বছরের মেয়েকে গলা টিপে মেরে নিথর দেহ নিয়ে হাসপাতালে হাজির হন রঘুনাথ সিংহ, চিকিৎসককে বলেন মেয়ে কীটনাশক খেয়েছে, অবশেষে পুলিশের সামনে স্বীকার করে নেন অপরাধ।
সভ্যতার ইতিহাসে তো আকাশের সমান ঔদার্য। পুত্রসন্তান আর কন্যাসন্তানে ফারাক করার সঙ্কীর্ণতা তাই সভ্যতার ফসল হতে পারে না। ঠাকুর আর দলিতের মধ্যে রক্তক্ষয়ী হানাহানির শিক্ষা সভ্যতা দেয় না। মানুষকে মানুষ হিসেবে না চিনে, তাঁর রক্তের মধ্যে ধর্মীয় স্রোত খোঁজার প্রবণতা সভ্যতা থেকে জন্ম নেয় না। এই সবই আসলে সভ্যতার গতির বিপরীতে ছুটতে থাকা এক প্রবাহের অঙ্গ। সেই প্রবাহে আজও সামিল এত এত মানুষ যে আধুনিক মানবজাতিকে সামগ্রিক ভাবে সভ্য বলে ডাকা যায় কি না, তা নিয়ে ধন্দে পড়তে হচ্ছে।
সম্পদের পরিমাণ, পোশাকের বর্ণচ্ছটা, হাতে থাকা সেলফোনের আকার, বা আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিতি কিন্তু সভ্যতার সূচক নয়। সভ্যতার আসল সূচক হল চেতনার ঔজ্জ্বল্য, সমাজমানসের উদারতা, দৃষ্টিভঙ্গির স্বচ্ছতা। মানুষের চেতনাকে আলোকোজ্জ্বল করে তুলতে সক্ষম যে সমাজ, মানসপটে আকাশের রং লাগিয়ে দিতে সক্ষম যে সমাজ, দৃষ্টিপথ থেকে বিভাজন আর বিদ্বেষের পর্দাগুলো সরিয়ে দিতে সক্ষম যে সমাজ, সভ্য সমাজ তাকেই বলা যায়। সে সমাজে আমরা এখনও সর্বৈব পৌঁছতে পারিনি। যদি কোনও দিন পৌঁছতে পারি, রঘুনাথ সিংহের মতো বাবাদের আর কোথাও খুঁজে পাব না সে দিন। নতুন করে আর কোনও মৌসুমীও জন্ম নেবে না সে সমাজে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy