মাত্র কয়েক বছর আগের কথা। নতুন করে সংশোধন করতে হয় ইতিহাসের পাতা। প্রথম মহিলা গ্র্যাজুয়েটের নামে কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে যুগ্ম ভাবে জায়গা করে নেয় অন্য একটি নাম, চন্দ্রমুখী বসু। মহিলাদের কৃতিত্বকে খাটো করে দেখার বদ অভ্যাস ইতিহাসের। কাদম্বিনীকে ইতিহাস মনে রেখেছিল— চন্দ্রমুখীকে নয়।
১৮৬০ সালে অধুনা বাংলাদেশে জন্ম চন্দ্রমুখীর। প্রায় এই সময়ই জন্ম কাদম্বিনীরও, ১৮৬১ সালে, ভাগলপুরে। কাদম্বিনীর পিতা ব্রাহ্মধর্মে প্রভাবিত হন। প্রায় একই ভাবে চন্দ্রমুখীর পিতা ভুবনমোহন বসু, কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় ও ব্রহ্মদেব উপাধ্যায়ের প্রভাবে, হিন্দুধর্মের গোঁড়ামি থেকে মুখ ফিরিয়ে খ্রিস্টধর্মাবলম্বী হন। খ্রিস্টধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যেই বাংলাদেশ থেকে সুদূর দেহরাদূনে সপরিবার যাত্রা করেন। চন্দ্রমুখীর প্রাথমিক পড়াশুনো দেহরাদূনে মিশনারিদের তত্ত্বাবধানে। এই অবধি কোনও সংঘাত নেই। সংঘাত শুরু হয় ঠিক এর পরেই, তৎকালীন এফএ পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বেথুন স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য চন্দ্রমুখী বাবার সঙ্গে কলকাতায় আসেন। এর কয়েক বছর আগেই, কাদম্বিনী বাবার সঙ্গে ভাগলপুর থেকে কলকাতায় আসেন শিক্ষার উদ্দেশ্যে। বঙ্গীয় হিন্দু বিদ্যালয়ে কিছু দিন পড়ার পর, বেথুন স্কুলে ভর্তি হন। অর্থাৎ কাদম্বিনী আর চন্দ্রমুখীর সহপাঠিনী হওয়ার কথা।
ইতিহাস এখানে থেকেই ভিন্ন বাঁক নেয়। চন্দ্রমুখী বেথুন স্কুলে ভর্তি হতে পারলেন না। কারণ সেই সময় বেথুন স্কুলের কার্যনির্বাহী সমিতির কিছু নিয়ম, যার ফলে মিশনারি সম্প্রদায়ের ছাত্রীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল সেই স্কুলে। চন্দ্রমুখী, শুধুমাত্র পিতার খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের কারণে বেথুন স্কুলে ভর্তি হতে পারেননি। মেয়েদের পড়াশোনার জন্য তৈরি করা প্রবাদপ্রতিম প্রতিষ্ঠান থেকে ফিরে যেতে বাধ্য হন বিদুষী ছাত্রীটি। পড়তে হয় দেহরাদূনে মিশনারি ছাত্রীদের জন্য নির্দিষ্ট ফ্রি নর্মাল স্কুলে। আর সেই বেথুন স্কুলেই পড়াশোনা করতে থাকেন কাদম্বিনী, সরলা, অবলা দাশেরা।