Advertisement
E-Paper

আদালতের বাহিরে

সাধারণ ভাবে আদালতের রায়ে যখন মধ্যস্থতার কথা বলা হয়, তাহার লক্ষ্য হয় দেওয়ানি মামলায় বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে মীমাংসা ঘটানো। এই পরিপ্রেক্ষিতে, না বলিয়া উপায় নাই যে সম্প্রতি অযোধ্যার বাবরি মসজিদ-রামমন্দির মামলায় পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ যখন মধ্যস্থতার সূত্র গ্রহণ করিবার কথা বলিল,

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৯ ০০:০০
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সাধারণ ভাবে আদালতের রায়ে যখন মধ্যস্থতার কথা বলা হয়, তাহার লক্ষ্য হয় দেওয়ানি মামলায় বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে মীমাংসা ঘটানো। এই পরিপ্রেক্ষিতে, না বলিয়া উপায় নাই যে সম্প্রতি অযোধ্যার বাবরি মসজিদ-রামমন্দির মামলায় পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ যখন মধ্যস্থতার সূত্র গ্রহণ করিবার কথা বলিল, এবং সেই লক্ষ্যে যখন একটি মধ্যস্থ কমিটি তৈরি হইল, তাহা কয়েকটি প্রশ্ন তুলিয়া যায়। প্রশ্নগুলি গুরুতর। প্রথম প্রশ্নটি মধ্যস্থতার নীতিটি লইয়া। বিচারপতিরা যদি বলেন যে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে এই সুদীর্ঘ মামলাসূত্রে অতি সুগভীর তিক্ততা ও বিরুদ্ধতা তৈয়ারি হইয়াছে, তাহার নিরাময় দরকার, এবং তাহার জন্য মধ্যস্থতা দরকার— তাঁহাদের কথা হইতে একটি পরোক্ষ স্বীকৃতি অনুমান করা চলে যে এই ক্ষেত্রে বিবদমান পক্ষ হিসাবে ভাবা হইতেছে দুই প্রধান ধর্মীয় সম্প্রদায়কে। অথচ পরোক্ষ ভাবেও এই কথা মানা অসম্ভব যে অযোধ্যা মামলা কোনও দুইটি সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘটিত হইতেছে। এই মামলার দুই বিবদমান পক্ষ কেবল— জমির উপর যাহাদের অধিকারের প্রশ্ন উঠিতে পারে, সেই তিনটি প্রতিষ্ঠান, অর্থাৎ সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, রাম লালা এবং নির্মোহী আখড়া। এই তিন পক্ষের মধ্যে সুবিচার বণ্টিত হইবে কোন হিসাবে, তাহা আদালতের বিবেচ্য। বুঝিতে অসুবিধা হয়, কেন সেই কাজের জন্য মধ্যস্থতা লাগিবে, কেন আদালত অপরাপর দেওয়ানি মামলার মতো এই মামলাতেও নিজে হইতে রায় দিবে না। ভাবিয়া ভয় হয়, দেশের দুই বড় ধর্ম-সম্প্রদায়কে এই মামলার সূত্রে বিবদমান ভাবা হইতেছে কি না। বাবরি মসজিদ ভাঙা এবং সেই জায়গায় রামমন্দির নির্মাণের দাবিটি কিন্তু দেশের গোটা হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষ হইতে উঠিয়া আসে নাই, উঠিয়াছে সেই সমাজের মধ্যেকার একটি গোষ্ঠীর— এবং আকারেপ্রকারে স্পষ্টতই ছোট গোষ্ঠীর পক্ষ হইতে। অবশ্যই এত দিনে তাহা লইয়া রাজনীতি ও রাজনীতি-উৎপাদিত ভাবাবেগের প্রবল বন্যায় ভাসিয়া গিয়াছে ভারতীয় হিন্দু সমাজের অনেকাংশ। কিন্তু মামলার ক্ষেত্রে তাহা বিচার্য, এমন কথা নিশ্চয় বিচারপতিরা বলিবেন না।

মধ্যস্থতার প্রশ্নটি বেশি করিয়া অবাক করে এই জন্যই যে মূল ঘটনাটিতে স্পষ্টতই একটি পক্ষের প্রতি অবিচার ঘটিয়াছিল। বাবরি মসজিদ যাঁহারা ভাঙিয়াছিলেন, নিশ্চিত ভাবেই তাঁহারা দুইটি অন্যায় কাজ করিয়াছিলেন, এক, একটি ঐতিহাসিক সৌধ ভাঙিবার অন্যায়, দুই ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টি করিয়া একটি ধর্মসম্প্রদায়কে প্ররোচিত করিবার অন্যায়। অথচ এতগুলি দশক পরেও অন্যায়কারীদের শাস্তির দিকে এক পা-ও অগ্রসর হওয়া হইল না। উপরন্তু মধ্যস্থতার সমাধানে তাঁহাদের অনৈতিক কাজটির উপর এক রকম স্বীকৃতির সিলমোহর চাপিল। অযোধ্যা বিতর্ক একটি অতি-সংবেদনশীল বিষয়, সন্দেহ নাই। কিন্তু বিচার তো অন্ধ ভাবেই নৈতিক হইবার কথা। সংবেদনের পরিমাপ এবং পক্ষাপক্ষ বিচার করিয়া তাহার চলিবার কথা নয়।

তৃতীয় প্রশ্নটি আরও দুশ্চিন্তাজনক। সেই প্রশ্ন মধ্যস্থতার লক্ষ্যে নির্মিত কমিটিকে লইয়া। মাত্র তিন জন আছেন কমিটিতে, তাহার মধ্যে শ্রী শ্রী রবিশঙ্করের নামটি অতীব উদ্বেগ সৃষ্টিকারী। ভারতীয় নাগরিক মনে করিতে পারেন যে রামমন্দির নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি কিছু কাল আগেই ভয়ানক উস্কানিমূলক কথা বলিয়াছিলেন, অকুস্থলে মন্দির না তৈরি হইলে গৃহযুদ্ধ বাধিয়া যাইবে, এমনও বলিয়াছিলেন। দুশ্চিন্তা মামলার চলনটি লইয়াও। বাবরি মসজিদ সেখানে দাঁড়াইয়াছিল সেই জমিতেই পৌরাণিক চরিত্র রাম জন্ম লইয়াছিলেন কি না, শেষ পর্যন্ত এই বিবেচনাই না মুখ্য হইয়া দাঁড়ায়, আইন মোতাবেক জমি ভাগাভাগির প্রশ্নটিকে গৌণ করিয়া! সব মিলাইয়া, আদালতের বাহিরে মধ্যস্থ দিয়া এমন একটি গুরুতর মামলার সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর চেষ্টা ঝুঁকিপূর্ণ ঠেকিতেছে।

Ayodhya Ram Temple Babri Masjid Sri Sri Ravi Shankar Ram temple in Ayodhya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy