Advertisement
E-Paper

কাহার পরীক্ষা

যে ছাত্ররা পিছাইয়া পড়িতেছে, তাহাদের চিহ্নিত করিতে হইবে। এবং, তাহাদের পিছাইয়া পড়িবার কারণটি দূর করিতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করিতে হইবে। বাড়তি ক্লাস, অতিরিক্ত মনোযোগ, বিশেষ পরীক্ষার ব্যবস্থা, পরিবারের সহিত আলোচনা, প্রয়োজনে অর্থসাহায্য— যাহা দরকার, কিছুতেই পিছপা হইলে চলিবে না।

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৯ ০০:০১
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পাশ-ফেল ফেরায় সমাজের একাংশের মুখ ভার হইয়াছে। পরীক্ষাই মূল্যায়নের শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি নহে। কিন্তু, উন্নততর পদ্ধতির প্রয়োগ সম্ভব না হওয়া অবধি পাশ-ফেল প্রথার উপর ভরসা করাই বিধেয়, কারণ এই প্রথাটিকে বর্জন করিবার ফল ভাল হয় নাই। পাশ-ফেল লইয়া আপত্তির বড় কারণ, অভাবী সংসারের ছাত্র এবং বিশেষত ছাত্রীরা ফেল করিলে বহু ক্ষেত্রে সেখানেই তাহাদের শিক্ষার ইতি। এই দাবির সমর্থনে বহু তথ্যপ্রমাণ আছে, সমীক্ষার ফলাফল আছে। আবার, একই রকম প্রমাণসমৃদ্ধ এই কথাটি যে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র দ্বিতীয় শ্রেণির মানের প্রশ্নেরও জবাব দিতে পারে না। অর্থাৎ, পাশ-ফেলের পক্ষে-বিপক্ষে তর্কটি প্রকৃত প্রস্তাবে স্কুলে থাকা বনাম শেখার তর্ক হইয়া দাঁড়ায়। দুর্ভাগ্য, ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থাকে বারংবার এই তর্কের সম্মুখীন হইতে হয়।

যে ছাত্ররা পিছাইয়া পড়িতেছে, তাহাদের চিহ্নিত করিতে হইবে। এবং, তাহাদের পিছাইয়া পড়িবার কারণটি দূর করিতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করিতে হইবে। বাড়তি ক্লাস, অতিরিক্ত মনোযোগ, বিশেষ পরীক্ষার ব্যবস্থা, পরিবারের সহিত আলোচনা, প্রয়োজনে অর্থসাহায্য— যাহা দরকার, কিছুতেই পিছপা হইলে চলিবে না। কিছু ছাত্রকে পিছনে ফেলিয়া যাওয়ার জন্য নহে, পাশ-ফেল প্রথা প্রয়োজন সবাইকে একই সঙ্গে একই অভিমুখে লইয়া যাওয়ার জন্য। ফেল করা যেন ‘ব্যর্থতা’ হিসাবে চিহ্নিত না হয়, এবং তাহার দায় যেন ছাত্রটির ঘাড়ে না চাপে— খামতি মিটাইবার জন্য স্কুল হইতে প্রশাসন, সকলে যেন সক্রিয় হয়, তাহা নিশ্চিত করিতে হইবে। শিক্ষার অধিকার আইনের সংশোধনীতে সেই অবকাশ যথেষ্ট না হইলেও আছে। তবে, শিক্ষাবর্ষের শেষে পরীক্ষা লইয়া তাহাতে ফেল করা ছাত্রদের দুই মাস পুরাতন ক্লাসে রাখিয়া তাহার পর নূতন ক্লাসে পাঠাইলে তাহাদের সেই ক্লাসের শিক্ষায় ঘাটতি আরও বড় হইতে পারে, এমন আশঙ্কা অবশ্য থাকে।

পাশ-ফেল প্রথা যেমন কোনও ছাত্রকে ‘ব্যর্থ’ বলিয়া দাগাইয়া তাহাকে বাতিলের ঝুড়িতে নিক্ষেপ করিবার ব্যবস্থা নহে, তেমনই এই প্রক্রিয়ার সহিত ক্লাসে ফার্স্ট-সেকেন্ড হইবারও সম্পর্ক নাই। বস্তুত, ‘র‌্যাঙ্কিং’ নামক যে ব্যবস্থাটি ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার সহিত অঙ্গাঙ্গি জড়াইয়া আছে— সেই ব্যবস্থাটিকে সম্পূর্ণ বাতিল করাই বিধেয়। ভারতের অধিকাংশ স্কুলেই এখন প্রত্যক্ষ ভাবে র‌্যাঙ্কিংয়ের ব্যবস্থা নাই, কিন্তু ঘুরপথে সেই তালিকাটি হামেশাই তৈরি হইয়া থাকে। সমস্যা আসলে মানসিকতায়। ছাত্রের শেখা বা না-শেখা যাচাই করা অপেক্ষা পরীক্ষা যে অনেক বেশি জরুরি শিক্ষাব্যবস্থার খামতিগুলি চিহ্নিত করিবার জন্য, এই কথাটি ভারতীয় সমাজ মানিতে পারে না। পঞ্চম বা সপ্তম শ্রেণির পরীক্ষায় কোনও ছাত্র তাহার শ্রেণির অন্যান্য ছাত্রকে নম্বরের হিসাবে পিছনে ফেলিতে পারিল কি না— এই হিসাবটি কাহারও উপকার করে না। এমনকি, ফার্স্ট হওয়া ছাত্রটিরও নহে। পরীক্ষার নম্বরের গুরুত্ব আছে, কিন্তু তাহা শিক্ষকদের নিকট— কোন ছাত্রের প্রতি কতখানি বাড়তি মনোযোগ প্রয়োজন, তাহার সূচক হিসাবেই নম্বরের গুরুত্ব। ছাত্র বা অভিভাবকের তাহা না জানিলেও ক্ষতি নাই। পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য যে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ছাত্রদের বাছিয়া তাহাদের প্রতি আরও বেশি দায়িত্বশীল হওয়া, এই কথাটি না বুঝিলে পরীক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়।

Pass Fail System Education
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy