Advertisement
E-Paper

কাহার পুরস্কার

এহ বাহ্য, আগে কহ আর, বলিলে অবশ্য সংযুক্ত আরব আমিরশাহি বিবিধ কৃতিত্ব দেখাইতে পারে। প্রতিবেশী দেশ সৌদি আরবে নারীরা গাড়ি চালাইবার ‘ঐতিহাসিক’ অধিকার লাভ করিয়াছেন মাত্র গত বছর, আমিরশাহির নারীদের এই অধিকার বহু দিন করায়ত্ত।

শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০০

সংযুক্ত আরব আমিরশাহির ‘লিঙ্গসাম্য সূচক’ পুরস্কারমঞ্চের দৃশ্য দেখিয়া বিশ্ব হাসিয়া আকুল। দুবাই মিডিয়া অফিস পুরস্কার প্রদানের কয়েকটি ছবি টুইট করিয়াছিল, সবগুলিতেই দেখা যাইতেছে, পুরস্কারদাতা ও গ্রহীতা, সকলেই পুরুষ। কর্মস্থলে নারীদের সমান অধিকার সমর্থন বা তাহা অর্জনের লক্ষ্যে উপযুক্ত পদক্ষেপ করিয়া পুরস্কার পাইলেন যাঁহারা, তাঁহাদের মধ্যে দূরবিন দিয়া খুঁজিয়া এক জন নারীকেও দেখা যাইল না! সংবাদমাধ্যমে ইহা খবর হইয়াছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যঙ্গ-মন্তব্যের বান ডাকিয়াছে। কেহ লিখিয়াছেন, ইহাকে কি রগড় বলিব, না প্যারডি! কাহারও প্রশ্ন, প্রশাসন কি নারীদের আমন্ত্রণ জানাইতে ভুলিয়া গিয়াছিল? কেহ ছদ্ম-বিস্ময়ে বিদ্রুপবাণ ছুড়িয়াছেন, অহো কী বৈচিত্র দেখিলাম, শ্বেতাম্বর পুরুষদিগের মধ্যে এক জন ধূসর বস্ত্র পরিয়াছেন! পরিস্থিতি বেগতিক দেখিয়া প্রশাসন তড়িঘড়ি টুইট করিয়াছে, আমিরশাহির নারীদের সাফল্যে আমরা গর্বিত, দেশের ভবিষ্যৎ গড়িয়া তুলিতে তাঁহাদের ভূমিকাই মুখ্য!

এহ বাহ্য, আগে কহ আর, বলিলে অবশ্য সংযুক্ত আরব আমিরশাহি বিবিধ কৃতিত্ব দেখাইতে পারে। প্রতিবেশী দেশ সৌদি আরবে নারীরা গাড়ি চালাইবার ‘ঐতিহাসিক’ অধিকার লাভ করিয়াছেন মাত্র গত বছর, আমিরশাহির নারীদের এই অধিকার বহু দিন করায়ত্ত। বস্তুত আরব দেশগুলির মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির নারীদের উপস্থিতি ও কৃতিই সমাজ-পরিসরে সর্বাপেক্ষা উজ্জ্বল। লিঙ্গসাম্য অর্জনের পথে এই দৃষ্টান্তগুলি নিঃসন্দেহে প্রশংসার্হ। কিন্তু সেই শংসার দাবিদার হিসাবে পুরস্কার গ্রহণ করিতে যখন মঞ্চে কেবল পুরুষদের উপস্থিতিই চোখে পড়ে, তখন প্রশ্ন জাগে, নারীদের হইয়া কথা বলিবার, কাজ করিবার অধিকারও কি তাহা হইলে পুরুষেরই? ইহাও কি এক রূপান্তরিত বা নব্য পুরুষতন্ত্র নহে? নারী, দলিত, জনজাতি বা অপরাপর গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ই হউক, প্রতিনিধিত্বের প্রসঙ্গে ‘আমার হইয়া কে বলিতেছেন’ প্রশ্নটি অনিবার্য আসিয়া পড়ে। অপরের মতামতই কি আমার বক্তব্যের সূচক? না কি, আমার কথাটি আমি সর্বসমক্ষে বলিতে পারিলেই তাহা প্রকৃত অর্থে বলা হইল? নারীরা গৃহকোণে পড়িয়া আছেন এবং পুরুষেরা নারীদের হইয়া বলিতেছেন, ইহা নিশ্চয়ই অগ্রগতির পরিচায়ক, কিন্তু যখন বিশ্ব দেখিতে পাইবে যে নারী নিজেই বাহিরে আসিয়া নিজের কথা বলিতেছেন, তখনই প্রকৃত লিঙ্গসাম্য অর্জনের পথ সুগম হইবে। প্রতিনিধিত্ব কে করিতেছেন তাহা চোখে দেখিতে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির পৌরুষদৃপ্ত পুরস্কারমঞ্চ এই কারণেই দৃষ্টিকটু।

এই ঘটনা হইতে শিখিতে পারে ভারতও। লিঙ্গসাম্যে বহুলাংশে আগাইয়া আছি, বলিয়া কলার তুলিলেও ভারতের সমাজ এবং রাজনীতিতে নারীদের প্রতিনিধিত্ব অত্যন্ত নগণ্য। কংগ্রেস বা সিপিএমের ন্যায় দলগুলি সময়ে সময়ে তাহা লইয়া আত্মসমালোচনাও করিয়াছে। কাজের কাজ কিছু হয় নাই। আসল কথা, সমাজব্যবস্থায় বা রাজনীতিতে যে প্রক্রিয়া সক্রিয় থাকিলে নারী কর্মী হইতে নেত্রী সকলের উত্থান হইতে পারে, তাহা এই দেশে নিতান্ত নিষ্ক্রিয় বা অনুপস্থিত। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বহু পথ অতিক্রম করা বাকি থাকিতে পারে, কিন্তু ভারতও গন্তব্যে পৌঁছাইয়াছে কি?

Gender Equality Award UAE United Arab Emirates
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy