Advertisement
E-Paper

নীলকণ্ঠ

ব্যাঙ্কিং-এর ক্ষেত্রে একটি দ্বৈত নীতির কথা উল্লেখ করিয়াছেন পটেল। বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পক্ষে যতখানি সম্ভব, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে তাহা সম্ভব নহে।

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৮ ০০:২৫

কোন বিষ কণ্ঠে ধারণ করিবেন উর্জিত পটেল? দুর্নীতির সমুদ্র মন্থনে নীরব মোদী নামক যে হলাহল উঠিয়া আসিয়াছে, তাহার দায়ের কথাই কি বলিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর? না কি, ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ করিতে হইলে যে রাজনৈতিক বিষ হজম করিতে হইবে, পটেলের ইঙ্গিত সে দিকে? অরুণ জেটলির হাতে সিদ্ধান্ত করিবার ভার থাকিলে তিনি প্রথম বিকল্পটিকেই বাছিয়া লইবেন। এই বিপুল দুর্নীতির জন্য অর্থ মন্ত্রক রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দিকেই আঙুল তুলিয়াছে। নোট বাতিলের সময় যেমন পটেল মুখ বুজিয়া দায় লইয়াছিলেন, এই ক্ষেত্রেও তেমনটি হইলে ল্যাটা চুকিয়া যাইত। ছাপ্পান্ন ইঞ্চির ছাতি ফুলাইয়া মহানায়ক দাবি করিতে পারিতেন, তিনি এখনও না খাইবার ও খাইতে না দেওয়ার প্রতিজ্ঞায় অটল— কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যদি ভাঁড়ারের দিকে নজর রাখিতে ভুলিয়া যায়, আর সেই ফাঁক গলিয়া যদি বেড়াল দুধে মুখ দেয়, সেই দোষ কি বিকাশপুরুষের?

ব্যাঙ্কিং-এর ক্ষেত্রে একটি দ্বৈত নীতির কথা উল্লেখ করিয়াছেন পটেল। বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পক্ষে যতখানি সম্ভব, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে তাহা সম্ভব নহে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রটিতে ব্যাঙ্কের পরিচালকমণ্ডলী পালটাইবার অধিকার সরকারের, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তাহাতে হাত দেওয়ার ক্ষমতা নাই। একাধিক ব্যাঙ্কের সংযুক্তিকরণের সিদ্ধান্ত করাও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আয়ত্তের বাহিরে। এমনকী, কোনও বড় অনিয়ম ধরা পড়িলেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের লাইসেন্স বাতিল করা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পক্ষে অসম্ভব। ব্যাঙ্কিং রেগুলেশন আইনে বিবিধ সংশোধনীর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার এই ক্ষমতাগুলি কুক্ষিগত করিয়াছে। ফলে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভূমিকা মূলত নিধিরাম সর্দারের। এই কথাগুলি অরুণ জেটলি জানেন না, তাহা বিশ্বাস করা কঠিন। নীরব মোদী-কাণ্ডের দায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ‘নজরদারির অভাব’-এর ঘাড়ে চাপাইয়া দেওয়া অতএব একটি রাজনৈতিক বিবৃতি। ব্যাঙ্কিং দুর্নীতিতে কেন্দ্রের, বিশেষত তাহার অধীশ্বরের, যে কোনও দায় নাই, এই কথাটি প্রতিষ্ঠা করাই সম্ভবত জেটলির উদ্দেশ্য ছিল।

উদ্দেশ্যটি ভয়ানক, তাহার পন্থা ভয়ানকতর। ব্যাঙ্কিং দুর্নীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কী ভাবে এই বিপদের শেষ পাওয়া যায়, সেই উত্তর সন্ধানের দায়িত্বটি মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের উপরই ন্যস্ত। স্বয়ং অর্থমন্ত্রী যদি নিজের দায়িত্বটিকে এমন দোষ চালানের খেলায় নামাইয়া আনেন, তবে বোঝা যায়, নীরব মোদীদের শেষ নাই। সরকার ধূম্রজাল বিস্তার করিয়া রাখিবে, এবং নীরব মোদীরা তাহার আড়াল হইতে তির চালাইবেন। বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের প্রতিটি লেনদেনের দিকে নজর রাখা যে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাজ নহে, সেই দায়িত্ব ব্যাঙ্কগুলিকেই পালন করিতে হইবে, এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণেই ব্যাঙ্কগুলি ভুলিয়াও সেই কাজ করে না— এই কথাগুলি স্বীকার করা জেটলির পক্ষে কঠিন হইতেই পারে। কিন্তু, দোষ স্বীকার না করিলে যে তাহা সংশোধনের কাজ শুরুই হয় না। পটেল কেন ক্ষুব্ধ, তাহাও বোঝা যায়। তিনি যে বিষ কণ্ঠে ধারণ করিতে বাধ্য হইতেছেন, তাহা চরিত্রে রাজনৈতিক। ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে সাঙাততন্ত্রের ভোগ্যপণ্য বানাইবার রাজনীতিকে ধারণ না করিয়া পটেলের যে আর উপায় নাই।

Urjit Patel RBI PNB Money Fraud
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy