Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

যানজটে জেরবার শহর, দুই বা চার চাকা, কেউ নেই পিছিয়ে

সচেতনতা তৈরি না হলে প্রশাসন আর কত চেষ্টা করবে? আইন অমান্য করার শাস্তি আছে। যাত্রীদের মৌখিক অন্যায়ের শাস্তি নেই। লিখছেন সোনালি ঘোষ গোটা শহরটার রাস্তায় রাস্তায় বিভিন্ন রকম গাড়ির চলাচল আর তাকে কেন্দ্র করে বেঁধে যায় যানজট। যে দিকেই তাকিয়ে দেখা যাক না কেন, সব রাস্তা জুড়েই বাইক, বিভিন্ন মডেলের ছোট-বড় চার চাকার গাড়ি, অটো, টোটো, সাইকেল আর রিকশার ভিড়।

শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৯ ০৬:১৩
Share: Save:

ছোট্ট শহর শিলিগুড়িকে বলা যেতে পারে ডুয়ার্স আর পাহাড়ের মধ্যবিন্দু। তার বড় রাস্তা থেকে অলিগলিতে নিত্য যানজট। শহরবাসীকে রীতিমতো চিন্তায় ফেলে দিয়েছে এই যানজট।

গোটা শহরটার রাস্তায় রাস্তায় বিভিন্ন রকম গাড়ির চলাচল আর তাকে কেন্দ্র করে বেঁধে যায় যানজট। যে দিকেই তাকিয়ে দেখা যাক না কেন, সব রাস্তা জুড়েই বাইক, বিভিন্ন মডেলের ছোট-বড় চার চাকার গাড়ি, অটো, টোটো, সাইকেল আর রিকশার ভিড়।

সব রাস্তায় এই একই ছবি দেখে রীতিমতো আতঙ্কে শিউরে উঠতে হয়। এখন শিলিগুড়ির রাস্তায় বার হওয়ার আগে চোখের সামনে প্রথমেই ভেসে ওঠে রাস্তার যানজট। অবস্থা এখন এমনই যে, পরীক্ষাকেন্দ্র বা কোনও কাজের জায়গায় ঠিক সময়ে পৌঁছতে হলে ঘড়ি ধরে সময়ের হিসেব করে বার হলে চলবে না। যানজটের সৌজন্যে বেরিয়ে পড়তে হবে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজট আর ট্র্যাফিক সিগন্যালে আটকে থাকা গাড়ির লাইনের সারি দেখলে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতে হয়! চালক এবং যাত্রী— দু’পক্ষের অবস্থাই তখন তথৈবচ। না যাওয়া যাবে সামনে, না পিছনে। রাস্তা জুড়ে তখন সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকে গাড়ি আর গাড়ি। বাদ পড়ে না রিকশা, টোটো আর মালবাহী ত্রিচক্র যানও।

এরই পাশাপাশি ফুটপাতের অনেকটা অংশ দখল করে নেয় পার্ক করে রাখা গাড়ির লাইন। পায়ে হেঁটে চলা ফুটপাতের অংশটুকুও ঠেলা গাড়ি, ফুল, ফল, চা, বই, খাবারের ঠেলাগাড়িতে ভর্তি হয়ে যায়। এক কথায়, শিলিগুড়ি শহরের রাস্তা মানেই হল যানজট আর একটানা বিরক্তিকর গাড়ির হর্ন।

কেউ কারও থেকে এ বিষয়ে পিছিয়ে নেই। মোটরবাইক ও চার চাকার গাড়ির সঙ্গে সমান তাল মেলায় তিন চাকার অটো। লাইফস্টাইল বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গিয়েছে মানুষের পরিবহণ ব্যবস্থাও ।

সাইকেল এখন সংখ্যায় এতই কম যে, হাতে গোনা যায়। টোটো এসে পিছনে ফেলে দিয়েছে তিন চাকার রিকশাকে। স্কুটি, বাইক আর চার চাকার গাদাগাদিতে রাস্তায় মানুষের মুখের চেয়ে যন্ত্রের মুখ বেশি। এর সঙ্গে বাস, ট্রাকের মতো বড় বড় গাড়ি তো আছেই ।

দ্রুত বদলে যাওয়া এই শহরের রাস্তা দেখে মাঝবয়সী থেকে প্রবীণ প্রজন্ম বিস্মিতই হন!

হিলকার্ট রোড, সেবক রোড ও বিধান রোড— প্রধান এই তিন রাস্তাকে শিলিগুড়ির হৃদ্‌স্পন্দন বলা যেতে পারে। বাইরের কোনও জেলা বা শহর থেকে এসে শিলিগুড়ি হয়ে ডুয়ার্স বা পাহাড়— যেখানেই যেতে হোক না কেন, নির্ভর করতে হবে এই তিনটে রাস্তার উপর। সুতরাং, সকাল থেকেই ব্যস্ততা দেখা যায় এই সব রাস্তায়। সকাল ৯টার পর ধীরে ধীরে চড়তে থাকে যানজটের পারদের মাত্রা। কোর্টমোড় থেকে একটু এগিয়ে শিলিগুড়ি মহকুমা হাসপাতালের সামনে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে থাকে সারি সারি গাড়ির লাইন। দশটা পর্যন্ত হিমসিম খেতে হয় দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মী ও কর্তাদের। আরও একটু এগিয়ে গেলে বদলে যায় দৃশ্য। সামনে দিয়ে এগিয়ে যাবার রাস্তায়, অর্থাৎ হিলকার্ট রোড, পাশে বিধান রোড বা বাঁ-দিক দিয়ে ওভারব্রিজ পার করে যাবার ঠিক মুখের সামনে চোখে পড়বে সারি সারি অটোর লাইন।

কোনও গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কোনও গাড়ি যাত্রী তোলে। কেউ-বা হুস করে এসে সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কোনও কোনও সময় ট্রাফিক পুলিশ দাঁড়িয়ে থেকে অটোগুলোকে সরিয়ে দেন। উপস্থিত অটোগুলো চলে গেলেও এক মিনিটের মধ্যে আর একজন এসে অটো নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। ট্রাফিক পয়েন্ট থেকে দায়িত্বপালনের কিন্তু কোনও খামতি নেই। কিন্তু চালক-যাত্রী দু’পক্ষ ট্রাফিক নিয়ম, অন্যের সুবিধা-অসুবিধা বুঝে নিজে থেকে সচেতন না হলে রাস্তায় যানজট ও তাকে কেন্দ্র করে সমস্যা মেটানো এক কথায় অসম্ভব।

আইন অমান্য করার জন্য শাস্তি আছে। কিন্তু যাত্রীদের মৌখিক অন্যায়ের কোনও শাস্তি নেই। তা থাকলে অটো, বাস বা অন্য কোনও ট্রান্সপোর্ট, ড্রাইভার ও ট্রাফিক পুলিশের দিকে আঙুল না উঠে সরাসরি অভিযোগের আঙুল উঠত সাধারণ যাত্রীর উপর।

যাত্রিবাহী গাড়ি কি নির্দিষ্ট স্টপ ছাড়া যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলতে পারে? একজনের সুবিধার জন্য রাস্তার মাঝখানে হঠাৎ করে বাস বা অটো থামিয়ে দেওয়া কী উচিত? এতে পিছনে চলমান গাড়িটিকেও হঠাৎ করেই কষে ব্রেক করতে হয়। ফলে, বাসে বসে বা দাঁড়িয়ে থাকা কোনও শিশু বা প্রবীণ মানুষকে হঠাৎ ঝাঁকুনি সহ্য করতে হয়। সচেতন না থাকলে পড়ে যাওয়াও অসম্ভব নয়। কিন্তু এই অসুবিধা তাঁরা কেন ভোগ করবেন?

শিলিগুড়িতে যানজটের এই সমস্যা প্রতিদিনের। নাগরিক সচেতনতা তৈরি না হলে পুলিশ প্রশাসন আর কত চেষ্টা করবে? অফিসটাইম বলতে যা বোঝায়, সেই সময়ে রাস্তা যদি থমকে দাঁড়ায়, তা হলে এই প্রচণ্ড গরমে বাস বা টোটোয় দরদর করে ঘেমে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না সাধারণ মানুষ, ছাত্রছাত্রী বা নিত্যযাত্রীদের।

এ সমস্যা বাড়ে প্রতি বর্ষায়। তখন যানজট মানে ভিজে জামাকাপড়ে নাজেহাল হওয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া।

চাই একটু ধৈর্য আর ট্র্যাফিক আইন মেনে চলার সদিচ্ছা। অকারণে রাস্তা দখল করে যাত্রী না তোলা অথবা যানজটের মধ্যে লাইন ভেঙে এগিয়ে গিয়ে আরও তালগোল পাকিয়ে দেওয়া— এই সামান্য কাজগুলো না করলেই এই সমস্যার অনেকটা সমাধান হয়ে যায়।

(লেখক জলপাইগুড়ির ফুলবাড়ি হাইস্কুলের শিক্ষক। মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Traffic Pollution Siliguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE