Advertisement
E-Paper

পশ্চিমবঙ্গ মডেল 

রাজ্যে নিরানব্বই লক্ষ নূতন কর্মসংস্থান, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে দ্রুত বৃদ্ধি, সংখ্যালঘুর আর্থিক উন্নতির দাবি লইয়া সংশয় থাকিতে পারে। কিন্তু তাহা অন্য তর্ক। ইস্তাহার বাজেট নথি নহে, সরকারি দফতরের বার্ষিক রিপোর্টও নহে।

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৪২

নরেন্দ্র মোদী গুজরাতকে ‘মডেল’ করিয়াছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করিয়াছেন পশ্চিমবঙ্গকে। ধর্মনিরপেক্ষতা, কর্মসংস্থান, সংখ্যালঘু-দলিত-আদিবাসীর সুরক্ষা, ভাষাবৈচিত্রের স্বীকৃতি, এই সকল বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের পথ ধরিয়াই উন্নয়ন আসিবে ভারতের সর্বত্র। এমনই ঘোষণা করিয়াছে তৃণমূলের ইস্তাহার। কন্যাশ্রী প্রকল্প সারা ভারতে বিস্তৃত হইবে, দেশের সকল মহকুমায় হইবে সুপার-স্পেশালিটি হাসপাতাল, ‘নিজ ভূমি নিজ গৃহ’-র অনুরূপ প্রকল্পের দ্বারা দেশের আবাসন সমস্যার সমাধান হইবে। এমনকি কালিম্পং, মিরিক দার্জিলিঙের উন্নয়নের উদাহরণ সম্মুখে রাখিয়া দেশের সমস্ত পাহাড়ি অঞ্চলের উন্নয়ন হইবে। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের পূর্বে তৃণমূল ইস্তাহার বলিয়াছিল, কেন্দ্র প্রধানত বিদেশনীতি, প্রতিরক্ষায় মনোনিবেশ করিলেই ভাল। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো মানিয়া ক্ষমতা বাড়াইতে হইবে রাজ্যের। ২০১৯ সালের তৃণমূল ইস্তাহার বলিতেছে, কেন্দ্রের ভূমিকা হইবে ‘ইতিবাচক এবং ঐক্যমূলক’। পেট্রোলিয়াম মজুত নীতি, কাশ্মীরে শান্তিপ্রক্রিয়া, বৈদেশিক বাণিজ্যে শুল্কনীতি, এই প্রসঙ্গগুলি তৃণমূল ইস্তাহারে এই বার স্থান পাইল। আশ্চর্য কী? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল আজ প্রধান বিরোধী দলগুলির অন্যতম। ভোট-পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তৃণমূল নেত্রীর নির্ণায়ক ভূমিকা থাকিতে পারে। দলের ইস্তাহারেও সেই প্রত্যয় দৃশ্যমান।

তৃণমূল সরকার বাস্তবিক কতটা সফল? রাজ্যে নিরানব্বই লক্ষ নূতন কর্মসংস্থান, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে দ্রুত বৃদ্ধি, সংখ্যালঘুর আর্থিক উন্নতির দাবি লইয়া সংশয় থাকিতে পারে। কিন্তু তাহা অন্য তর্ক। ইস্তাহার বাজেট নথি নহে, সরকারি দফতরের বার্ষিক রিপোর্টও নহে। রাজনৈতিক আদর্শ ও উন্নয়নের নীতির নিরিখে দলের অবস্থান ও তাহার ভিত্তিতে বিবিধ সঙ্কট নিরসনে প্রস্তাবিত কর্মসূচি বিবৃত করে ইস্তাহার। তৃণমূলের ইস্তাহার সেই গোত্রের নহে। ইহা হইতে মুক্ত বাজার কিংবা কর বসাইবার নীতি সম্পর্কে তৃণমূলের দৃষ্টিভঙ্গি মিলিবে না। বরং মিলিবে সরল স্বীকারোক্তি: ভারতের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে সম্যক ভাবে বুঝিবার জন্য বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং অন্য বিশেষজ্ঞদের অভিমত লইয়া কর্মসূচি ঠিক করিবে দল। ভোটদাতা ভাবিতে পারেন, নির্বাচনের পূর্বেই কি অর্থনৈতিক কর্মসূচি নির্ধারণ করিতে হইবে না? মতাদর্শ-ভিত্তিক দল তাহাই করিয়া থাকে। কিন্তু রাজ্যরাজনীতি হইতে উঠিয়া আসা দলগুলি সর্বদা সেই পরিচিত নকশা মানিয়া চলে না।

তৃণমূলের নৈতিক ভিত্তি তত্ত্বে নহে, নাগরিক তথা সমর্থকের চাহিদা মিটাইবার ক্ষমতায়। তাত্ত্বিক কাঠামো না থাকিবার জন্য উন্নয়নের নানা প্রশ্নে দলের নীতিগত অবস্থান অস্থির, অনির্দিষ্ট বলিয়া অস্বস্তি জাগিতে পারে। কিন্তু কাঠামো না থাকিবার ফলে দলীয় নীতি নমনীয় থাকিতে পারে। রাজনীতিতে তাহার মূল্য কম নহে। ২০১৪-র ইস্তাহারে খুচরা ব্যবসায়ে এবং বিমাক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগের প্রতিবাদ করিয়াছিল তৃণমূল। ২০১৯-এর ইস্তাহারে তাহার কোনও উল্লেখ নাই। পূর্বে বেসরকারি ও সরকারি অংশীদারিকে (পিপিপি মডেল) কর্মপন্থা হিসাবে ঘোষণা করিয়াছিল। সাম্প্রতিক ইস্তাহার বলিতেছে, এই ধরনের ব্যবসায় লাভ আসে নাই, তাই তেমন প্রস্তাবের সতর্ক বিচার প্রয়োজন। সম্ভবত এই নমনীয়তা বজায় রাখিতেই ‘অধিকার’ শব্দটি উচ্চারিত হয় নাই তৃণমূল ইস্তাহারে। প্রসঙ্গত, সিপিআই(এম) ইস্তাহার বলিতেছে, ‘কাজের অধিকার’ আনিবে সংবিধানে। তৃণমূল ইস্তাহার কর্মসৃষ্টির বিবিধ প্রকল্পের কথা বলিয়াছে, কিন্তু কর্মের অধিকার কিংবা ন্যূনতম বেতনের অধিকারের কথা বলে নাই। কারণ নাগরিকের অধিকার সরকারের সীমা বাঁধিয়া দেয়। সরকার সর্বশক্তিতে নাগরিকের উন্নয়ন করিবে, তাহার শক্তি নাগরিকের অধিকার দ্বারাও সীমিত হইবে না। ইহাই তৃণমূল কংগ্রেসের দর্শন।

Lok Sabha Election 2019 TMC Election Manifesto
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy