Advertisement
E-Paper

রাজনীতির ঢাক

নূতন দেউলিয়া বিধি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। বাণিজ্যবান্ধব হইবার সূচকে বিশ্বের প্রথম একশত দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির পিছনে এই সংস্কারগুলির ভূমিকা প্রচুর।

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৭ ০০:০০

বিশ্ব ব্যাংকের ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ বা ‘বাণিজ্যবান্ধব হইবার সূচক’ লইয়া রাজনীতি করিবেন না, নরেন্দ্র মোদীদের এহেন পরামর্শ দেওয়ার বহুবিধ কারণ থাকিলেও মুখ খুলিয়া লাভ নাই। গুজরাত বিধানসভার নির্বাচনের পূর্বে নোটবাতিল আর জিএসটি লইয়া দল যখন নাজেহাল, তখন এহেন একটি হাতেগরম সংশাপত্র পাইয়াও তাঁহারা ফেলিয়া দিবেন, তাহা হয় না। যতখানি কৃতিত্ব বিজেপি সরকারের প্রাপ্য, তাহা দেওয়াই বিধেয়। ঋণ পাইবার বা কর প্রদানের সুবিধা, সহজে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া ইত্যাদির ক্ষেত্রে উন্নতি হইয়াছে। নূতন দেউলিয়া বিধি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। বাণিজ্যবান্ধব হইবার সূচকে বিশ্বের প্রথম একশত দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির পিছনে এই সংস্কারগুলির ভূমিকা প্রচুর। নরেন্দ্র মোদী কৃতিত্ব দাবি করিতেই পারেন। কিন্তু, সেই দাবিটিকে নির্বাচনী রাজনীতির অংশ করিয়া ফেলিলে ভুল হইবে। কারণ, এই সূচক অর্থনীতির যে অংশটুকুর কথা বলে, প্রকৃত অর্থনীতির মাপ তাহার অপেক্ষা অনেক বেশি। এবং, সূচকের সাফল্যের আলোয় অন্যান্য ব্যর্থতা ঢাকিবার চেষ্টা করিলে তাহা রাজনীতি হইতে পারে, কিন্তু অর্থনীতির পক্ষে তাহা আত্মঘাতী হইবে।

গত বৎসর জুন মাস হইতে এই বৎসরের জুন মাস অবধি সময়কাল এই সমীক্ষার বিবেচ্য ছিল। কিন্তু, যে প্রশ্নপত্রের ভিত্তিতে সমীক্ষাটি হইয়াছিল, তাহাতে নোটবাতিলের উল্লেখ ছিল না। বৃহৎ পুঁজির নিকট নোটবাতিল কোনও প্রত্যক্ষ সমস্যার কারণ হইয়াছিল, না কি তাহার জন্য সমস্যা চাহিদার অভাবের পথ বাহিয়া আসিয়াছিল, সেই প্রশ্নটি থাকিবে। কিন্তু, যে মাসগুলিতে নোটবাতিল-পরবর্তী সমস্যায় ভারতীয় অর্থনীতি ঝাঁজরা হইতেছিল, ঠিক তখনকার পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে নির্মিত সূচকে এই ঘটনাটির উল্লেখমাত্র নাই, তাহা খেয়াল রাখা ভাল। দ্বিতীয়ত, নির্বাচনী রাজনীতির ভাষ্যে এই সূচকের প্রসঙ্গ আসিলে তাহা সম্ভবত জিএসটি-র প্রসঙ্গটিকে টানিয়াই আসিবে— যুক্তি হইবে, বিশ্ব ব্যাংকই যখন বলিতেছে যে ভারতে ব্যাবসা করা সহজতর হইয়াছে, তখন বোঝাই যাইতেছে যে জিএসটি-তে কোনও ক্ষতি হয় নাই। রাজনীতির ভাষ্য উল্লেখ করিবে না, জিএসটি চালু হইয়াছিল পয়লা জুলাই, আর সমীক্ষাটি জুন মাসের তথ্যে থামিয়া গিয়াছে।

তর্কের খাতিরে ধরিয়া লওয়া যাউক, সত্যই বিনিয়োগের সুবিধা বাড়িয়াছে। অর্থনীতির উপর তাহার সুপ্রভাব কতখানি, জাতীয় আয়ের পরিসংখ্যান দেখিয়া এখনও সেই কথাটি বোঝা যায় নাই, কিন্তু তর্কের খাতিরে সেই প্রসঙ্গটিও উহ্যই থাকুক। প্রশ্ন হইল, কর্মসংস্থান না হইলে কি বিনিয়োগের সুবিধা বৃদ্ধির সুফল সাধারণ মানুষের নিকট পৌঁছাইয়া দেওয়া সম্ভব? পরিসংখ্যান বলিবে, নরেন্দ্র মোদীর আমলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির ছবি তাহার পূর্বসূরির ‘নীতিপঙ্গুত্বে’ ভোগা আমলের তুলনাতেও খারাপ। তিনি নিজের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করিতে পারেন নাই। অর্থাৎ, বাণিজ্যবান্ধব হইবার সূচকে এক লাফে ত্রিশ ধাপ আগাইয়া আসিবার সংবাদটিতে সাধারণ মানুষের কোনও লাভ হয় নাই। হইবে না, তেমন দাবি করা ভুল। কিন্তু, এখনও যে মানুষের নিকট ইহা সংবাদমাত্র, কোনও প্রত্যক্ষ লাভ নহে, সেই কথাটি রাজনীতির ঢক্কানিনাদে হারাইয়া গেলে মুশকিল।

Narendra Modi World Bank Trade
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy