স্বাস্থ্য পরিষেবায় ল্যাব টেকনিশিয়ানদের ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের এই বিষয়টি চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে কাজ শেখার সুযোগ থাকে। পাশাপাশি, রোগ নির্ণয়ের মতো কাজও এই বিশেষ টেকনিশিয়ানরা করে থাকেন। তাই যাঁরা উচ্চ মাধ্যমিকের পর স্বাস্থ্যবিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চাইছেন, তাঁরা কী ভাবে শুরু করবেন, কোথায় ভর্তি হতে পারবেন— এই সংক্রান্ত তথ্য জানানো হল।
বিষয়টি কী?
- মেডিক্যাল ল্যাবরেটরি টেকনোলজি রোগ নির্ণয়-সহ চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত একটি বিষয়। এই বিষয়টি ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরি সায়েন্স নামেও পরিচিত। কারণ তাঁদের ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরিতে বসে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক ভাবে রোগ নির্ণয় এবং উপশমের বিষয়গুলি চিহ্নিত করার কাজটি করতে হয়।
- ফিজ়িওলজি, অ্যানাটমি, বায়োকেমিস্ট্রি, হেমাটোলজি, ব্যাকটেরিয়োলজি, প্যাথোলজি, ইমিউনোলজি এবং মাইক্রোস্কোপি–সহ শারীরিক নমুনা (মল, মূত্র, রক্ত, থুতু প্রভৃতি) পরীক্ষা কী ভাবে করা হয়ে থাকে, সেই সমস্ত বিষয় স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরে শেখানো হয়।
- মেডিকাল ল্যাব টেকনোলজিস্টকে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার মাধ্যমে রোগীর নমুনার গুণগত মান নির্ণয়, পরীক্ষার বৈধতা যাচাই, ডেটা লগিং, ডেটা লেবেলিং, ল্যাবের রক্ষণাবেক্ষণ এবং যন্ত্রের সমস্যা সমাধান সম্পর্কিত কাজ করতে হয়।
- সংশ্লিষ্ট বিষয়টি নিয়ে উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি, বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি পরিচালনা এবং উন্নত পরিষেবা কী ভাবে দেওয়া সম্ভব, তার প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়।
ল্যাবরেটরিতে বসে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক ভাবে রোগ নির্ণয় এবং উপশমের বিষয়গুলি চিহ্নিত করার কাজ শেখার সুযোগ রয়েছে। প্রতীকী চিত্র।
দ্বাদশের পর কী ভাবে শুরু করবেন?
- বিজ্ঞান শাখার বিষয়ে উচ্চ মাধ্যমিক কিংবা সমতুল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরে স্নাতক স্তরে মেডিক্যাল ল্যাবরেটরি টেকনোলজি বিষয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ মেলে। এই কোর্সটি স্নাতক স্তরে স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন, ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অফ হেলথ সায়েন্সেস-এর অধীনস্থ সরকারি এবং বেসরকারি কলেজগুলিতে পড়ানো হয়ে থাকে।
- স্নাতক স্তরে ভর্তি হওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গ জয়েন্ট এন্ট্রান্স এগজ়ামিনেশন বোর্ডের একটি পরীক্ষায় আগ্রহীদের উত্তীর্ণ হওয়া প্রয়োজন। জয়েন্ট এন্ট্রান্স টেস্ট ফর নার্সিং, প্যারামেডিক্যাল অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস (সংক্ষেপে জেনপাস) নামক ওই পরীক্ষায় পাশ করার পরেই মেডিক্যাল ল্যাবরেটরি টেকনোলজি নিয়ে স্নাতকস্তরে ভর্তি হতে পারবেন।
উচ্চশিক্ষার সুযোগ কোথায়, কেমন?
- ডিগ্রি কোর্সের পাশাপাশি ডিপ্লোমার সুযোগও রয়েছে। রাজ্যের স্টেট মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টির তরফে এই বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স করানো হয়ে থাকে। এ ছাড়াও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে বিষয়টি ডিপ্লোমা কোর্স হিসাবে পড়ার সুযোগ রয়েছে।
- এ ছাড়াও স্নাতকোত্তর স্তরে বিজ্ঞান কিংবা টেকনোলজি শাখার অধীনে এই বিষয়টি নিয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। স্নাতকোত্তর স্তরে এই বিষয়টি নিয়ে পড়তে আগ্রহীদের বায়োমেডিক্যাল, ফার্মাসিতে স্নাতক হওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসি অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট (জিপ্যাট), ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি টেস্ট (নেট), কিংবা গ্র্যাজুয়েশন অ্যাপটিটিউড টেস্ট (গেট)-এর মতো পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া প্রয়োজন।
- উল্লেখ্য, চলতি মাসেই ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফার্মাসিউটিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (নাইপার), কলকাতার তরফে মেডিকাল টেকনোলজি (এমটি) বিষয়ে মাস্টার অফ টেকনোলজি (এমটেক) কোর্স চালু করা হয়েছে।
- প্রতিষ্ঠানের মেডিক্যাল ডিভাইসেস বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর কৌশিক কপাট জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের ডিভাইস ডিজ়াইন, প্রোটোটাইপিং, গুণমান পরীক্ষণের মতো বিষয়ে থিয়োরি ক্লাসের সঙ্গে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকছে। পাশাপাশি, দু’বছরের এই কোর্স চলাকালীন ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রজেক্টের মাধ্যমে কাজ শেখার সুযোগও পাবেন তাঁরা।
- মেডিক্যাল ল্যাব টেকনোলজির ক্ষেত্রে গবেষণাগার নির্ভর বিষয়গুলিতে জোর দেওয়া হয়ে থাকে। মেডিকাল টেকনোলজির ক্ষেত্রে অর্গ্যান প্রিন্টিং, বায়োসেন্সরস, এক্স-রে, ইসিজি মেশিনের মতো যন্ত্রকে উন্নতমানের করে তোলার বিষয়গুলি শেখানো হয়।
সরকারি ও বেসরকারি প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি-সহ বিভিন্ন সংস্থায় কাজের সুযোগ পেতে পারেন। প্রতীকী চিত্র।
খরচ কত?
- সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা কোর্স ফি হিসাবে খরচ হতে পারে।
- বেসরকারি ক্ষেত্রে ফি-বাবদ খরচ ৬০ হাজার টাকা থেকে ৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কাজের সুযোগ:
সরকারি ও বেসরকারি প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি, ব্লাড ব্যাঙ্ক, হাসপাতাল, নার্সিংহোম, গবেষণাকেন্দ্র, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে মেডিক্যাল ল্যাবরেটরি টেকনোলজিস্ট হিসাবে চাকরির সুযোগ রয়েছে।
এ ছাড়াও রেল, ব্যাঙ্কের মতো সংস্থাতেও মেডিক্যাল ল্যাবরেটরি টেকনোলজিস্টদের নিয়োগ করা হয়ে থাকে। সম্প্রতি ওয়েস্ট বেঙ্গল হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড এবং রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের তরফে উল্লিখিত পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।