Advertisement
E-Paper

সুবাতাস নহে

প্রথম বারের জন্য প্রকাশ্যত জঙ্গি জাতীয়তাবাদী দল ফ্রিডম পার্টি কেন্দ্রীয় আইনসভায় ঢুকিল। ভোট যাঁহারা দিলেন, তাঁহাদের অধিকাংশ তরুণ, প্রথম বারের ভোটার। এই নূতন উদীয়মান জার্মানি উদার নহে। সহনশীল, উন্নতিকামী নহে।

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:১০

আট শতাংশ কি অঙ্কের হিসাবে কম? না কি বেশি? দুনিয়ায় সবই যে আপেক্ষিক, তাহার সাক্ষাৎ প্রমাণ এ বারের জার্মানির জাতীয় নির্বাচনের অঙ্ক। বর্তমান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল আবার সফল। তিনি চতুর্থ বার রাষ্ট্রের শীর্ষপদে আসীন হইতে চলিয়াছেন। কিন্তু তাঁহার ভোটের পরিমাণ চার বছর আগের অপেক্ষা আট শতাংশ কমিয়াছে। আসনসংখ্যাও কমিয়াছে পাঁচ শতাংশ। তর্ক উঠিতেই পারে, যে নেতা বার বার চার বার ক্ষমতাসীন হন, তাঁহার ক্ষেত্রে আট শতাংশ ভোটহ্রাস এমন কী বেশি ব্যাপার? স্থিতাবস্থাবিরোধিতা বলিয়াও তো একটি কথা আছে! ঠিক। অথচ সেই একই অঙ্ক যেন একেবারে অন্য রকম প্রতিভাত হয় যখন দেখা যায় চূড়ান্ত দক্ষিণপন্থী জাতীয়তাবাদী পার্টি এএফডি বা ফ্রিডম পার্টি এই প্রথম তৃতীয় স্থান অধিকার করিয়া জাতীয় আইনসভার নিম্নকক্ষ বুন্ডেস্টাগ-এ প্রবেশ করিল। ২০১৩ সালে তাহারা পাঁচ শতাংশও ভোট পায় নাই, এ বারে তাহাদের জন্য তেরো শতাংশের বেশি ভোট। অর্ধ শতাব্দীতে এই প্রথম একটি দক্ষিণপন্থী তথা উগ্র-জাতীয়তাবাদী দল বুন্ডেস্টাগ-এ আসন পাইল। মের্কেলের দল সিডিইউ যে কেবল সমর্থন হারাইয়াছে তাহাই নহে, হাতছাড়া সমর্থন জড়ো হইয়াছে তাঁহার সম্পূর্ণ বিপরীত মতাদর্শের দলের ভাণ্ডারে— এই গ্লানি নিশ্চয় জয়ের মুহূর্তেও মের্কেলকে কোনও স্বস্তি দিতেছে না। জয়ী হইয়াও তিনি সুখী নহেন।

প্রথম বারের জন্য প্রকাশ্যত জঙ্গি জাতীয়তাবাদী দল ফ্রিডম পার্টি কেন্দ্রীয় আইনসভায় ঢুকিল। ভোট যাঁহারা দিলেন, তাঁহাদের অধিকাংশ তরুণ, প্রথম বারের ভোটার। এই নূতন উদীয়মান জার্মানি উদার নহে। সহনশীল, উন্নতিকামী নহে। নূতন জার্মানির এক বিরাট অংশ চাহে, জার্মানি আবার জার্মানদেরই জন্য হউক, উদ্বাস্তু, অভিবাসী, বহিরাগত ইত্যাদি হটাইয়া দেশ তাহার পুরাতন ‘আর্য’ গরিমায় ফিরুক। স্বভাবতই এই আহ্বান দুনিয়ায় একটি শীতল শিহরন তুলিতেছে, এক ভয়াবহ ঐতিহ্য স্মরণ করাইয়া দিতেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে দীর্ঘ এই সাত দশকে যে সেই ঐতিহ্যের প্রকাশ দেখা যায় নাই তাহা নহে, কিন্তু এত দিন সেই প্রকাশ ছিল প্রান্তিক। এ বার তাহা মূলস্রোতে। ইতিহাসের পতাকা বহন করিয়া। ‘ইতিহাস’ কথাটিকে বাদ দেওয়া যাইতেছে না, কেননা এই পার্টির প্রথম দুই নেতা, যাঁহারা ১৯৫৬ সাল হইতে ১৯৭৮ সাল অবধি শীর্ষে ছিলেন, তাঁহাদের প্রাক্তন পরিচয়— এসএস অফিসার, অর্থাৎ সাক্ষাৎ হিটলারের নাৎসি পার্টির হর্তাকর্তা। ইহুদিনিধন কর্মযজ্ঞের অনুতাপহীন হোতা।

নিয়ো-নাৎসি বলিয়া অভিহিত এই দলের উত্থানকে অবশ্য খুব নূতন সংবাদ বলা যাইবে না। গোটা মধ্য ও পূর্ব ইউরোপ জুড়িয়া এখন রক্ষণশীলতার ঢেউ দুর্বার, যাহাকে বলা হইতেছে ‘গ্যালপিং পপুলিজম’, জনমনোরঞ্জনের রাজনীতির প্রবল প্রসার। সিরীয় উদ্বাস্তুদের সুদীর্ঘ, অদম্য, প্রায় অনিঃশেষ প্রবেশ-মিছিলের সহিত জার্মানি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম এই সকল দেশের অভ্যন্তরীণ অভিবাসী-বিমুখতার রাজনীতি অনেক গুণ প্রবল হইয়া উঠিল, তাহার সহিত যুক্ত হইল ইসলামবিরোধিতার ‘মহান’ কার্যক্রম। এখন গোটা ইউরোপ জুড়িয়া পলিটিকাল ইসলামকে ঠেকাইবার যে হিড়িক, তাহাকে সন্ত্রাসবিরোধিতা দিয়া ব্যাখ্যা করা মুশকিল, বরং ইসলামোফোবিয়া বলিলেই তাহার যথার্থ চরিত্র বোধগম্য হয়। তাহার মধ্যেও ফ্রান্সে যে লিবারাল রাজনীতি খানিকটা আত্মরক্ষণ করিতে সক্ষম হইল, এবং জার্মানি সেই কাজে ব্যর্থ হইল, তাহার প্রধান কারণ নিশ্চয় উদ্বাস্তু-পুনর্বাসনের প্রকল্পে চ্যান্সেলর মের্কেলের তৎপর নেতৃত্ব। জার্মান নির্বাচনের বার্তা: ইউরোপে শীতকাল আসিতেছে, কঠিন নির্দয় শপথ লইয়া। এ বড় সুখের সময় নহে।

Angela Merkel German Election 2017 আঙ্গেলা মের্কেল
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy