Advertisement
E-Paper

রোগীর অমর্যাদা

কিন্তু উত্তর যদি হয় ‘না’, তখন অনুসন্ধান করিতে হইবে, যে রোগীর চিকিৎসা নিম্নস্তরের হাসপাতালে সম্ভব, কেন তাহাকে মেডিক্যাল কলেজে পাঠাইতেছেন চিকিৎসকরা? যদি শয্যা, চিকিৎসক, পরিকাঠামোর অপ্রতুলতার জন্য রোগী ‘রেফার’ হইয়া থাকে, তাহা হইলে জেলায় চিকিৎসার উন্নতিতে আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন।

শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০০
যন্ত্রণা: এসএসকেএম হাসপাতাল চত্বরে চিকিৎসার অপেক্ষায় বাদল বন্দ্যোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।

যন্ত্রণা: এসএসকেএম হাসপাতাল চত্বরে চিকিৎসার অপেক্ষায় বাদল বন্দ্যোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।

রোগীর দুর্ভোগ কি যাইবার নয়? বহু পথ অতিক্রম করিয়া যন্ত্রণাকাতর পরিজনকে কলিকাতায় আনিয়াও নিশ্চিন্ত হইতে পারেন না পরিজন। শয্যা নাই, চিকিৎসা মেলে না, রোগীর প্রাণসংশয় আরও ঘনাইয়া ওঠে। চুরাশি বৎসরের বৃদ্ধ মস্তিষ্কে আঘাত লইয়া তেরো ঘণ্টা অপেক্ষার পর অচিকিৎসিত ফিরিলেন বাড়িতে, ইহাই কি চিকিৎসার চিত্র? গ্রামের প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র হইতে শহরের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত চিকিৎসা-ব্যবস্থা তিনটি স্তরে বিন্যস্ত। নিয়ম— প্রয়োজনে রোগীকে এক স্তর হইতে অন্য স্তরের হাসপাতালে ‘রেফার’ করা হইবে। অতএব সারা রাজ্য হইতে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে রোগী আসিবেন, ইহাই প্রত্যাশিত। তবে বিধি বলিতেছে, যে সকল চিকিৎসা জেলায় সম্ভব নহে, সেই সকল ‘বিশেষ’ চিকিৎসা করাইতেই মেডিক্যাল কলেজে পাঠাইতে হইবে। নচেৎ চিকিৎসা হইবে জেলার হাসপাতালেই। কলিকাতায় অত্যধিক রোগী আসিলে প্রশ্ন করিতে হইবে, রেফার করিবার বিধি মানিয়া জেলা হইতে কি জটিল রোগীদেরই পাঠানো হয়? যদি উত্তর হয় ‘হ্যাঁ’ তবে বুঝিতে হইবে, মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার কিংবা হৃৎপিণ্ডে বাইপাস সার্জারির মতো বিশেষ চিকিৎসার যত চাহিদা, তত জোগান নাই। অতএব রোগীর স্বার্থে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে শয্যা ও চিকিৎসক বাড়াইতে হইবে।

কিন্তু উত্তর যদি হয় ‘না’, তখন অনুসন্ধান করিতে হইবে, যে রোগীর চিকিৎসা নিম্নস্তরের হাসপাতালে সম্ভব, কেন তাহাকে মেডিক্যাল কলেজে পাঠাইতেছেন চিকিৎসকরা? যদি শয্যা, চিকিৎসক, পরিকাঠামোর অপ্রতুলতার জন্য রোগী ‘রেফার’ হইয়া থাকে, তাহা হইলে জেলায় চিকিৎসার উন্নতিতে আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন। যদি নেহাত দায় এড়াইতে রোগী পাঠাইয়া দেন জেলার চিকিৎসকেরা, তবে অর্থব্যয় বৃথা। ‘রেফার’ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনিক নজরদারি প্রয়োজন। চিকিৎসার সুযোগ অপরিমিত হইতে পারে না, অতএব তাহার ব্যবহারে মনোযোগী হইতে হইবে। যদি অকারণ ‘রেফার’ করা রোগী শয্যা দখল করে, তবে জটিল চিকিৎসার রোগীদের স্থান অকুলান হইতে বাধ্য। কিন্তু এতগুলি সম্ভাবনার মধ্যে বাস্তবে কোনটি প্রধান— জটিল চিকিৎসার জোগান যথেষ্ট নহে, জেলায় চিকিৎসার পরিকাঠামো যথেষ্ট নাই, না কি জেলার চিকিৎসক যথেষ্ট তৎপর নহেন? আন্দাজে ইহার উত্তর খুঁজিলে ভুল হইবার সম্ভাবনা অধিক। প্রয়োজন সমীক্ষার। রাজ্যবাসী দেখিয়াছেন, অচিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুতে শোরগোল পড়িলে সেই কাজটি শুরু হয়, আবার অচিরেই বন্ধ হইয়া যায়। কখনও রেফার-বিধির কিছু পরিবর্তন হয়, কিন্তু তাহা বাস্তবায়িত হইল কি না, তাহাতে কতটুকু উন্নতি হইল, মূল্যায়ন হয় না। স্বাস্থ্য দফতরের এই গয়ংগচ্ছ ভাবটিই চিকিৎসার ব্যাধি।

সমীক্ষা না করিলে সমাধান নাই। তবে রোগীর দুর্ভোগ কমাইবার একটি উপায়, অচিকিৎসক কর্মীদের অধিক নিয়োগ। হাসপাতালে আগত রোগীকে যথাযথ বিভাগের সন্ধান দিতে, কোথায় কত শয্যা মিলিতে পারে সেই সংযোগ রাখিতে, প্রশিক্ষিত কর্মীই যথেষ্ট। তাহাতে চিকিৎসকের সময় বাঁচিবে, হাসপাতালে সুষ্ঠু প্রশাসনের সম্ভাবনা বাড়িবে। প্রশাসনিক কর্তাদের এখন রোগীর সহিত সম্পর্ক সামান্য। সেই চিত্রে পরিবর্তন চাই। রোগীর অবহেলা, অমর্যাদাও অপচিকিৎসা।

Suffer Treatment Hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy