পূর্ব বঙ্গে সাঁওতালি ভাষাভাষী মানুষেরা কেমন ছিলেন বহু বছর আগে, কেমন ছিল তাঁদের সাহিত্যকর্ম, ধর্মচর্চা— এ বার জানা যাবে কলকাতায়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ কালচারাল টেক্সট অ্যান্ড রেকর্ডস বিভাগ এ বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে সংগৃহীত দুর্লভ সাঁওতালি পুঁথি ও ধর্মীয় গ্রন্থ ডিজিটাইজ় করতে চলেছে তারা। এই প্রকল্প সফল হলে, এটি হবে বাংলাদেশের প্রথম সাঁওতালি আর্কাইভ। পরবর্তীতে এটি সাধারণ মানুষের দেখার জন্য খুলে দেওয়া হবে। বাংলাদেশের ল্যাঙ্গুয়েজ রিসার্চ হাব (দিনাজপুর) এবং ‘ব্রিটিশ লাইব্রেরি এনডেঞ্জার আর্কাইভ প্রোগ্রামে’-এর আর্থিক সহায়তা এই কাজটি করা হবে।
প্রকল্পের মূল গবেষক এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওশানোগ্রাফিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাহি সরেন জানান, পূর্ব ভারত, নেপাল এবং বাংলাদেশ জুড়ে, সাঁওতালি ভাষায় এখন প্রায় ৭৫ লক্ষ মানুষ কথা বলেন। অতি প্রাচীন কাল থেকেই পূর্ববঙ্গে সাঁওতালি ভাষাভাষী মানুষের বাস ছিল। ১৯০০ থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যে প্রকাশিত প্রায় ২০০ বই ও পান্ডুলিপি ডিজিটাইজ় করা হবে। যার মধ্যে দশ হাজার ছবিও প্রকাশিত হবে। রাহি বলেন, “এই ডিজিটাল আর্কাইভে সাঁওতালি লোকসাহিত্য, ভাষাতত্ত্ব, লোকগীতি, পুরনো গানের নথি এবং ধর্মীয় রূপান্তরের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার বিরল দলিল তুলে ধরা হবে। কাজ শুরু করেছি। বাংলাদেশের সাঁওতালি ভাষার প্রাচীন যে নথিগুলি খুবই জীর্ণ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। আধুনিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে সাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য।” এর থেকে বাংলার প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে আরও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী অধ্যাপক।
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশের দিনাজপুরে অবস্থিত সাঁওতাল এডুকেশন এবং সেন্টারল্যাঙ্গুয়েজ রিসার্চ হাব যৌথ ভাবে এ কাজে হাত লাগিয়েছে। এই কেন্দ্রটি গড়ে তুলেছিলেন দিনাজপুর অঞ্চলের সমাজকর্মী সমর এম সরেন। এর আগে ২০২২ সালে স্কুল অফ কালচারাল টেক্সট অ্যান্ড রেকর্ডস, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ব ভারতের ১৮৯০ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে প্রকাশিত প্রাচীন সাঁওতালি বিভিন্ন উন্নতি ডিজিটাইজ় করা হয়েছিল। তখন ৫ হাজার ছবি জনসাধারণের সামনে আনা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, গত বছর স্কুল অফ কালচারাল টেক্সট অ্যান্ড রেকর্ডস, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে হুল এবং সাঁওতালি ভাষা সংস্কৃতি ও নথি নিয়ে এক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে ১৭০ বছরের ইতিহাসে সাঁওতালি ভাষা সংক্রান্ত বিভিন্ন পাণ্ডুলিপি, নথির পাশাপাশি খেলাধুলো এবং সংস্কৃতি চর্চার বিবরণ ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল।