Advertisement
E-Paper

তবুও প্রশ্ন

সংবাদে প্রকাশ, কলিকাতার বহু অঞ্চলে সিইএসসি-র বিদ্যুৎ পরিবাহী তার ভূগর্ভস্থ হইলেও শহরতলিতে এখনও ওভারহেড তারেই কাজ চলিতেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২০ ০১:১৩
আমপান কেড়ে নিয়েছে সব। ফাইল চিত্র। পিটিআই।

আমপান কেড়ে নিয়েছে সব। ফাইল চিত্র। পিটিআই।

আমপান-তুল্য বিপর্যয় পশ্চিমবঙ্গ আগে দেখে নাই। বিধ্বস্ত জেলাগুলির সর্বাঙ্গে সেই মহাপ্রলয়ের ক্ষত। কলিকাতাতেও। মূল সমস্যা বিদ্যুৎ সংযোগ লইয়া। সত্য যে ইতিমধ্যে শহরের বিদ্যুৎ পরিষেবা প্রায় স্বাভাবিক হইয়াছে। কিন্তু বেশ কিছু এলাকা এখনও অন্ধকারে। ইহাও সত্য যে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থার কর্মীরা উদয়াস্ত খাটিতেছেন, চেষ্টা করিতেছেন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিতে। তবুও কিছু গুরুতর প্রশ্ন থাকিয়া যায়। বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করিতে যদি দেরি হয়ও, গ্রাহকদের ফোন না ধরায় একটি মস্ত গাফিলতি হইয়া গিয়াছে। বহু গ্রাহকেরই অভিযোগ, সিইএসসি-র কল সেন্টার ফোন করিয়াও কথা বলা সম্ভব হয় নাই। দীর্ঘ ক্ষণ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকিলে নাগরিকরা স্বভাবতই উদ্বিগ্ন হইবেন। সেই উদ্বেগ নিরসনের দায়টি সংস্থার উপরই বর্তায়। সংস্থার কল সেন্টারে অধিকতর কর্মী নিয়োগ, সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন— বিভিন্ন পথে গ্রাহকদের আশ্বস্ত করিবার উপায় সিইএসসি-র ছিল। উচ্চপদস্থ কর্তারা বিপন্ন এলাকাগুলিতে যাইতে পারিতেন। গাছ কাটিতে সময় লাগিতে পারে। তার জুড়িতেও। কিন্তু, এই বিপর্যস্ত সময়ে মানুষকে আশ্বস্ত করা প্রয়োজন— এই কথাটি ভাবিতে এক সপ্তাহ সময় লাগিবে কেন?

ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে ওভারহেড তার। সংবাদে প্রকাশ, কলিকাতার বহু অঞ্চলে সিইএসসি-র বিদ্যুৎ পরিবাহী তার ভূগর্ভস্থ হইলেও শহরতলিতে এখনও ওভারহেড তারেই কাজ চলিতেছে। যে সংস্থার উপর মহানগরে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্ব ন্যস্ত— সেই সংস্থার পরিকাঠামোতে এহেন খামতি শহরের উদ্বেগ বাড়াইবে। বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিকাঠামো নির্মাণ বহু ব্যয়সাপেক্ষ কাজ। কিন্তু, ক্ষেত্রটির চরিত্র এমনই যে তাহাতে পরিষেবা দিতে চাহিলে এই ব্যয়ভার বহন করা ভিন্ন উপায়ান্তর নাই। এই দুর্যোগে আরও একটি কথা প্রকট হইয়া উঠিল— বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির অভাব ছিল। এই কাজগুলি ততখানি ব্যয়সাপেক্ষও নহে। কিন্তু, তাহার জন্য গয়ংগচ্ছ মানসিকতাটি ত্যাগ করা প্রয়োজন। যে ঝড় আছড়াইয়া পড়িবার পূর্বে পাঁচ-ছয় দিন সময় দিয়াছে, তাহার ধাক্কাও সামলাইতে না পারিলে বুঝিতে হয়, গোড়ায় গলদ থাকিয়া যাইতেছে।

গত কয়েক দিনের চাপান-উতোরে একটি কথা বারংবার উঠিয়া আসিয়াছে— সিইএসসি কলিকাতা ও শহরতলিতে একচেটিয়া ব্যবসা করিয়া থাকে। অর্থশাস্ত্রের ছাত্ররা জানেন, যে সকল বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে প্রারম্ভিক ব্যয় বিপুল, সেই ক্ষেত্রগুলিতে একচেটিয়া অধিকার সৃষ্টি হয়, যাহাকে বলে ‘ন্যাচারাল মনোপলি’। উদাহরণ হিসাবে সব পাঠ্যপুস্তকেই যে ক্ষেত্রটির উল্লেখ থাকে, তাহা বিদ্যুৎ সরবরাহ। এহেন ক্ষেত্রে সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আছে— নজরদারির দায়িত্ব, নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব। সরকারকে দেখিতে হইবে, ন্যায্য পরিষেবা প্রদানের জন্য যাহা করা প্রয়োজন, সংস্থাটি তাহা করিতেছে কি না। না করিলে, তাহাকে বাধ্য করিতে হইবে। এই নজরদারি একটি নিরন্তর প্রক্রিয়া। বিদ্যুৎবিভ্রাটের এই ডামাডোলে মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং সিইএসসি-র সদর দফতরে পৌঁছাইয়া গিয়াছিলেন। তাহার জন্য শহরবাসী তাঁহার নিকট কৃতজ্ঞ। কিন্তু, পরিস্থিতি সামলাইতে তাঁহাকে সংস্থার দফতরে যাইতে হইল, ইহাই বলিয়া দেয় সমস্যা কতখানি গভীর।

Coronavirus Lockdown Cyclone Amphan Cyclone
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy