Advertisement
E-Paper

চেতনা ও বানর

বিতর্কটি দুই অর্থে চেতনা সংক্রান্ত। প্রথম, নারুতো কি জানিত, সে একটি নিজস্বী তুলিতেছে? কোনও বানরের পক্ষে কি সেই কথাটি জানা সম্ভব? অনুমান করা চলে, প্রশ্নটির উত্তর নেতিবাচক।

শেষ আপডেট: ০২ মে ২০১৮ ০০:৫৪

একটি প্রশ্নে বিপুল মতানৈক্য ঘটিয়াছিল দুই নোবেলজয়ীর— অ্যালবার্ট আইনস্টাইন ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। কবির মতে, পান্না তখনই সবুজ হইয়া উঠিতে পারে, যখন তাহা ‘আমার’ চেতনার রঙে রঞ্জিত হয়। অর্থাৎ, এই মহাবিশ্ব দর্শক-অপেক্ষ। মানুষ দেখিতেছে, অনুভব করিতেছে বলিয়াই তাহার অস্তিত্ব, মানুষের চেতনা না থাকিলে এই সৃষ্টিও নাই। বিজ্ঞানী এই মত মানিতে নারাজ ছিলেন। তাঁহার অবস্থান ছিল, দর্শকের চেতনায় প্রতিফলিত হউক বা না হউক, যাহার অস্তিত্ব আছে, তাহার আছে। অর্থাৎ, অস্তিত্ব দর্শক-নিরপেক্ষ, কাহারও অনুভবে ধরা না প়ড়িলেও তাহার ইতরবিশেষ হয় না। কবি ও বিজ্ঞানীর এই দ্বন্দ্বের কেন্দ্রে রহিয়াছে ‘চেতনা’-র ধারণাটি। নারুতো নামক সেলেবেস ক্রেস্টেড ম্যাকাককে সেই তর্কের আঙিনায় টানিয়া আনিলে মন্দ হয় না। প্রায় এক দশক কাল ধরিয়া তর্ক চলিতেছে, ইন্দোনেশিয়ার জঙ্গলের বিপন্নপ্রায় প্রজাতির এই বানরটি যে নিজস্বী তুলিয়াছিল, তাহার মেধাস্বত্ব নারুতোর হইতে পারে কি না। ২০১৬ সালে মার্কিন আদালত রায় দিয়াছিল, মেধাস্বত্বে মানুষের অধিকার, মনুষ্যেতর প্রাণীর নহে। সম্প্রতি উচ্চতর আদালত সেই রায়ের পক্ষেই মত দিল। ছবিটি যাঁহার ক্যামেরায় তোলা, সেই বন্যপ্রাণ চিত্রগ্রাহক ডেভিড জে স্লেটার পূর্বেই জানাইয়াছিলেন, ছবিটির বাণিজ্যিক ব্যবহারে যে উপার্জন হইবে, তাহার সিকি ভাগ তিনি নারুতোর প্রজাতির বানরের জন্য দিবেন। সেই ব্যবস্থাই বহাল থাকিতেছে।

বিতর্কটি দুই অর্থে চেতনা সংক্রান্ত। প্রথম, নারুতো কি জানিত, সে একটি নিজস্বী তুলিতেছে? কোনও বানরের পক্ষে কি সেই কথাটি জানা সম্ভব? অনুমান করা চলে, প্রশ্নটির উত্তর নেতিবাচক। অর্থাৎ, একটি ক্যামেরা হাতে পাইবার পর নারুতো যে কাজগুলি করিয়াছিল, সমষ্টিগত ভাবে তাহা যে একটি ছবি তুলিবার প্রক্রিয়া, তাহা না জানিয়াই নারুতো ছবিটি তুলিয়া ফেলিয়াছিল। অর্থাৎ, বানরটির চেতনায় ছবি বা নিজস্বী নামক বস্তুর অস্তিত্ব নাই। আইনের ভাষ্য বলে, তাঁহার দ্বারা অপরাধ সংঘটিত হইতেছে, এই কথাটি বুঝিবার ন্যায় মানসিক সামর্থ্য যদি কোনও ব্যক্তির না থাকে, তবে তাঁহাকে ‘অপরাধী’ সাব্যস্ত করা চলে না। অর্থাৎ, যে কাজটি করা হইতেছে, সচেতন ভাবে তাহা করিতে চাওয়া, অথবা অন্য কোনও কাজের সূত্রে নূতন কোনও কাজ করিয়া ফেলিলেও তাহার স্বরূপ সম্বন্ধে সচেতনতা সেই কাজের নৈতিক মালিকানা দাবি করিবার শর্ত। নারুতো সেই শর্ত পূরণ করিয়াছিল, এমন দাবি করা কঠিন। দ্বিতীয় প্রশ্ন, মেধাস্বত্ব বস্তুটির ব্যবহার কি কোনও মনুষ্যেতর প্রাণীর পক্ষে জানা সম্ভব? অর্থাৎ, ছবিটি ব্যবহার করিতে দেওয়া বা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত, তাহার বিনিময়মূল্য স্থির করা ইত্যাদি কাজ নারুতোর পক্ষে অসম্ভব। যে প্রতিষ্ঠান তাহার মেধাস্বত্বের দাবিতে মামলা লড়িতেছে, তাহারাও এই অসম্ভাব্যতার কথা জানে। ফলে, নারুতোর তরফে সংস্থাটির দাবি শুধু ছবিবাবদ অর্জিত অর্থের। নারুতোর হইয়া প্রতিষ্ঠানটিই সেই অর্থ গ্রহণ করিতে চাহে। দাবিটি আদালতের ধোপে টেকে নাই। যেখানে মেধাস্বত্ব কথাটির মধ্যে এজেন্সি-র প্রশ্ন নিহিত, এবং যাহার সহিত প্রত্যক্ষ যোগ চেতনার, বানরের পক্ষে সেই মামলায় জয়ী হওয়া কঠিন।

Intellectual property Mankind Naruto
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy