Advertisement
E-Paper

ভুল থেকে শিক্ষা নিলে হার হয় না

জীবনে ঝঞ্ঝাও থাকে। দিগন্তের আলো ঢেকে দিতে চায় আচমকা উড়ে আসা কালো মেঘ। ভুল থেকে শিক্ষা নিতে না চাওয়ার এক প্রবণতাও মানুষের মধ্যেই দেখা যায়। সেখানেই ব্যতিক্রমের মুখে পড়ে মানুষের অব্যর্থতার তত্ত্ব।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৮ ০০:৫০
লক্ষ্মী কুইল্যা (বাঁ-দিকে) ও তাঁর অনুগামীরা বুঝলেন না, বিজয়োল্লাস করলেই জয় সূচিত হয় না। —নিজস্ব চিত্র।

লক্ষ্মী কুইল্যা (বাঁ-দিকে) ও তাঁর অনুগামীরা বুঝলেন না, বিজয়োল্লাস করলেই জয় সূচিত হয় না। —নিজস্ব চিত্র।

মানুষ কখনও ব্যর্থ হতে পারে না, হয় সে সফল হবে, না হয় সে শিখবে। মহাজনের মহাবাক্য এ। প্রায় রোজই ছোট-বড় দৃষ্টান্তে এ তত্ত্বের সত্যতা টের পাওয়া যায়। তাতে বেশ স্বস্তিও অনুভূত হয়। মনে হয়, সামনের দিগন্তে শুধু আলো আর আলো, কোনও অন্ধকার নেই।

সেই উজ্জ্বল রেখাকে প্রেক্ষাপটে রেখেই সম্প্রতি চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে উঠল বেশ কয়েকটা মুখ— লিপি বিশ্বাস, মাইনো মাড্ডি, সরস্বতী কাপাসি, মৌলি দাস, মিলি ঘোষ, মল্লিকা খাতুন, সঙ্গীতা সরকার। তাঁদের প্রত্যেকের আখ্যানই হল মানুষের জয়যাত্রার অসামান্য সব আখ্যান।

কিন্তু জীবনে ঝঞ্ঝাও থাকে। দিগন্তের আলো ঢেকে দিতে চায় আচমকা উড়ে আসা কালো মেঘ। ভুল থেকে শিক্ষা নিতে না চাওয়ার এক প্রবণতাও মানুষের মধ্যেই দেখা যায়। সেখানেই ব্যতিক্রমের মুখে পড়ে মানুষের অব্যর্থতার তত্ত্ব।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

লিপি, মাইনো, সরস্বতী, মল্লিকা, মৌলি, মিলিরা কী ভাবে সফল? সফল রুখে দাঁড়িয়ে। পড়তে দিতে চায়নি পরিবার, স্কুল থামিয়ে বিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এ মেয়েরা মাথা নিচু করেননি। প্রায় প্রত্যেকেই এ বাংলার কোনও না কোনও প্রত্যন্ত প্রান্তের। সুতরাং শুধু পারিবারিক নয়, সামাজিক পরিসরেও প্রতিকূলতা ছিল বিস্তর। সেই প্রবল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়ে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় যে ফলাফল এই মেয়েরা করেছেন, তা অসামান্য।

আরও পড়ুন
ভুল করেছিলাম, বলছেন বাবা-মা

বাবা-মা বা অভিভাবক বা পরিজনরা যে ভুল পদক্ষেপ করতে চলেছিলেন, তা প্রমাণ করে দিয়েছেন এই মেয়েরা। এই সক্ষমতার মধ্যে আনন্দিত হওয়ার উপকরণ বিস্তর। কিন্তু তার চেয়েও বেশি আনন্দ হয়, যখন দেখি, ভুল থেকে শিক্ষা নিলেন বড়রা। সন্তানদের অদম্য জেদের কাছে তাঁরা হারলেন। যদি না হারতেন, তা হলে যে সিদ্ধান্তটা খুব ভুল হয়ে যেত, তাও প্রমাণিত হয়ে গেল। তবে একে পরাজয় হিসেবে তাঁরা নিলেন না। ভুল হয়েছিল, শিক্ষা পেলেন, অতএব ভুলটাকে এ বার আপ্রাণ প্রচেষ্টায় শুধরে নেবেন বলে অঙ্গীকার করলেন।

আরও পড়ুন
‘অবাধ্য’ মেয়ের কাছে হেরে গিয়ে খুশিই বাবা

ঠিক-ভুল, ইতি-নেতি, সুখ-দুঃখ, ভাল-মন্দ জীবনের অঙ্গ। জীবনের পথে ভুল হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। ভুল করা অমার্জনীয়ও নয়। কিন্তু ভুল থেকে শিক্ষা নিতে পারাটা খুব জরুরি। লিপি, মাইনো, সরস্বতী, মৌলি, মল্লিকা, মিলি, সঙ্গীতাদের পরিবার সে শিক্ষা নিতে পেরেছে। জীবনের এক বিরাট জয়গান সেখানেই গীত হয়েছে, মানুষের নিরবচ্ছিন্ন জয়যাত্রার তত্ত্ব আরও একবার প্রমাণিত হয়েছে।

কিন্তু তার মাঝেই মাথা তোলেন লক্ষ্মী কুইল্যার মতো নেতা। ভুল কে ভুল হিসেবে মানতে পারেন না তাঁরা বা তাঁদের অনুগামীরা। প্রতি পদক্ষেপে পরাজয়ের ভয় পান তাঁরা। তাই শিক্ষা নিতে পারেন না।

পুরুলিয়ার গ্রামে তৃণমূলের পরাজয়, সেই পরাজয়ের কারণ খুঁজে বার করতে উদ্যত লক্ষ্মী কুইল্যা। তৃণমূল নেতা লক্ষ্মী এক মহিলাকে জুতোর মালা পরিয়ে কান ধরে ওঠবস করান। তা নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। তৃণমূল থেকে লক্ষ্মী বহিষ্কৃত হন।

আরও পড়ুন
মহিলা কর্মীকে জুতোর মালা, অভিযুক্ত জেলখাটা নেতাকে মালা পরাল তৃণমূল!

শিক্ষা নেননি লক্ষ্মী কুইল্যা। শিক্ষা নেননি তাঁর অনুগামীরাও। কতটা ভয়ঙ্কর নিন্দনীয় কা‌ণ্ড ঘটিয়েছিলেন, সে উপলব্ধিই নেই। তাই জামিন পেতেই বীরের সংবর্ধনা, ফুলের মালা, আবির।

লক্ষ্মী কুইল্যা ও তাঁর অনুগামীরা বুঝলেন না, বিজয়োল্লাস করলেই জয় সূচিত হয় না। বুঝলেন না, আপাতদৃষ্টিতে যাকে পরাজয় বলে মনে হয়, তা পরাজয় নাও হতে পারে। বুঝলেন না, ভুল থেকে শিক্ষা নিলে আখেরে মানুষের জয়ই হয়।

Newsletter Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Higher Secondary Lakshmi Kuila TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy