যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের এক পড়ুয়ার রহস্য মৃত্যু প্রশ্ন তুলে দিয়েছে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিয়ে। বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ নম্বর গেটের কাছে ঝিল পাড় থেকে বৃহস্পতিবার রাতে উদ্ধার এক ছাত্রীর দেহ। এরই মধ্যে ক্যাম্পাসে এসেছে সুপ্রিম কোর্টের তৈরি করা ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স। শুক্রবার তাদের সঙ্গে বৈঠকে ক্ষোভ উগরে দিলেন যাদবপুরের পড়ুয়ারা।
এই প্রথম নয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একের পর এক ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে নিরাপত্তা এবং নজরদারি নিয়ে। ২০২৩-এর অগস্টে মেল হস্টেলের বারান্দা থেকে পড়ে মৃত্যু হয় বাংলা প্রথম বর্ষের এক ছাত্রের। তার পর থেকেই নজরদারি বাড়ানোর দাবি উঠতে থাকে।
স্থির হয়েছিল, গোটা ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত ৭০ টি নজরদারি ক্যামেরা লাগানোর। কিন্তু, তা হয়নি। কারণ অর্থসঙ্কট। হিসাব বলছে এই ভাবে নজরদারি ক্যামেরায় ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করতে প্রয়োজন ছিল প্রায় ৬৮ লক্ষ টাকার। এই অর্থ দাবি করে হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে রাজ্য সরকারকে মাসখানেক আগে চিঠিও দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়।
ক্যাম্পাসে উপস্থিত সুপ্রিম কোর্টের তৈরি করা ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা। নিজস্ব চিত্র।
তবে শুধু সিসিটিভি ক্যামেরা নয়। ২ বছর আগে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার পর থেকে রাতে পেট্রলিংও শুরু করা হয়েছে ক্যাম্পাসে। কিন্তু সেখানেই মূল সমস্যা। পর্যাপ্ত নিরাপত্তারক্ষীই নেই বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফলে নজরদারি চালানোয় সমস্যা হচ্ছে বলে দাবি পড়ুয়া থেকে কর্তৃপক্ষ— সকলেরই।
শুক্রবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের তৈরি করা ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স আসে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাদের লক্ষ্য হল পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন এবং আত্মহত্যা রোধ। এ বিষয়ে সদস্যেরা কথা বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে। প্রথম দফার বৈঠকে ৬০ জন পড়ুয়াকে ডাকা হয়েছিল। সেখানেই নানা বিষয়ে ক্ষোভ উগরে দেন পড়ুয়ারা।
বৈঠকে যোগ দেওয়া এক পড়ুয়া আনিসুল মোল্লা জানান, “আমরা বেশ কিছু দাবি টাস্ক ফোর্সের সামনে তুলে ধরেছি। মূলত পাঁচটি বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল, ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত নিরাপত্তারক্ষী এবং নজরদারি ক্যামেরা। নিরাপত্তা এবং নজরদারির অভাবেই আকছার বহিরাগতদের দ্বারা আক্রান্ত হতে হয় পড়ুয়াদের।”
নজরদারির অভাব রয়েছে, স্বীকার করেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ-উপাচার্য। নিজস্ব চিত্র।
নিরাপত্তার বিষয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ-উপাচার্য অমিতাভ দত্ত অবশ্য বলেন, “সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর বিষয়ে রাজ্যকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। আমরা সীমিত সংখ্যক নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে কাজ করছি। বৃহস্পতিবার রাতেও পেট্রোলিং দল ছিল। কিন্তু হতেই পারে, দুর্ঘটনার সময় ওই স্থানে কোনও রক্ষী ছিলেন না।” তিনি দাবি করেন, ক্যাম্পাসের সব থেকে বড় সমস্যাই হল নিরাপত্তা রক্ষীর অভাব।
কিন্তু এ সব কিছুর সঙ্গে বার বার উঠে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদ দীর্ঘ দিন ফাঁকা থাকার প্রসঙ্গটি। সহ-উপাচার্যের পাশাপাশি পড়ুয়ারাও দ্রুত প্রশাসনিক শূন্যপদগুলি পূরণের দাবি তুলেছেন স্থায়ী ভাবে। সহ-উপাচার্য এ দিন জানান, নিরাপত্তা বিষয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাঁরা নতুন করে আলোচনায় বসার কথা ভাবছেন।
তবে এ দিন টাস্ক ফোর্সের পরিদর্শন নিতান্তই নিয়মমাফিক, পূর্বনির্ধারিত। তবে শুধু যাদবপুর নয়, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও চলছে এই পরিদর্শন। ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান আরমান আলি বলেন, “আমরা সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছি, পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলছি। কী কী সমস্যায় ভুগছেন পড়ুয়ারা, তা নিয়ে কথা হয়েছে। রিপোর্ট তৈরি করা হবে।”