পড়ুয়াদের জন্য হাহাকার! প্রায় এমনই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কলকাতার কলেজগুলিতে। দু’দফায় কাউন্সেলিংয়ের পরেও কলকাতার কলেজগুলিতে ফাঁকা রয়ে গিয়েছে স্নাতকস্তরের ৫০-৬০ শতাংশ আসন। এমনকি এই পরিস্থিতি খোদ আশুতোষ ও লেডি ব্রেবোর্ন কলেজও।
উচ্চশিক্ষা দফতরের তরফে অভিন্ন পোর্টালের মাধ্যমে ভর্তি শেষ হয়েছে গত ১০ অক্টোবর। আগেই বিকাশ ভবনের তরফে কলেজগুলিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল আসন বিকেন্দ্রীকরণের কথা। অর্থাৎ, ফাঁকা আসনে কলেজগুলি নিজেদের মতো ভর্তি নিতে পারবে। সেই মতো কলেজগুলির নিজস্ব পোর্টালে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ১১ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে। কিন্তু পরিস্থিতি আশানুরূপ নয়, বলছেন সব প্রায় কলেজ কর্তৃপক্ষই।
আরও পড়ুন:
দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম নামী কলেজ আশুতোষ। এখানে মোট আসন ৩৩৩০টি। অভিন্ন পোর্টালে দু’দফা ভর্তি পর দেখা গিয়েছে মোট ১,৩৯৪ আসন ভরেছে। ফাঁকা রয়েছে ১,৯৩৬টি আসন, অর্থাৎ ৬০ শতাংশেরও বেশি আসন। আশুতোষ কলেজের অধ্যক্ষ মানস কবি বলেন, “গত কয়েক বছর ধরেই সাধারণ ডিগ্রি কোর্সে ভর্তির প্রবণতা বেশ খানিকটা কমেছে। পেশাদারি পাঠক্রমে পড়তে আগ্রহী পড়ুয়ারা। তার উপর এ বছর আইনি জটিলতার কারণে বেশ খানিকটা সময়ও নষ্ট হয়েছে।”
শহরের অন্যতম নামী মহিলা সরকারি কলেজ লেডি ব্রেবোর্ন। সরকারের নির্দেশ মেনে ১২ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে কলেজ তার নিজস্ব পোর্টালে ভর্তি নেওয়া শুরু করেছে। প্রথম ১০ ঘণ্টায় প্রায় ২০০টি মতো আবেদন জমা পড়েছে বলে জানাচ্ছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। আবেদন করা যাবে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত। এই কলেজে প্রায় ৬৩৫টি আসন রয়েছে। এখনও পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ৩০০ ছাত্রী। ফাঁকা রয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ আসন।
লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের অধ্যক্ষা শিউলি সরকার বলেন, “এই শেষবেলায় মেধাবী পড়ুয়া পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কম। বেশির ভাগ পড়ুয়াই নিজের পছন্দ মতো কলেজে ভর্তি হয়ে গিয়েছেন। তা ছাড়া, সাধারণ কোর্সে মেয়েদের পড়ার ইচ্ছের অভাব রয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতিতে অনেকগুলি কোর্স একসঙ্গে পড়তে হচ্ছে। ছাত্রীরা আগ্রহ হারাচ্ছে। তৈরি হচ্ছে অনীহা।” তবে, ওবিসি সংরক্ষণ সংক্রান্ত জটিলতায় সময় নষ্ট হওয়ার কথাও জানিয়েছেন শিউলি।
শিক্ষকমহলের একাংশ দাবি করেছেন, যে সমস্ত কোর্সে পড়াশোনা করার পর সহজে চাকরি পাওয়া যায়, সেখানেই আগ্রহ বেশি পড়ুয়াদের। যেমন ইংরেজি, মাইক্রোবায়োলজি, ভূগোল, বাণিজ্য ইত্যাদি। গত কয়েক বছরে বাংলা, ইতিহাস, অর্থনীতি বা পদার্থবিদ্যা, রসায়নের মতো বিষয়ে আগ্রহ হারাচ্ছেন পড়ুয়ারা। আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু কলেজের নিজস্ব পোর্টালে আবেদন নেওয়া শুরু হয়েছে সোমবার থেকে। এই কলেজে মোট আসন রয়েছে ৩,১৪৬টি। তার মধ্যে ফাঁকা রয়েছে ১৬৫১টি। মাত্র ১,৪৯৫টি আসন ভর্তি হয়েছে অভিন্ন পোর্টালের মাধ্যমে। অধ্যক্ষ সমীরণ মণ্ডল বলেন, “পেশাদারি কোর্সে ভর্তির ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখাচ্ছেন বেশি পড়ুয়ারা। এ বছর ভর্তির ক্ষেত্রে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল তার প্রভাবও পড়েছে কলেজগুলিতে। বিকেন্দ্রীকৃত ভর্তি প্রক্রিয়াও সব আসন পূরণ করতে পারবে না।”
তবে এই ভাবে ভর্তি প্রক্রিয়ার বিকেন্দ্রীকরণ পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেক কলেজ কর্তৃপক্ষ। উঠেছে খরচের প্রসঙ্গ। সুরেন্দ্রনাথ কলেজে অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল কর বলেন, “নতুন করে পোর্টাল খুলে ভর্তি নিতে কলেজগুলির খরচ হয় লক্ষাধিক টাকা। কিন্তু তাতেও যে ছাত্র ভর্তি হবে, তার নিশ্চয়তা নেই। সে ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয় কলেজগুলি।”
সুরেন্দ্রনাথ কলেজে প্রায় ৩০০০ আসন রয়েছে। ভর্তি হয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ। একই ছবি বেহালা কলেজে। সেখানে অভিন্ন পোর্টালের মাধ্যমে ভর্তির হয়েছেন কমবেশি ৪০০ পড়ুয়া। অথচ, ওই কলেজে আসনসংখ্যা প্রায় হাজার। অধ্যক্ষ শর্মিলা মিত্র বলেন, “আমরা চলতি বছরই সশাসিত কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। ইতিমধ্যেই নিজেদের পোর্টালের মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আশা করবো যা আসন ফাঁকা রয়েছে তার অনেকটাই পূরণ হয়ে যাবে।”
নিউ আলিপুর কলেজে অভিন্ন পোর্টালের মাধ্যমে ভর্তি হয়েছেন ৮৫১ জন। অন্যান্য বছর প্রায় ১২০০ পড়ুয়া ভর্তি হন বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। অধ্যক্ষ জয়দীপ সারেঙ্গী বলেন, “আমাদের কলেজে অনেক বিষয় পড়ানো হয়। কিন্তু পড়ুয়ারা ভর্তি হচ্ছেন নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে। যেমন, জ়ুলজি, সাংবাদিকতা ও গণজ্ঞাপন, ইংরেজি ও বাণিজ্য। অন্য বিষয়গুলিতে ভর্তির হার যথেষ্ট কম।”