Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভুল করেছিলাম, বলছেন বাবা-মা

বর্ধমানের হ্যাচারি রো়ডের বাসিন্দা লিপি বিশ্বাসের বাবা-মা বলছেন, ‘‘ভুল করেছিলাম। মেয়ে এখন যত দূর পড়তে চায়, পড়াব।’’

(উপর থেকে বাঁ-দিকে) লিপি বিশ্বাস, মাইনো মাড্ডি (নীচে থেকে বাঁ-দিকে) ফজিলা খাতুন ও মৌলি দাস

(উপর থেকে বাঁ-দিকে) লিপি বিশ্বাস, মাইনো মাড্ডি (নীচে থেকে বাঁ-দিকে) ফজিলা খাতুন ও মৌলি দাস

সৌমেন দত্ত ও শুভাশিস সৈয়দ
বর্ধমান ও বহরমপুর শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৮ ০৪:৪৮
Share: Save:

বাড়িতে বিয়ের তোড়জোড়। কিন্তু মেয়ে চলেছেন স্কুলের পথে। রেগে কাঁই বাবা-মা ব্যাগ কেড়ে নিয়েছিলেন রাস্তাতে। মেয়ে অবশ্য দমে যাননি। স্কুলের সাহায্য নিয়ে পড়াশোনা চালিয়েছেন হোমে গিয়ে। উচ্চ মাধ্যমিকের ফল বেরোনোর পরে সেই মেয়েকে নিয়েই গর্বের হাসি বাবা-মায়ের মুখে।

বর্ধমানের হ্যাচারি রো়ডের বাসিন্দা লিপি বিশ্বাসের বাবা-মা বলছেন, ‘‘ভুল করেছিলাম। মেয়ে এখন যত দূর পড়তে চায়, পড়াব।’’ একই কথা পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের মাইনো মাড্ডি, জামালপুরের সরস্বতী কাপাসি থেকে মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার মৌলি দাস বা কান্দির মিলি ঘোষ— অনেকের বাবা-মায়ের মুখেই।

বর্ধমানের ইছলাবাদ বিদ্যাসাগর স্কুলের ছাত্রী লিপি উচ্চ মাধ্যমিকে পেয়েছেন ৭৩ শতাংশ নম্বর। মাধ্যমিক পাশের পরেই তাঁর বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। রুখে দাঁড়ান জেদি লিপি। চাইল্ডলাইন একটি হোমে পাঠালে সেখান থেকেই একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা দেন। বাড়ির পরিস্থিতি পাল্টায় তার পরে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের এক সভায় লিপি বলেন, ‘‘মেয়েরাও স্বনির্ভর হয়ে বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়াতে পারে, কেউ ভাবতে চান না!’’ সর্বশিক্ষা মিশনের পূর্ব বর্ধমান জেলা আধিকারিক শারদ্বতী চৌধুরী বলেন, ‘‘লিপিকে ‘কন্যাশ্রী মডেল’ করার কথা ভাবা হচ্ছে।’’

পড়তে চাওয়ার পথটা সহজ ছিল না মাইনো বা সরস্বতীরও। আউশগ্রামের নোয়াদা গ্রামের মাইনো মাড্ডি ভাতারে চতুষ্পল্লি হাইমাদ্রাসায় একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময়ে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। তার পরে মাদ্রাসার হস্টেলে থেকে পড়েছেন মাইনো। জামালপুর গার্লস হাইস্কুলের সরস্বতী কাপাসিও শিক্ষিকাদের সাহায্যে বিয়ে আটকান। উচ্চ মাধ্যমিক দেন মামার বাড়িতে থেকে। মাইনো ৫৫ ও সরস্বতী ৫৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করেছেন। সরস্বতীর বাবা তরুণ কাপাসি এখন বলছেন, ‘‘বড় ভুল হয়ে যেত। মেয়ে পড়তে চায়। ওকে পড়াব।’’

বিয়ে রুখতে মাধ্যমিকের পাঁচ দিন আগে বাড়ি থেকে পালিয়ে মুর্শিদাবাদের বড়ঞার বিডিও-র কাছে গিয়েছিল কান্দির মিলি। ২৭৬ পেয়ে পাশ করে সে বলে, ‘‘পরীক্ষার আগে ক’টা দিন পড়তে পারলে হয়তো আরও ভাল ফল হত।’’ বিয়ে রুখে মাধ্যমিকে বসা হরিহরপাড়ার মল্লিকা খাতুন বলে, ‘‘অর্থনৈতিক ভাবে স্বাধীন হতে চাই, যাতে কেউ আমার উপরে মতামত চাপিয়ে দিতে না পারে।’’ একই কথা সপ্তমী প্রামাণিক, শামিমা খাতুন, ফজিলা খাতুনদেরও।

মাধ্যমিকের পরেই জোর করে বিয়ে দেওয়ায় বিষ খেয়েছিল মঙ্গলকোটের পারুল খাতুন। ভাল ফলের কথা জানা হয়নি তার। লিপিরা অবশ্য বলছেন, ‘‘যে পরিস্থিতিই আসুক, হাল ছাড়ব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE