Advertisement
E-Paper

খারিজ

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল কংগ্রেসের চৌত্রিশ শতাংশ আসন জয়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়াছিল বিরোধীরা। শীর্ষ আদালত সেই মামলা বাতিল করিলে বিজেপি বলিয়াছিল, তাহারা ‘গণতান্ত্রিক উপায়’-এ তৃণমূলের মোকাবিলা করিবে। ত্রিপুরা দেখাইল, গণতন্ত্রের পাঠ বিজেপি ভালই পড়িয়াছে।

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৪৩

পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনে এক-তৃতীয়াংশ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতিয়াছে তৃণমূল কংগ্রেস। ত্রিপুরার পঞ্চায়েত নির্বাচনে নব্বই শতাংশ জিতিয়াছে ভারতীয় জনতা পার্টি। বলা যাইতে পারে, দুই রাজ্যেই পরাভূত হইল গণতন্ত্র, এবং কার্যত খারিজ হইল পঞ্চায়েতি রাজ। স্থানীয় প্রশাসনে স্থানীয় মানুষের যোগদান, এই উদ্দেশ্য লইয়া ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থার পত্তন হইয়াছিল। সংবিধান সংশোধন করিয়া এই ‘তৃতীয় সরকার’ প্রতিষ্ঠা হইয়াছিল, নিয়মিত নির্বাচন, নির্বাচিতদের দায়িত্ব ও ক্ষমতা নির্দিষ্ট হইয়াছিল। এখন পঞ্চায়েত ব্যবস্থার বাহিরের আকারটুকু কেবল টিকিয়া আছে। সহভাগী পরিকল্পনা, সহমতের ভিত্তিতে প্রশাসন, সকল সারবস্তুই অন্তর্হিত হইয়াছে। আজ যে নাগরিক প্রহৃত, লাঞ্ছিত হইয়া ভোটের বুথ ছাড়িয়াছেন, কাল তিনি কেন গ্রামসভায় যোগ দিবেন? ভোটদাতাকে যিনি ভয় দেখাইয়া কার্যোদ্ধার করিতে অভ্যস্ত, গ্রামসভা তিনি ডাকিবেন কেন? বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যিনি জিতিয়াছেন, গণতন্ত্রের সহিত তাঁহার সম্পর্কও চুকিয়াছে। তাঁহার কোন দল, সে প্রশ্ন অর্থহীন। বাম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী যথার্থই বলিয়াছেন, বিজেপি এবং তৃণমূল একই মুদ্রার দুই পিঠ। কেবল বলিতে ভুলিয়াছেন, শঙ্কাশাসিত নির্বাচন বামফ্রন্টই এক দিন পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েতে আনিয়াছিল। সিপিএম-এর মজিদ মাস্টার এবং তৃণমূলের শেখ আরাবুল একই মুদ্রার দুই পিঠ।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল কংগ্রেসের চৌত্রিশ শতাংশ আসন জয়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়াছিল বিরোধীরা। শীর্ষ আদালত সেই মামলা বাতিল করিলে বিজেপি বলিয়াছিল, তাহারা ‘গণতান্ত্রিক উপায়’-এ তৃণমূলের মোকাবিলা করিবে। ত্রিপুরা দেখাইল, গণতন্ত্রের পাঠ বিজেপি ভালই পড়িয়াছে। তৃণমূল যে ভাবে বিরোধীদের মনোনয়ন দিতে দেয় নাই, সে ভাবেই ভয় দেখাইয়া নিরস্ত করিয়াছে বিজেপি। বরং ‘গুরুমারা বিদ্যা’ দেখাইয়াছে, তিন হাজারেরও অধিক বাম পঞ্চায়েত সদস্যকে পদত্যাগ করিতে বাধ্য করিয়া পঞ্চায়েত ভাঙিয়াছে। অতঃপর উপনির্বাচন ঘোষণা করিয়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিয়ানব্বই শতাংশ আসন জিতিয়াছে। ইহাই গণতান্ত্রিক মোকাবিলা বটে। পঞ্চায়েত ব্যবস্থার রূপকার নেতা ও আধিকারিকরা ভাবিয়াছিলেন, ভারতের নির্বাচন ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক হইলেও সমাজ ব্যবস্থায় গণতন্ত্র না থাকিবার বাস্তবটি পরিবর্তন করিবে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা, সেখানে সকল শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব, সকলের যোগদান এক প্রকার সমতা আনিবে। দলিত, মহিলা, আদিবাসী, অতি-দরিদ্র প্রান্তিক নাগরিক স্থানীয় প্রশাসনের কাজে অংশ লইতে পারিলে তাঁহাদের সামাজিক মর্যাদা বাড়িবে। রাষ্ট্র সকলের উপর সমান দায়িত্ব অর্পণ করিলে উন্নয়নের ফলের বণ্টনেও সমতা আসিবে।

এই লক্ষ্যের কিছুই যে পূরণ হয় নাই, এমন নহে। মহিলা, দলিত-আদিবাসীর যোগদান অনেকাংশে ঘটিয়াছে। কিন্তু সকলের মতকে গুরুত্ব দিবার ইচ্ছাটিই ক্রমে সরিয়া যাইতেছে। রাজনৈতিক দলগুলি বিরোধীশূন্য গণতন্ত্র চায়, পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় যাহা অকল্পনীয়। দলের শীর্ষ নেতারা গ্রামের মানুষকে নীরব সমর্থক করিয়া রাখিতে চাহেন। বলিবেন নেতা-নেত্রী, তাঁহার কথা না শুনিলে চলিবে বোমা-বন্দুক। পঞ্চায়েতের পঞ্চত্বপ্রাপ্তি ঘটিবে, তাহাতে আশ্চর্য কী।

Vote Election Panchayat Tripura TMC BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy