Advertisement
E-Paper

গণধর্ষণের দু’মাস পরও সিসি ক্যামেরা লাগানো যায়নি কসবা আইন কলেজে, চিঠি সরকারকে

গত ২৪ জুলাই পরিচালন সমিতির শেষ বৈঠক হয়েছিল ওই কলেজে। সেখানেই স্থির হয়েছিল, ১৫ অগস্ট এর মধ্যে ই-টেন্ডার ডেকে কলেজে সিসি ক্যামেরা লাগানো হবে। পাশাপাশি কলেজের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে প্রাক্তন সেনা কর্মীদের নিযুক্ত করা হবে রক্ষী হিসাবে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০২৫ ২০:১০

—ফাইল চিত্র।

কলেজ ক্যাম্পাসের ভিতর ঘটেছিল গণধর্ষণের ঘটনা। তার পর পেরিয়ে গিয়েছে দু’টি মাস। পরিচালন সমিতির বৈঠকে সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল নজরদারি ক্যামেরা বসানোর। কিন্তু তা মানা হয়নি। শুক্রবার ফের বৈঠকে বসেন কর্তৃপক্ষ। আর সেখানেই সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, সিসি ক্যামেরা বসানোর মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই কলেজের। তাই তা করা যাবে না।

ঘটনার সূত্রপাত গত ২৫ জুন। দক্ষিণ কলকাতার কসবা এলাকার ওই আইন কলেজের ভিতরে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা ৫০ মিনিটের মধ্যে ধর্ষণ করা হয় প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীকে। মূল অভিযুক্ত ওই কলেজের এক প্রভাবশালী প্রাক্তনী তথা অস্থায়ী কর্মী। এর পরই নড়ে বসেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

গত ২৪ জুলাই পরিচালন সমিতির শেষ বৈঠক হয়েছিল ওই কলেজে। সেখানেই স্থির হয়েছিল, ১৫ অগস্ট এর মধ্যে ই-টেন্ডার ডেকে কলেজে সিসি ক্যামেরা লাগানো হবে। পাশাপাশি কলেজের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে প্রাক্তন সেনা কর্মীদের নিযুক্ত করা হবে রক্ষী হিসাবে। প্রাথমিক ভাবে দু’জন রক্ষী নিয়োগ করার কথা বলা হয়।

কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনটিই করা হয়নি বলে জানা গিয়েছে। এরই মধ্যে শুক্রবার, ২৯ অগস্ট বসে পরিচালন সমিতির বৈঠক। আগেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে সমিতির দুই মনোনীত সদস্য শিবরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় এবং যশবন্তী শ্রীমানিকে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই জায়গায় মনোনীত করেছেন বাণিজ্য বিভাগের প্রধান তনুপা চক্রবর্তী এবং অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক কৌশিক গুপ্তকে। এ দিনের বৈঠকে তাঁরা উপস্থিত ছিলেন। পরিচলন সমিতির সভাপতি অশোক দেব‌ও যোগ দিয়েছিলেন বৈঠকে। সেখানেই উঠে আসে সিসি ক্যামেরা লাগানোর প্রসঙ্গটি।

জানা গিয়েছে, বৈঠকে কলেজ কর্তৃপক্ষ দাবি করেন, সিসি ক্যামেরা লাগানোর মতো অর্থ কলেজের তহবিলে নেই। এই মুহূর্তে এ কাজ করতে গেলে নাকি কলেজ কর্তৃপক্ষকে ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙাতে। আর সেখানেই আপত্তি তোলেন পরিচালন সমিতির সদস্যেরা, জানিয়েছেন উপাধ্যক্ষ নয়না চট্টোপাধ্যায়।

উপাধ্যক্ষ এ দিন দাবি করেন, “পুরো কলেজ নজরদারি ক্যামেরায় মুড়ে দিতে গেলে প্রায় ৭০টি ক্যামেরা লাগাতে হবে। এ জন্য বিস্তর অর্থের প্রয়োজন। আমরা চাই এই খরচ যেন সরকারি ভাবে হয়। চিঠি লিখছি সরকারকে।” সরকার মনোনীত সদস্যই এই প্রস্তাব দিয়েছেন বলে দাবি উপাধ্যক্ষের। সর্বসম্মতি ক্রমে সে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি আশ্বাস দিয়েছেন, দ্রুত নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করা হবে কলেজে।

কিন্তু কলেজ কেন সিসি ক্যামেরা লাগানোর খরচ বহন করতে পারবে না, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। এর আগেই অভিযোগ উঠেছিল, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন চারটি আইন কলেজের মধ্যে সর্বাধিক ফি নিয়ে থাকে কসবার এই আইন কলেজটিই। এ বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য শান্তা দত্ত দে।

যদিও এই অভিযোগ খারিজ করেছেন উপাধ্যক্ষ। তিনি বলেন, “ফি বেশি, এটা ঠিক নয়। সমস্ত বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় জানে।‌ বার কাউন্সিল ওফ ইন্ডিয়া-কে যে টাকা দিতে হয়, তার নথি আমাদের কাছে রয়েছে।” উপাধ্যক্ষের দাবি, ১৫ জন অনার্স পড়ুয়ার জন্য তাঁদের প্রতিবছর প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা দিতে হয় বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়াকে। সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা দিতে হয় সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের জন্য। কর্মীদের বেতনেও বহু টাকা খরচ হয়। আর এ সমস্ত কিছু নির্ধারিত হয় ভর্তি ফি-এর উপর। ২০১৬ সাল থেকে ওই কলেজে অনার্স কোর্স চালু হয়েছে। সে সময় কলেজ তহবিল থেকেই যাবতীয় খরচ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ভর্তি ফি নিয়ে কথা হয়েছে বৈঠকেও। বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী পড়ুয়া সংখ্যা ১৮০ থেকে কমিয়ে ১২০ করা হয়েছে। তাই ফি পরিকাঠামো পরিবর্তনের প্রস্তাবও গ্রহণ করা হয়েছে বৈঠকে।

এ দিকে শাসকঘনিষ্ঠ যে প্রাক্তনী ছাত্রী নিগ্রহের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত, ঘটনার দু’মাস পরেও তাঁর নাম উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে কলেজের দেওয়ালে-দেওয়ালে। এ নিয়ে আগেই আপত্তি উঠেছিল। বলা হয়েছিল নানা রাজনৈতিক স্লোগানের সঙ্গে ওই মূল অভিযুক্তের নাম মুছে ফেলতে হবে। কিন্তু তা-ও হয়নি।

এ বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন সরকার প্রতিনিধি দেবব্রত রায়চৌধুরী। তিনি বলেন, “কলেজ ক্যাম্পাসের ভিতরে এখন‌ও কেন মূল অভিযুক্তের নাম দেখা যাচ্ছে? অবিলম্বে সিট-এর সঙ্গে আলোচনা করে কলেজ কর্তৃপক্ষের উচিত এই দেওয়াল লিখন মুছে ফেলা উচিত।” তিনি সরাসরি আঙুল তোলেন উপাধ্যক্ষের দিকে। বলেন, “আমার তো মনে হয় উপাধ্যক্ষ এখনও অভিযুক্তের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।”

পরিচালন সমিতির সভাপতি অশোক দেব অবশ্য বলেন, “কলেজের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না, তাই কোনও কাজ করা যায়নি। ‌পরিচালন সমিতির নতুন সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। পুজোর মধ্যেই সমস্ত কিছু করা হবে।” উপাধ্যক্ষ নয়না চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের ক্যাম্পাসে পুলিশির তদন্ত চলছে। আমি চাই দোষীদের শাস্তি হোক। সেই কারণেই দেওয়াল লিখন মোছা হয়নি।”

Kasba Rape Case South Calcutta Law College CCTV Rape
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy