Advertisement
E-Paper

বিরাট শিশু

এই আশঙ্কার মূলে রহিয়াছে পারমাণবিক অস্ত্রের অন্তর্নিহিত ধর্ম। এই অস্ত্রের প্রয়োগ পৃথিবী আজ অবধি এক বারই দেখিয়াছে।

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:১৬

কাজী নজরুল ইসলাম গান বাঁধিয়াছিলেন, ‘খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে বিরাট শিশু আনমনে।’ ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কিম জং উনকে দেখিবার দুর্ভাগ্য তাঁহার হয় নাই। এই দুই রাষ্ট্রনায়ক বিশ্ব লইয়া আনমনে খেলিতেছেন, কিন্তু রূপকার্থে নহে, আক্ষরিক অর্থে। এবং সেই খেলা, আক্ষরিক অর্থেই, ভয়ংকর। তাহার কারণ, দুই নায়কের হাতেই রহিয়াছে এ কালের ব্রহ্মাস্ত্র, যাহার নাম পারমাণবিক বোমা। উত্তর কোরিয়ার নায়ক সরাসরি সেই অস্ত্র প্রয়োগের হুমকি দিতেছেন, থাকিয়া থাকিয়া দূর হইতে দূরতর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করিয়া জানাইতেছেন, মার্কিন ভূখণ্ড অবধি মারণাস্ত্র পৌঁছাইয়া দিতে তিনি প্রস্তুত। ডোনাল্ড ট্রাম্প তাহার জবাবে তীব্র হইতে তীব্রতর হুমকি দিয়া চলিয়াছেন, রাষ্ট্রপুঞ্জের সভায় দাঁড়াইয়া উত্তর কোরিয়াকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করিয়া দিবার চেতাবনিও জারি করিয়াছেন। আলোচনার পথে কিম জং উনকে নিরস্ত করিবার, অন্তত নিয়ন্ত্রিত করিবার সমস্ত সম্ভাবনা দ্রুত অন্তর্হিত হইতেছে। আশঙ্কা বাড়িতেছে। সর্বনাশের আশঙ্কা।

এই আশঙ্কার মূলে রহিয়াছে পারমাণবিক অস্ত্রের অন্তর্নিহিত ধর্ম। এই অস্ত্রের প্রয়োগ পৃথিবী আজ অবধি এক বারই দেখিয়াছে। সেই ১৯৪৫ সালে পারমাণবিক শক্তি ছিল মাত্র একটি দেশের হাতে। পরবর্তী ইতিহাস বিভিন্ন রাষ্ট্রের হাতে পারমাণবিক বোমা পৌঁছাইবার ইতিহাস। এবং ভারসাম্যের ইতিহাস। প্রধানত রুশ-মার্কিন ভারসাম্যের সেই লীলায় দীর্ঘ সময় কাটিয়াছে। পারমাণবিক অস্ত্রের বিপুল সম্ভার দুই তরফের ভাণ্ডারে থাকিলেও তাহা কখনও ব্যবহৃত হয় নাই। ‘কিউবা সংকট’-এর কিনারা-বিচরণের লগ্নটিকে বাদ দিলে বলা চলে, সেই অস্ত্র ব্যবহারের প্রত্যক্ষ সম্ভাবনাও বিরল ছিল। এই অভিজ্ঞতা ক্রমে একটি তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠিত এবং প্রবল করিয়া তোলে। তাহার নাম ‘ডেটারেন্স’ বা (আশঙ্কাজনিত) নিবারণ। অর্থাৎ, এক রাষ্ট্র জানে, সে ব্রহ্মাস্ত্র প্রয়োগ করিলে অন্য রাষ্ট্রও তাহা প্রতিপ্রয়োগ করিবে। সুতরাং, পাটকেল খাইবার আশঙ্কায় কোনও রাষ্ট্রই ঢিল ছুড়িবে না। এই তত্ত্ব আজ অবধি বাস্তবে সফল হইয়াছে। হিরোশিমা এবং নাগাসাকির পরে পারমাণবিক অস্ত্র তৃতীয় বার প্রযুক্ত হয় নাই।

যাহা হয় নাই, তাহা হইবে না— এমন ভরসা বুদ্ধির লক্ষণ নহে। বিশ্ব রাজনীতির যে কাঠামোয় পারমাণবিক অস্ত্র শক্তির ভারসাম্য রক্ষায় কাজে লাগিয়াছিল, সেই কাঠামো এখন অতীত। নিবারণ-তত্ত্বের মূল শর্ত ছিল নিশ্চয়তা। কোন রাষ্ট্র কোন পরিস্থিতিতে কী করিতে পারে, তাহার একটি মোটের উপর নিশ্চিত ছক না থাকিলে এই তত্ত্ব কাজ করিতে পারে না। সেই নিশ্চিতি আর নাই। অনিশ্চয়তাই নূতন বিশ্বের চরিত্রধর্ম। কিম জং উন কোন পরিস্থিতিতে কী করিবেন, তাহা পুরানো বিশ্বের নিয়ম মানিয়া নির্ধারণ করা অসম্ভব। ইহা কেবল তাঁহার ব্যক্তিগত চরিত্রের বিষয় নহে, সামগ্রিক পরিস্থিতির প্রশ্ন। এই বাস্তবকে বুঝিয়া তাঁহার মোকাবিলা করাই যথার্থ কূটনীতির দায়িত্ব। ডোনাল্ড ট্রাম্প তেমন কূটনীতিতে অপারগ। তিনি কূটনীতির মর্ম আদৌ বোঝেন বলিয়া আজ অবধি কোনও সংকেত দেন নাই। বস্তুত, তাঁহার অজ্ঞ অহংকারই উত্তর কোরিয়ার বিপজ্জনকতাকে এক অস্বাভাবিক মাত্রা দিয়াছে। দুই শিশুর খেলায় বিশ্বপৃথিবী সর্বনাশের কিনারায়। আক্ষরিক অর্থেই।

Donald Trump Kim jong un US South Korea
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy