Advertisement
E-Paper

নিধিরাম

পটেল জানাইয়াছেন, দেশ জুড়িয়া হরেক ব্যাঙ্কের এত শাখা, তাহার সব কয়টির উপর নজরদারি করা অসম্ভব।

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৮ ০১:১৮

বেচারা’র ভূমিকায় উর্জিত পটেলকে দিব্য মানায়। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর হওয়া ইস্তক তিনি প্রধানত সেই ভূমিকাতেই অভিনয় করিতেছেন। ডিমনিটাইজ়েশনের পর যে কথাটি তিনি মুখে বলেন নাই, হাবেভাবে প্রকাশ করিয়াছিলেন, নীরব মোদী-কাণ্ডে তাহা বলিয়াই ফেলিলেন। জানাইলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে তছরুপ ঠেকাইবার ক্ষেত্রে তিনি বড় জোর নিধিরাম সর্দার। ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান নিয়োগের অধিকার হইতে বোর্ড গঠন বা প্রয়োজনে তাঁহাদের তলব করা, কোনও ক্ষমতাই যখন রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের হাতে নাই, তখন তাঁহারা চুরি ঠেকাইবেন কোন অস্ত্রে? কথাটি উড়াইয়া দেওয়ার নহে, আবার বিনা প্রশ্নে বিশ্বাস করিবারও নহে। সত্য, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে রাশ মূলত সরকারের হাতে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক চোখ রাঙাইতে পারে, কিন্তু কোনও ব্যবস্থা করিবার ক্ষমতা তাহাদের বিশেষ নাই। নীরব-কেলেঙ্কারির ক্ষেত্রে দায়টি অবশ্য ব্যাঙ্ককেই হজম করিতে হইয়াছিল। অরুণ জেটলি যখন সরকারের ঘাড় হইতে দায়িত্ব ঝাড়িয়া অন্যদের— সেই তালিকায় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কও বিলক্ষণ ছিল— উপর চাপাইয়া দিয়াছিলেন, পটেল বিশেষ উচ্চবাচ্য করেন নাই। এখন তিনি জানাইয়াছেন, তুলনায় বেসরকারি ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ক্ষমতা অনেক বেশি। তাহাই যদি সত্য হয়, তবে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের কেলেঙ্কারিটি ঘটিল কোন পথে? যে দুর্নীতির ধাক্কায় শেষ অবধি চন্দা কোছরকে ছুটিতে যাইতে হইল, ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও পটেল তাহা ঠেকাইতে পারিলেন না কেন? বেসরকারি ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক যে ক্ষমতার অধিকারী, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রেও যদি সমতুল ক্ষমতা মিলে, ব্যর্থতার আখ্যানটি অপরিবর্তিতই থাকিবে না তো?

কেন পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের তছরুপ ঠেকানো সম্ভব হয় নাই, সেই প্রশ্নের উত্তরে পটেল যে অজুহাত দিয়াছেন, তাহাতে এই আশঙ্কাটি প্রকটতর হয়। পটেল জানাইয়াছেন, দেশ জুড়িয়া হরেক ব্যাঙ্কের এত শাখা, তাহার সব কয়টির উপর নজরদারি করা অসম্ভব। দেশের ‘প্রধান চৌকিদার’ এই গোত্রের কথা বলিলে হজম করিতে অসুবিধা হইত না— তাঁহার কুযুক্তিতে দেশবাসী অভ্যস্ত হইয়া উঠিয়াছে। কিন্তু, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রধানের মুখে কথাগুলি বেখাপ্পা ঠেকে। সব শাখায় নজর রাখিবার দায়িত্ব কেহ তাঁহাদের ঘাড়ে চাপায় নাই। কিন্তু, যাহাতে নজরদারি হয়, প্রতিটি ব্যাঙ্ক যাহাতে নিজের আর্থিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সতর্ক থাকে, তেমন ব্যবস্থা গড়িয়া তুলিবার দায়িত্বটি তিনি অস্বীকার করেন কোন যুক্তিতে? দায় যে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কেরও, এই কথাটি সম্প্রতি আরও এক জন স্মরণ করাইয়া দিয়াছেন। তাঁহার নাম ওয়াই বেণুগোপাল রেড্ডি। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের শীর্ষপদে তিনি উর্জিত পটেলের পূর্বসূরি।

যে কথাটি পটেল বলিতে পারেন নাই— এবং পারিবেন না জানিয়াই তিনি ‘বেচারা’-র ভূমিকাটিকে আঁক়়ড়াইয়া ধরিয়াছেন— তাহা হইল, প্রশ্নটি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের হাতে ক্ষমতার তারতম্যের নহে, প্রশ্ন রাজনৈতিক নেতৃত্বের অঙ্গুলিহেলনকে অস্বীকার করিতে পারা অথবা না পারার। দুর্জনে বলিবে, নরেন্দ্র মোদী বা অন্য কোনও ক্ষমতাধরের অঙ্গুলি নড়িলে তাহার ইশারা না মানিয়া পটেলের উপায় নাই— রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের শীর্ষপদপ্রাপ্তির কৃতজ্ঞতাবোধ তাঁহার হাত বাঁধিয়া রাখিয়াছে। ফলে, ভারতের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় সাঙাততন্ত্রের অবারিত দ্বার। যে নীরব মোদী প্রধানমন্ত্রীর সহিত বিদেশ সফরে যান, প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বৃত্তে যাঁহার ছবি থাকে, তাঁহার উপরোধ ঠেলিতে পারে, কোন ব্যাঙ্কের সাধ্য? দুর্জনে বলিবে, তাঁহার চুরির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করিতে পারে, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কেরও সেই ক্ষমতা নাই। ফলে, নিধিরাম সর্দারের ভেকটিই বাঁচোয়া। ক্ষমতাহীন হইবার লজ্জাটি তো ২০১৬-র নভেম্বরেই আরব সাগরের জলে ভাসিয়া গিয়াছে।

Urjit Patel RBI Money Fraud
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy