Advertisement
E-Paper

গণতন্ত্রের ফাঁকতালে

উদ্যোগটি অভিনব, সন্দেহ নাই। তাৎপর্যপূর্ণও বটে। শুধুমাত্র ঘর-গৃহস্থালির কাজ সম্পন্ন করাই নহে, নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করাটাও যে ‘ঘর’-এর মেয়ে-বৌদের কর্তব্য, ইহা বুঝাইতে রীতিমাফিক সরকারি প্রচার যথেষ্ট নহে।

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৮ ০০:৪২

ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামোটি বাহির হইতে যথেষ্টই মজবুত দেখায়। কিন্তু পৃথিবীর সেই বৃহত্তম গণতন্ত্রে মেয়েদের অবস্থানটি কোথায়, প্রশ্ন তুলিতে গেলেই বিস্তর ফাঁকও চোখে পড়িয়া যায়। স্বাধীনতার একাত্তর বৎসর পার করিয়াও প্রত্যক্ষ ভাবে গণতান্ত্রিক কর্মযজ্ঞে অংশগ্রহণ করিবার ক্ষেত্রে মেয়েরা পুরুষদের তুলনায় ঢের পিছনে। ভোটার তালিকায় নাম তোলা হইতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ, সর্বত্রই তাহাদের উপস্থিতির হার চোখে পড়িবার মতো কম। কিন্তু গণতন্ত্রে মেয়েদের যোগদান নিশ্চিত করিতে না পারিলে যে গণতন্ত্রের আসল উদ্দেশ্যটিই পূরণ হয় না, দেরিতে হইলেও তাহা উপলব্ধি করিয়াছে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর, পুরুলিয়া, কোচবিহারের মতো কিছু জেলা। সচেতনতা বৃদ্ধি করিতে তাই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসন ফুটবলকে ‘অস্ত্র’ করিয়াছে। মেয়েদের ফুটবল। সাড়াও মিলিয়াছে। ব্লক স্তরে প্রতিযোগিতায় প্রায় ৩৭টি মেয়েদের দল অংশ লইয়াছে।

উদ্যোগটি অভিনব, সন্দেহ নাই। তাৎপর্যপূর্ণও বটে। শুধুমাত্র ঘর-গৃহস্থালির কাজ সম্পন্ন করাই নহে, নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করাটাও যে ‘ঘর’-এর মেয়ে-বৌদের কর্তব্য, ইহা বুঝাইতে রীতিমাফিক সরকারি প্রচার যথেষ্ট নহে। তেমন প্রচেষ্টা পূর্বেও হইয়াছে। ব্যবধান মোছে নাই। বরং প্রয়োজন এমন কোনও জনপ্রিয় মাধ্যমের, যাহার মাধ্যমে মূল বার্তাটি সহজেই অনেকের কাছে পৌঁছাইয়া দেওয়া যায়। এই ক্ষেত্রে ফুটবলের জনপ্রিয়তাকে ব্যবহার করা এবং নির্বাচন কমিশনের ‘চলো খেলি, নাম তুলি’-র সহজ স্লোগানটির মধ্যে কৌশলী ছাপ রহিয়াছে। কিন্তু প্রশ্ন, ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করিলেই কি এই দীর্ঘ দিনের অ-গণতান্ত্রিক প্রবণতার অবসান ঘটিবে? সম্ভবত না। কারণ, ভোটে মেয়েদের অংশ লইতে না দিবার মূলে আছে নারীকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক করিয়া রাখিবার প্রচেষ্টা। যেখানে সরকারি সুযোগসুবিধাগুলি পরিবারের পুরুষদের কুক্ষিগত থাকিবে। মেয়ে-বৌরা তাহার ছিটেফোঁটা ভাগ পাইলেই যথেষ্ট। দীর্ঘলালিত চিন্তার এই জড়তা শুধুমাত্র কিছু ফুটবল ম্যাচ আর স্লোগান কাটাইতে পারে না। অভিজ্ঞতা বলে, প্রাক-নির্বাচন পর্বে সামাজিক কাজকর্ম, জনসংযোগ বহু গুণে বৃদ্ধি পায়। ইহার সমস্তটাই গণতন্ত্রের মহান ধারণায় অনুপ্রাণিত হইয়া নহে, বরং নিজ ভোটবাক্স মজবুত করিবার লক্ষ্যে। নির্বাচন শেষ হইলেই সেই কাজকর্মেরও প্রয়োজন ফুরায়। অভিজ্ঞতা বলে, এই উদ্যোগটিরও সেই পথেই যাইবার সম্ভবনা প্রবল।

উদ্যোগটি শেষ পর্যন্ত কোন পথে যাইবে, সেই প্রশ্ন সত্ত্বেও বলিতে হয়, মেয়েদের খেলার ব্যবস্থা করিবার ভাবনাটি সাধুবাদযোগ্য। ভারতের মতো দেশে মেয়েরা সব ক্ষেত্রেই অবহেলিত: তাহা ভোটার লিস্টে নাম তোলাই হউক, শিক্ষাই হউক কিংবা পুষ্টি। খেলার জগতেও মেয়েদের সুযোগ অতি সীমিত। খেলাধুলার জন্য প্রয়োজনীয় খাবার, অর্থ, প্রশিক্ষণ, এবং সরকারি সাহায্য, কিছুই মেয়েরা পায় না। এমনকি অনেক জায়গায় অনুশীলনের মাঠটুকুও তাহাদের জন্য বরাদ্দ করা হয় না। এমতাবস্থায় প্রশাসন প্রতিযোগিতার আয়োজন করিলে আশার সঞ্চার হয় বইকি! গণতন্ত্রে অংশগ্রহণ বাড়ুক না বাড়ুক, মেয়েদের খেলাধুলা ও স্বাস্থ্যচর্চার সুবিধা বর্ধনও কম কথা নয়!

Democracy Women Football
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy