সকাল থেকেই থমথমে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। শুক্রবারও নাট্যোৎসব ‘রুহানিয়ত’-এর আয়োজন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে উৎসব স্থগিত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ড্রামা ক্লাব’-এর এই অনুষ্ঠানেই যোগ দিয়েছিলেন ইংরিজি তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী অনামিকা মণ্ডল। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ২০মিনিট নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকেই উদ্ধার হয় তাঁর মৃতদেহ।
এ দিন ইংরেজি বিভাগে গিয়ে খোঁজ পাওয়া যায়নি কোনও পড়ুয়ার। শিক্ষকদেরও দেখা যায়নি। বিভাগীয় প্রধানের ঘরে তালা ঝোলানো। যদিও এ দিন ক্যাম্পাসে এসেছিল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গঠিত টাস্ক ফোর্স। সেখানেই ছিলেন ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মনোজিৎ মণ্ডল। ওয়েবকুপার সদস্য ওই অধ্যাপক বলেন, “এর আগেও ক্যাম্পাসে একাধিক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। ওই ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। কর্তৃপক্ষকে নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। নিরাপত্তাই এই মুহূর্তে এক এবং অভিন্ন দাবি।”
আরও পড়ুন:
বাংলা বিভাগের অধ্যাপক রাজেশ্বর সিংহ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় সুষ্ঠু ও সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। সকলে যাতে নির্বিঘ্নে ও নির্ভয় কাজ করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে হবে কর্তৃপক্ষকেই। নিয়ম-শৃঙ্খলার প্রয়োজন এবং তা ভাঙলে শাস্তির বিধানও প্রয়োজন।” তিনি দাবি করেন, নতুন প্রজন্মের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। ছাত্র-শিক্ষকের সুসম্পর্ক গড়ে তোলার কথাও বলেন তিনি। নেশামুক্তি বা অপরাধ প্রবণতা ঠেকাতে প্রযুক্তির থেকেও বেশি কার্যকর হতে পারে পারস্পরিক সম্পর্ক, এমনই মনে করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রাতে ছাত্রীমৃত্যুর ঘটনার পর থেকেই অভিযোগের আঙুল উঠেছে বাম মনোভাবাপন্ন পড়ুয়াদের দিকে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে কী ভাবে রাত ১০টার পরও গানের অনুষ্ঠান চলছিল, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও আক্রমণ শানিয়েছে শাসক তৃণমূল এবং বিজেপি-র ছাত্র সংগঠন এবিভিপি।
এ দিন জুটা-র (যাদবপুর ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন) সাধারণ সম্পাদক পাথরপ্রতিম রায় বলেন, “নিরাপত্তাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। সিসি ক্যামেরা বসানোর কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এখনও তা কার্যকর হয়নি। ৬৩টি স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়েছে। যাদবপুরের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।”
বার বার যাদবপুরে ঘটেছে পড়ুয়ামৃত্যুর ঘটনা। ২০২২-এ দোলের সময় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঝিলে পড়েই মারা গিয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক প্রাক্তন ছাত্র। ২০২৩-এ বাংলা প্রথম বর্ষের এক আবাসিক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছিল হস্টেলের বারান্দা থেকে পড়ে।
এ ক্ষেত্রে গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা দায় থেকে যায় বলেই মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শুভজিত নস্কর। তিনি বলেন, “এই ঘটনাকে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমষ্টিগত ব্যর্থতা হিসাবেই দেখছি। নানা কারণ রয়েছে এই ঘটনার পেছনে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্বিক পরিকাঠামোর অভাব তো বটেই, আমি মনে করি, প্রান্তিক পরিবারের পড়ুয়ারাও অনেক সময় ক্যাম্পাসের উন্নাসিকতার শিকার হন। এই মেয়েটির ক্ষেত্রে কী ঘটেছিল তা তদন্ত করে দেখা দরকার।”
অধ্যাপকেরা তদন্তে আশ্বাস রাখতে চাইছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক দীপঙ্কর সান্যাল বলেন, “ঘটনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানি না। তাই ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছি। যে কারণেই ঘটে থাক, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা দায়িত্ব থেকেই যায়।”