Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Anjan Bandyopadhyay

বিনাশের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াল এই নোবেল

পরমাণু অস্ত্রের হুঙ্কার পৃথিবী থেকে চিরতরে যে মুছে ফেলা দরকার, সে কথা শুধু নরওয়ের নোবেল কমিটি উপলব্ধি করেছে, এমন কিন্তু নয়। এই উপলব্ধি এখন গোটা পৃথিবীর।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৭ ০০:৫৯
Share: Save:

গভীর আঁধার একটা সময়ে চকিত বজ্রের চরাচর ব্যাপী বিস্ফোরণের মতো এক প্রতিবাদ যেন। ধ্বংসের প্রতিযোগিতায় কে কতটা দড়, বড়াই আজ তা নিয়েই। পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডারের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে তীব্র আস্ফালন। সভ্যতার পৃথিবীতে রয়েছি আমরা? নাকি কোনও প্রগৈতিহাসিক দুর্যোগের ঘনঘটা মানবজাতির অস্তিত্বকে ঘিরে? বোঝা যায় না আজ স্পষ্ট করে। এমন একটা সময়ে নোবেল কমিটির সজোর চপেটাঘাত যাবতীয় আস্ফালনের গালে। পৃথিবী থেকে পরমাণু অস্ত্রের নাম-নিশানা মুছে দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে শতাধিক দেশে গণআন্দোলন ছড়িয়ে দিয়েছে যে সংস্থা, সেই ‘আইক্যান’-এর হাতে এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার। বার্তাটা খুব স্পষ্ট করেই যুদ্ধবাজদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছে নোবেল কমিটি।

পরমাণু অস্ত্রের হুঙ্কার পৃথিবী থেকে চিরতরে যে মুছে ফেলা দরকার, সে কথা শুধু নরওয়ের নোবেল কমিটি উপলব্ধি করেছে, এমন কিন্তু নয়। এই উপলব্ধি এখন গোটা পৃথিবীর। যাবতীয় গণবিধ্বংসী অস্ত্রের বিসর্জন হয়ে যাক এই গ্রহ থেকে, বিশ্ব জনমত এমনই বলছে আজ। এ বারের শান্তির নোবেলটা আইক্যান-এর নামে লিখে দিয়ে সেই জনমতকেই যেন মর্যাদা দিল নোবেল কমিটি।

গোটা বিশ্ব উদ্বেগ প্রকাশ করছে, তবু উত্তর কোরিয়ার শাসক থামতে নারাজ। সকাল-বিকেল মুগুরু ভাঁজার ঢঙে ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্র নিয়ে কসরৎ তাঁর। পরমাণু অস্ত্রের প্রতিযোগিতায় সামিল হওয়ার অদম্য আগ্রহ ইরানে। পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ করে ভারতকে রোখার হুমকি পাকিস্তানের। এই সবক’টি শাসানির পাল্টা হুমকি-হুঁশিয়ারি-হুঙ্কারও জন্ম নিচ্ছে স্বাভাবিক ভাবেই। আর আমরা সবাই একই সঙ্গে যেন একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছি অন্তিম মুহূর্তের দিকে। ডুমস্‌ডে ঘড়ির কাঁটা মধ্যরাতের আরও-আরও কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন: ‘আমিও পারি’, বুঝিয়ে দিল নোবেল কমিটি

আজ কোনও প্রান্তে উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে, কাল তা থিতিয়ে আসছে, পরশু আবার পারদ চড়ছে অন্য কোনও দিকে। অনেকে ভাবছেন বিচ্ছিন্ন উত্তেজনা এ সব। কিন্তু এই গণবিধ্বংসী হুঙ্কারের প্রেক্ষিতে যে সব উত্তেজনা জন্ম নেয়, সেগুলো কেউ কারও থেকে বিচ্ছিন্ন নয় আসলে। প্রত্যেকটা আস্ফালন, প্রতিটা সঙ্ঘাতের আভাস একটা করে দেশলাই কাঠি। আগুনটা নিভতে চাইলেই তারা সক্রিয়া হচ্ছে একে একে। একটু একটু করে আগুনটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বারুদের পর্বতপ্রমাণ স্তূপটার দিকে। প্রলয়-ঘড়ির কাঁটাকে একটু একটু করে যেন ঠেলে দিচ্ছে গভীর অন্ধকার মধ্যরাতটার দিকে।

বিশ্ব মানবতা কিন্তু মধ্যরাতের দিকে এগোতে চায় না। যাঁরা জেনে বা না জেনেই অন্তিম মুহূর্তের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন পৃথিবীকে, বিশ্বমানবতার অবস্থান তাঁদের ঠিক বিপরীতেই। নোবেল কমিটিও এক স্পষ্ট বার্তায় বুঝিয়ে দিল, নোবেলের অবস্থান ডুমস্‌ডের দিকে নয়, ঠিক তার বিপরীতেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE