Advertisement
E-Paper

তৃতীয় পরিসর

অস্বীকার করা চলে না, ভারতীয় রেলেও ঘোষণাগুলি প্রধানত লিঙ্গ-নিরপেক্ষ। সেখানে মূল সম্বোধন ‘যাত্রী’। কিন্তু, লিঙ্গ-সাম্যের প্রশ্নটি সম্ভবত সেখানেই ফুরাইয়া যায়।

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৭ ০০:০০

লন্ডনের টিউব রেলের ঘোষণায় আর ‘লেডিজ অ্যান্ড জেন্টলমেন’ শব্দবন্ধটি শোনা যাইবে না। বরং, বলা হইবে, ‘গুড মর্নিং, এভরিওয়ান’। ভদ্রমহিলা ও ভদ্রলোকগণ নহেন, সবাই। ভূগর্ভস্থ রেলের যাত্রীদের মধ্যে ‘অ-ভদ্র’ মানুষের সংখ্যা বাড়িতেছে কি না, কর্তৃপক্ষ জানান নাই। কিন্তু, সম্বোধনে পরিবর্তনটির মধ্যে যাত্রীদের ভদ্রতা, শিষ্টতার বিচার নাই— ‘পুরুষ’ এবং ‘মহিলা’, এই দুই লিঙ্গের অন্তর্ভুক্ত নহেন, এমন যাত্রীদের স্বাগত জানাইবার সচেতন প্রয়াস রহিয়াছে। লন্ডনের টিউবের পরিসরটি যে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্যেও সমপরিমাণ উন্মুক্ত, এই পরিবর্তন সেই কথাটিকেই সূচিত করে। তৃতীয় লিঙ্গকে, অথবা ভিন্নতর যৌনতাকে কোনও সমাজ কতখানি সহজে স্বীকৃতি দিতে পারে, তাহা সেই সমাজের অগ্রসরতার একটি বড় মাপকাঠি। ব্রিটেনের রাজনীতিতে যে এই প্রশ্নগুলিকে কেন্দ্র করিয়া বিরোধ নাই, সকলেই একবাক্যে সমকামিতাকে ‘স্বাভাবিক’ বলিয়া মানিয়া লয়, অথবা তৃতীয় লিঙ্গের কোনও মানুষের সহিত সামাজিক পরিসরে সম্পূর্ণ স্বচ্ছন্দ বোধ করে, তেমন নহে। কিন্তু, সেই সমাজেরই একটি বৃহৎ সংস্থা যখন তাহার পরিসরটিতে এমন ঘোষিত ভাবে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে স্বাগত জানায়, তখন বোঝা সম্ভব, সমাজের দ্বন্দ্বে আধুনিকতা, অগ্রসরতার পক্ষেও জোর কম নহে। ইহা পরিণত সমাজের দিক্‌চিহ্ন।

অস্বীকার করা চলে না, ভারতীয় রেলেও ঘোষণাগুলি প্রধানত লিঙ্গ-নিরপেক্ষ। সেখানে মূল সম্বোধন ‘যাত্রী’। কিন্তু, লিঙ্গ-সাম্যের প্রশ্নটি সম্ভবত সেখানেই ফুরাইয়া যায়। হাসপাতালে তৃতীয় লিঙ্গের রোগীকে পুরুষ ওয়ার্ডে রাখা হইবে না মহিলা ওয়ার্ডে, এই সংশয়ের মীমাংসা না হওয়ায় গুরুতর অসুস্থ রোগীও চিকিৎসা পান না। আজ অবধি ভারতে গণপরিসরে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য শৌচাগার অবধি গড়িয়া উঠে নাই। অতি বিরল দুই একটি ব্যতিক্রম বাদ রাখিলে তাঁহারা আজও সমাজে সম্পূর্ণ ব্রাত্য। শিক্ষা হইতে পেশা, কোনও দরজাই তাঁহাদের জন্য খোলে না। ফলে, তাঁহাদের প্রান্তিকতাও ঘুচে না। অবশ্য, যে দেশে এখনও অবধি মহিলাদের জন্যই গণপরিসর প্রস্তুত হয় নাই, সেখানে তৃতীয় লিঙ্গের জন্য সাম্যের দাবি সম্ভবত অলীক।

লিঙ্গ-সাম্যের প্রশ্নটিকে যদি যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হয়, তবে কেবল সমাজের উপর নির্ভর করিয়া থাকিলেই চলিবে না। সরকারি উদ্যোগ চাই। সমকামিতার প্রশ্নটিকে আদালত যেমন ফের সরকারের নিকট ফেরত পাঠাইয়াছে। সরকারি উদ্যোগ জরুরি, কারণ সমাজ যে দরজা প্রবল শক্তিতে বন্ধ করিয়া রাখিয়াছে, তাহাকে খুলিতে হইলে সমপরিমাণ জোর চাই। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য গণপরিসরকে প্রস্তুত করিয়া লইতে আইনি পরিবর্তন প্রয়োজন। তৃতীয় লিঙ্গের বিভিন্ন অসুবিধার কথা মাথায় রাখিয়া প্রণীত আইন। লিঙ্গ-পরিচয়ের কারণে কাহারও সহিত বৈষম্যমূলক আচরণ হইলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থাও প্রয়োজন। লিঙ্গ-বিদ্বেষ বস্তুটি চরিত্রে বর্ণবিদ্বেষের মতোই। কিছু ভিত্তিহীন বিশ্বাসকে কেন্দ্র করিয়া গড়িয়া উঠা সামাজিক প্রথা। তাহাকে ভাঙিতে হইলে প্রথম উদ্যোগটি রাষ্ট্রের তরফ হইতে আসাই বিধেয়। কিন্তু, তাহার জন্য রাষ্ট্রকে এই সমস্যার গভীরতা উপলব্ধি করিতে হইবে। সেই সচেতনতা এখনও বিরল।

Fictitious Third Gender Equality তৃতীয় লিঙ্গ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy