বেশি দিন আগেকার কথা নয়। ব্লু হোয়েলের খবর পেয়ে সন্ত্রস্ত হয়েছিলাম আমরা। সে খবর মিলিয়ে যেতে না যেতে আবার এসে গিয়েছে মোমো চ্যালেঞ্জ। প্রায় একই ধরনের খেলা। কিশোর-কিশোরীদের আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়াই এদের লক্ষ্য। আর্জেন্টিনার এক কিশোরীর মৃত্যু মোমো চ্যালেঞ্জকে প্রচারমাধ্যমে এনে ফেলে। জাপানি শিল্পী মিদোরি হায়াশির একটি শিল্পকর্মের শরীরের উপরের অংশ মেয়ের মতো আর বাকিটা পাখির আদল— ভয়ঙ্কর মুখাকৃতির ওই অর্ধপাখি অর্ধমানব পুতুলটি হল মোমো। তাকে ঘিরে দুনিয়াময় অভিভাবকরা এখন চিন্তিত। মুশকিল হল, সাইবার-অপরাধ ক্রমে বাড়বে, এই রকম মারণ খেলাও সেই ফাঁক দিয়ে ঢুকতে থাকবে। তা হলে? শুধুমাত্র পুলিশ প্রশাসন ও সাইবার সেল-এর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকাই কি আতঙ্ক কাটানোর একমাত্র পথ?
ভাবার বিষয়। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, কৈশোরে ছেলেমেয়েদের এত রকম দৈহিক ও মানসিক পরিবর্তন হয় যে তারা কিছুটা দিশেহারা হয়ে পড়ে। মনোবিদ স্ট্যানলি হল এই বয়সের (বিশেষত এগারো থেকে চোদ্দো) ছেলেমেয়েদের বোঝানোর জন্য ‘ফ্ল্যাপার’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন, যার অর্থ, যে পাখির পাখনার পরিপূর্ণ বিকাশ হতে এখনও বাকি, কিন্তু বাসার মধ্যে থেকেই যে ওড়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে। বিজ্ঞানী হারলকের মতে, কৈশোরের সীমা বারো থেকে একুশ— এটা হল যৌন পরিণতির স্তর। এই স্তরে ছেলেমেয়েদের যুক্তি-শক্তির বিকাশ হলেও তাদের যুক্তি ঠিক পরিণত হয় না।
সব চেয়ে বড় কথা, এই বয়সে বিমূর্ত চিন্তনের ক্ষমতাও সবেমাত্র বিকশিত হতে শুরু করে। যুগপৎ তীব্র আনন্দ-অনুভূতি এবং বিমর্ষতা তাদের মনকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। আর তাই, লজ্জা, হীনম্মন্যতা, অপরাধবোধ, ভয়, কখনও বা আক্রমণাত্মক ভাব, এ ধরনের নানা আবেগ কিশোর মনকে নিয়ন্ত্রণ করে। ভুললে চলবে না যে এই স্তরেই ছেলেমেয়েরা শারীরিক পরিসরে পূর্ণ নারী ও পুরুষ হয়ে ওঠে, এবং সামাজিক দিক থেকে তার পূর্ণ স্বীকৃতি আদায় করতে চায়। প্রক্ষোভিক দিক থেকে এ সময়ে তাদের মধ্যে জায়গা করে নেয় উদ্বেগ (‘অ্যাংজ়াইটি’) এবং অন্তর্দ্বন্দ্ব (‘কনফ্লিক্ট’)। এ হল সেই মনস্তাত্ত্বিক ফাঁকের জায়গা, যেখানে সুপরিকল্পিত ভাবে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলে নানা মনোবিকলনের খেলা।