Advertisement
E-Paper

স্বস্তি সাময়িক

গতি ধীর হইলেও ২০৬০ সালের মধ্যে তাহা সম্পূর্ণ সারিবে, এমনই আশা বিজ্ঞানীদের। ওজ়োন স্তরের ক্ষত।

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৮ ০০:০০
থাকবে এই বরফের স্তর? আন্টার্কটিকায় এএফপি-র তোলা ছবি।

থাকবে এই বরফের স্তর? আন্টার্কটিকায় এএফপি-র তোলা ছবি।

ক্ষত সারিতেছে। গতি ধীর হইলেও ২০৬০ সালের মধ্যে তাহা সম্পূর্ণ সারিবে, এমনই আশা বিজ্ঞানীদের। ওজ়োন স্তরের ক্ষত। বায়ুমণ্ডলের উপরি ভাগে বর্মের মতো যে স্তরটি পৃথিবীকে আগলাইয়া রাখিয়াছে যাবতীয় ক্ষতিকর রশ্মি হইতে, সেই বর্ম ক্রমশ শতচ্ছিন্ন হইয়া পড়িতেছিল। ছিদ্রপথে ক্যানসারের মতো মারণরোগ সৃষ্টিকারী অতিবেগুনি রশ্মির অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাইতেছিল। চিন্তায় পড়িয়াছিলেন বিজ্ঞানীরা। অবশেষে স্বস্তি। সম্প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিবেশ সংক্রান্ত দফতর এবং আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংগঠন জানাইয়াছে, ওজ়োন স্তরের ক্ষতের মাত্রা ২০০০ সাল হইতেই একটি নির্দিষ্ট হারে কমিতেছে।

মেরু অঞ্চলে মেরামতির প্রক্রিয়াটি দীর্ঘায়িত হইবার কারণ আছে। ২০০৬ সালে দক্ষিণ মেরু অঞ্চলেই ওজ়োন স্তরের সর্ববৃহৎ ছিদ্রটির সন্ধান পাওয়া যায়। এই বৎসর সেই ছিদ্রেরও আয়তন প্রায় ষোলো শতাংশ হ্রাস পাইয়াছে ঠিকই, কিন্তু মেরু অঞ্চলে ওজ়োন স্তরের সামগ্রিক ক্ষতির নিরাময় নিঃসন্দেহে সময়সাপেক্ষ। বস্তুত, ক্ষত সৃষ্টির প্রক্রিয়াটি শুরু হইয়াছিল সত্তরের দশকের শেষ হইতে। মনুষ্যসৃষ্ট ক্লোরোফ্লুরোকার্বনের (সিএফসি) অত্যধিক ব্যবহারই মূলত ইহার জন্য দায়ী। ক্ষয় রোধ করিতে ১৯৮৭ সালে স্বাক্ষরিত হয় মন্ট্রিয়ল চুক্তি। সিএফসি-র অবাধ ব্যবহার রোধ করিতে এবং ইহার বিকল্প খুঁজিতে একজোট হয় দেশগুলি। প্রচেষ্টার ফলও মিলিয়াছে। তবে, সমস্যা এখনও আছে। কিছু দেশ ক্ষতিকর গ্যাসের ব্যবহারে রাশ টানে নাই। তাহারা সতর্ক না হইলে অচিরেই এই সাফল্য থমকাইয়া যাইবে। সুতরাং, পরিবেশবিজ্ঞানীদের লড়াই এখনও চলিবে।

শুধুমাত্র ওজ়োন স্তরই নহে, সার্বিক ভাবে পরিবেশ সংরক্ষণের প্রশ্নেও এখনও বহু পথ চলিতে হইবে। সেই পথ চলা সবে শুরু হইয়াছে। পরিবেশবিজ্ঞানীদের নিরন্তর সতর্কবাণী এবং জলবায়ু পরিবর্তনের লক্ষণে আতঙ্কিত মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন কোণে পরিবেশ সংরক্ষণের প্রক্রিয়া চালু করিয়াছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও উষ্ণায়নের জন্য দায়ী সমস্ত গ্রিনহাউজ় গ্যাসের উৎপাদন হ্রাস করিবার প্রচেষ্টা লওয়া হইতেছে। অন্য দিকে, কংক্রিটের জঙ্গলে দমবন্ধ মানুষও সবুজে ফিরিতে আগ্রহী। বহুতলের বিজ্ঞাপনে প্রকৃতির কোলে ফিরিবার আহ্বান কি দশ বৎসর পূর্বেও শোনা যাইত? না কি, পূজার মণ্ডপে ‘থিম’ হিসাবে উঠিয়া আসিত পরিবেশ সচেতনতা? নির্বিচারে গাছ কাটিবার প্রতিবাদে স্থানীয়দের সম্মিলিত প্রতিবাদ, স্বাক্ষর সংগ্রহের উদাহরণও ছিল না বলিলেই চলে। কিন্তু এখন হইতেছে। সচেতনতা জন্মাইতেছে। ইহা সুলক্ষণ। কিন্তু দুর্লক্ষণও বিস্তর। ইতিমধ্যেই প্যারিস জলবায়ু চুক্তি হইতে সরিয়া গিয়াছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমাজ়ন অরণ্যে গাছ কাটিয়া গরুপালনের ইচ্ছা জানাইয়াছেন ব্রাজ়িলের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো। অর্থাৎ আমজনতা, এবং ইউরোপে ও অন্য ভূখণ্ডে কিছু রাষ্ট্র যতই পরিবেশমুখী হউক, বিশ্বের তাবড় রাজনীতিকরা অনেকেই অন্য খেলা খেলিতেছেন, ভবিষ্যতেও খেলিবেন। তাঁহারা মানুষকে পরিবেশ সচেতনতার পাঠ লইবার গম্ভীর উপদেশ দিবেন। কিন্তু পরিবেশ ধ্বংসের বিপুল আয়োজনগুলি বজায় রাখিবেন। ওজ়োন স্তরের পাশাপাশি তাঁহাদের ব্যাধিরও নিরাময় দরকার।

Environment Pollution Ozone Hole Climate
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy