Advertisement
E-Paper

ওই আসনতলে

ম হাজনকে তুষ্ট রাখিলে পথের দিশা মিলে। নচেৎ নয়। পশ্চিমবঙ্গে কথাটি দ্বিগুণ সত্য। মানবাধিকার কমিশনের প্রধান নপরাজিত মুখোপাধ্যায় প্রথম হইতেই একমনে একতারাতে একটিই সুর বাজাইতেছেন। আজ তাঁহাকে মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠান-মঞ্চের পদতলাসীন দেখিয়া নানা কথা উঠিতেছে বটে, কিন্তু গত বৎসরের জানুয়ারি মাসে শ্রীমুখোপাধ্যায়ের এই পদটি অলঙ্কৃত করিবার ঘটনাটি নিজেই এই সকল কথার প্রথম ও প্রধান দ্যোতক।

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৫ ০০:০৩

ম হাজনকে তুষ্ট রাখিলে পথের দিশা মিলে। নচেৎ নয়। পশ্চিমবঙ্গে কথাটি দ্বিগুণ সত্য। মানবাধিকার কমিশনের প্রধান নপরাজিত মুখোপাধ্যায় প্রথম হইতেই একমনে একতারাতে একটিই সুর বাজাইতেছেন। আজ তাঁহাকে মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠান-মঞ্চের পদতলাসীন দেখিয়া নানা কথা উঠিতেছে বটে, কিন্তু গত বৎসরের জানুয়ারি মাসে শ্রীমুখোপাধ্যায়ের এই পদটি অলঙ্কৃত করিবার ঘটনাটি নিজেই এই সকল কথার প্রথম ও প্রধান দ্যোতক। প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও যে ভাবে রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজিকে এই অতি-উচ্চ ও অতি-সম্মানিত সাংবিধানিক পদটি ‘দান’ করা হইয়াছিল, তাহাই বুঝাইয়া দিয়াছিল, ইহা সরকারের তরফে বিশ্বস্ততার পুরস্কার, অধীনতার চুক্তি। সরকারের প্রধানের সহিত কমিশনের প্রধানের মুখোমুখি বা মাখামাখির প্রথা কোনও কালেই নাই। কিন্তু এই সব মান্ধাতার সাংবিধানিক ভব্যতা তিনি মানিবেন কেন। তাঁহার বিশ্বস্ততা তো কেবল মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি। সুতরাং প্রশাসনিক বৈঠকে রীতিবিরুদ্ধ ভাবে সাংবিধানিক কর্তার আসিতে বাধে নাই। মুক্তকণ্ঠে মুখ্যমন্ত্রী ও সরকারের স্তুতি গাহিতে ও রাজ্য সরকারকে সমস্ত বিষয়ে ‘ক্লিন চিট’ দিতে দ্বিধা হয় নাই। রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের তরফে রাজ্য প্রশাসনকে সর্বগুণান্বিত ঘোষণা করিতেও অসুবিধা হয় নাই। চেয়ারপার্সনের মতামত যখন এমন, তখন প্রশাসনের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ লইয়া কমিশনের কাছে আসিলে কমিশন তাহা কী ভাবে দেখিবে, জলের মতো স্পষ্ট। এই সাবলীল স্পষ্টতা আসলে অন্তরের বিগলিত অধীনতারই প্রকাশ।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী প্রথমাবধি জানেন, বিশেষ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই অধীনতা নিশ্চিত করা কত ‘জরুরি’। নতুবা স্বেচ্ছা-শাসনে খামখা বাধা পড়ে, কাজের অসুবিধা হয়। তাই কমিশনের পূর্বতন প্রধান প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়কে সরাইয়া দিতে তিনি অতি ব্যগ্র ছিলেন। তৃণমূল কংগ্রেস শাসনের প্রথম আড়াই বৎসর অশোকবাবু এই পদে থাকিয়া মানবাধিকার-সংক্রান্ত প্রশ্নে নানা ভাবে সরকারকে ক্রমাগত বিপদের মুখে ফেলিতেছিলেন। সেই কুসম্পর্ক দূর করিয়া সুসম্পর্কের সাধনা জরুরি ছিল। তাই রীতিনীতি ভাঙিয়া নপরাজিতবাবুর প্রবেশ। সাধারণত হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বা সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি ছাড়া মানবাধিকার কমিশনের পদে কাহারও স্থান হয় না। ইহা কেবল পদাধিকার-বল নয়, এই পদের উপযুক্ত জ্ঞান ও বিচারের দক্ষতারও প্রশ্ন। প্রসঙ্গত সেই সময় কমিশনের তিন-সদস্য বিশিষ্ট বেঞ্চও খালি ছিল, যেখানে প্রাক্তন ডি়জি নপরাজিতবাবুকে প্রথমে অধিষ্ঠানের প্রয়াস হয়। যথেষ্ট সমর্থনের অভাবে তাহা সম্ভব হয় নাই। অতএব অন্তর্বর্তী চেয়ারপার্সন হিসাবে তাঁহাকে সর্বোচ্চ পদটিতে সাময়িক ভাবে বসানো হয়। সেই পদাধিষ্ঠান আজও অমলিন: দেড় বৎসর অতিক্রান্ত। অনুমান করা যায়, ভ্রান্তি-কুশলতায় সময় স্তব্ধ হইয়াছে, সাময়িক চিরকালীন হইয়াছে।

প্রতিষ্ঠান ও ব্যবস্থার নিয়মশৃঙ্খলা বা রীতিনীতির হ্যাপা-য় না জড়াইয়া অন্তর্বর্তিকালীন নিয়োগ পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক রাজনীতির সম্ভবত একটি উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবন। ইহাতে অনেক সুবিধা। বিতর্কের বাড়াবাড়ি এড়ানো যায়, জনসমাজের স্বাভাবিক অন্যমনস্কতা ও বিস্মৃতি-পরায়ণতার সুযোগে পছন্দের ব্যক্তিকে অস্থায়ী হইতে স্থায়ী ছাপে রঞ্জিত করিয়া ফেলা যায়। কে জানে, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ও হয়তো এই মুহূর্তে সেই পথে হাঁটিতে চলিয়াছে। প্রতিষ্ঠান, বিশেষত গণতন্ত্রের দেশের প্রতিষ্ঠান, বহু ক্ষেত্রেই ক্ষমতার সাধনার অন্তরায়। আর, নপরাজিতবাবুর মতো প্রতিষ্ঠান-কর্তারা জানেন, প্রতিষ্ঠান নামক অন্তরায়টি দূর করিয়া ক্ষমতার যাত্রা কণ্টকহীন করাই তাঁহাদের প্রধান দায়িত্ব।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy