Advertisement
E-Paper

চার বছরে ৮২টি কেমো, নিষেধ রাত জেগে পড়া! উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম পর্বে নবম অদ্রিজা পড়তে চায় মনস্তত্ত্ব নিয়ে

রোগের সঙ্গে লড়াইয়ে জিতেছে ছোট বয়সেই। এ বার মনের সঙ্গে লড়াই কেমন করে করতে হয়, সেটা নিয়ে পড়তে চায় অদ্রিজা। পড়াশোনা বাইরেও বাংলা সাহিত্যে আগ্রহ রয়েছে অদ্রিজার।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ১৮:৩৪
মনের জোরেই লড়াই জিতেছে অদ্রিজা।

মনের জোরেই লড়াই জিতেছে অদ্রিজা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ষষ্ঠ শ্রেণির গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই শরীরে বাসা বেঁধেছিল ক্যানসার। রাত-দিনের সীমা ছাড়িয়ে মারণরোগের থাবা থেকে মুক্তির লড়াই চলেছিল চার বছর। মুম্বই-কলকাতা একাকার করে জিতে এসেছেন এক স্কুলশিক্ষিকা মা আর তাঁর ছোট্ট মেয়ে। এ বার সেই মেয়ের মুকুটেই নতুন পালক। কর্কট-বিজয়িনী অদ্রিজা গণ এ বার উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম পর্বের পরীক্ষায় সম্ভাব্য সেরা দশে জায়গা করে নিয়েছে। ৯৭.৩৭ শতাংশ নম্বর নিয়ে সে রয়েছে নবম স্থানে।

শুক্রবার সেমেস্টার পদ্ধতিতে উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম পর্বের ফলঘোষণা হয়েছে। নিজের নাম শুনেই খুশি অদ্রিজা। তার কথায়, “ভীষণ খুশি, কিন্তু এখনই তেমন আনন্দ করার সময় নয়। সামনে পরীক্ষা। ভাল ফল তো সেখানেও করতে হবে।”

ষষ্ঠ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার শেষ হওয়ার পরই টি-সেল লিম্ফোমা ক্যানসার ধরা পড়েছিল উত্তর ২৪ পরগনার নিমতার বাসিন্দা অদ্রিজার। তড়িঘড়ি শুরু হয় চিকিৎসা। অদ্রিজার শারীরিক অবস্থার কথা জানতে পেরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তার ঠাকুমা। এক দিকে মেয়ে, অন্য দিকে মা— দিশাহারা হয়ে পড়েন অদ্রিজার বাবা জয়মঙ্গল গণ। তিনি নিজে টাকি হাউস গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড মাল্টিপারপাস বয়েজ় স্কুলের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক। সে সময় হাল ধরেন অদ্রিজার মা জ্যোতি গণ। বেলঘরিয়া বয়েজ় স্কুলের শিক্ষিকা জ্যোতি একাই লড়াই শুরু করেন মেয়েকে নিয়ে। মেয়েকে মুম্বই নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আনেন তিনি একাই। একের পর এক ৮২টি কেমো, চারটি বছর পর সুস্থ হয়েছে অদ্রিজা। এ লড়াইয়ে পাশে থেকেছেন মা ও মেয়ের স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও।

সুস্থ হওয়ার পর দার্জিলিং ভ্রমণে অদ্রিজা।

সুস্থ হওয়ার পর দার্জিলিং ভ্রমণে অদ্রিজা। সংগৃহীত ছবি।

মেয়ের কৃতিত্বে ভীষণ খুশি জ্যোতি। বলেন, “পড়াশোনা নিয়ে জোর করিনি কোনও দিন। যেমন ভাল লাগে, তেমন ভাবেই এগিয়ে যাক ওরা। অদ্রিজার নিজের তাগিদ রয়েছে, তাই আশা রাখছি ভবিষ্যতে আরও ভাল হবে।”

লাগাতার কেমো, স্কুলের মাতাজি, শিক্ষিকাদের সাহচর্যে, নিয়মিত থেরাপির সাহায্যে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে। ২০২১-এ পুরোপুরি ভাবে রোগমুক্তি হয় অদ্রিজার। মেয়ের জন্য মা রাতের পর রাত জেগেছেন, কথা বলতে বলতে গলা ধরে আসে অদ্রিজার বাবার। এখনও প্রতি বছর মুম্বইয়ের হাসপাতালে গিয়ে সমস্ত পরীক্ষানিরীক্ষা করিয়ে আসতে হয় মেয়েকে। তাঁর কথায়, “মেয়ে আমার নবম হয়েছে, সেটা অবশ্যই ভাল খবর। কিন্ত যে ভাবে ও এত কিছু পেরিয়ে জীবনের লড়াইটা জিতেছে, আমি তাতেই বেশি খুশি।”

অদ্রিজার দিদি সৃজা বর্তমানে সিএসআইআর-ইউজিসি নেট-এর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বোনের এমন ফলে উৎফুল্ল তিনিও। বললেন, “ও নিজের মতো করে পড়াশোনা করেছে, কোথাও কখনও আটকালে আমি দেখিয়ে দিয়েছি। তা ছাড়াও ওর মনের এত জোর, ও নিজেই নিজের সমস্যার মোকাবিলা করেছে। আমি খুবই খুশি।”

যার মনের জোর নিয়ে এত চর্চা, এত আলোচনা, সেই অদ্রিজা নিজে পড়াশোনা করতে চায় ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি নিয়ে। মানুষের আচরণের বৈচিত্র তার আগ্রহের বিষয়। মনখারাপের সমাধান করতে চায়। অবসাদে ডুবে যাওয়া প্রজন্মের জন্য অদ্রিজার পরামর্শ, সকলের সমস্যা মন দিয়ে শুনে তার সমাধান করা যেতে পারে। তার জন্য ছোট ছোট পদক্ষেপ করতে পারলে হয়ত পরিস্থিতি বদলাতে পারে।

পরিবারের সঙ্গে অদ্রিজা।

পরিবারের সঙ্গে অদ্রিজা। সংগৃহীত ছবি।

স্কুলের মাতাজি, শিক্ষিকাদের সাহচর্যে কঠিন সময়গুলো সহজেই পেরিয়ে আসতে পেরেছে অদ্রিজা। স্কুলের বন্ধুরাও যে তার পাশে থেকেছে, সেটাও জানাতে ভোলেনি কৃতী। স্কুলের অ্যাসিস্ট্যান্ট টিচার নির্বাণপ্রাণা মাতাজি জানিয়েছেন, অদ্রিজা খুব বাধ্য ছাত্রী। পড়াশোনার বিষয়ে যথেষ্ট মনোযোগী। এত ভাল ফল করায় স্কুলের সকলেই খুব খুশি। তিনি বলেন, “অত ছোট বয়সেও ও নিজের সমস্যার কথা বুঝেছে। ও সুস্থ হতে চেয়েছে শুরু থেকেই। বাঁচার স্পৃহাই ওকে শক্তি দিয়েছে। কঠিন সময়ে ও বার বার শুনেছে বা শুনতে চেয়েছে প্রার্থনাসঙ্গীত। স্কুলের শিক্ষিকা, সহপাঠী, দিদিরা— সকলেই ওর জন্য প্রার্থনাও করেছে। এই সবই ওকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।”

অদ্রিজার রাত জাগা নিষেধ। তাই, স্কুলে যতক্ষণ পড়ানো হত, ততটুকুই পড়া। বাড়িতে ফিরে শুধু একবার চোখ বোলানো। পড়াশোনার বাইরেও বাংলা সাহিত্যে আগ্রহ অদ্রিজার। পছন্দের লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় থেকে সায়ন্তনী পুততুন্ড বা অর্পিতা সরকার। গান শুনতে দারুণ লাগে তার। প্রিয় শিল্পী শ্রেয়া ঘোষাল এবং অরিজিৎ সিংহ।

North 24 Parganas Cancer Survivor Higher Secondary Merit list school student
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy