শিক্ষক দিবসের আগেই ঘোষণা করা হয় ‘জাতীয় শিক্ষক পুরস্কার’। চলতি বছর পশ্চিমবঙ্গের দুই শিক্ষিকা পাচ্ছেন এই বিশেষ পুরস্কার। একজন পশ্চিম মেদিনীপুরের এক প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা, অন্য জন নিউটাউনের এক বেসরকারি স্কুলে কর্মরত। গত বছর অবশ্য পশ্চিমবঙ্গ থেকে যে দু’জন এই সম্মান পেয়েছিলেন, তাঁরা সরকার পোষিত স্কুলেরই শিক্ষক ছিলেন। এর পরই নতুন করে তৈরি হচ্ছে বিতর্ক। সত্যিই কি এই প্রথম বেসরকারি স্কুলের কোনও শিক্ষক এই সম্মান পাচ্ছেন?
ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, গত কয়েক বছরে এই বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকদের এই সম্মান দেওয়া হচ্ছে। তবে, সার্বিক ভাবে কমেছে পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষকের সংখ্যাও। সোমবার রাতে কেন্দ্রের তরফে নাম ঘোষণা করা হয়। চলতি বছর দেশের মোট ৪৫ জন শিক্ষক ‘জাতীয় শিক্ষক পুরস্কার’ পাবেন। গত বছর এই সংখ্যাটা ছিল ৮২। বছর দুয়েক আগে সংখ্যাটা ছিল শতাধিক।
গত বছর এ রাজ্য থেকে আশিসকুমার রায় এবং প্রশান্তকুমার মারিক এই পুরস্কার পেয়েছিলেন। চলতি বছর এই তালিকায় রয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের কুচলাকাটি প্রাথমিক স্কুলের তনুশ্রী দাস এবং নিউটাউনের দিল্লি পাবলিক স্কুলের শিক্ষিকা মধুরিমা আচার্য। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবসে পুরস্কার প্রাপকদের সম্মাননা দেওয়া হবে। দিল্লির বিজ্ঞানভবনে জাতীয় শিক্ষকের পুরস্কার হাতে তুলে দেবেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। এ পুরস্কারের অর্থমূল্য ৫০,০০০ টাকা।
আরও পড়ুন:
তবে দু’বছরে হঠাৎ পুরস্কৃত শিক্ষকদের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষামহলে। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে, জাতীয় শিক্ষানীতি চালু হওয়ার পর কি ধীরে ধীরে পুরস্কৃতদের তালিকায় বেশি করে জায়গা করে নিচ্ছেন বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকরাও? আগে বিভিন্ন রাজ্যের জন্য পুরস্কারের নির্দিষ্ট সংখ্যা নির্ধারিত ছিল। রাজ্যের তরফে কেন্দ্রের কাছে শিক্ষকদের নাম সুপারিশ করা হত। কিন্তু এখন শিক্ষকেরা নিজেরাই তাঁদের যোগ্যতার ভিত্তিতে আবেদন জানান।
এ প্রসঙ্গে বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “আমরা জানি, কোনও পুরস্কার সাধারণত কোনও সংস্থা, প্রতিষ্ঠান বা সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়। তা কেন নিজে থেকে চাইতে হবে? এই নিয়মই অত্যন্ত অপমানজনক। তা ছাড়া বিজেপি সরকারের আমলে এখন পুরস্কার দেওয়ার সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে। এটাও শিক্ষক সমাজকে অপমানিত করে।”
উল্লেখ্য, পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর গ্রামীণের হিজলি সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত কুচলাচাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেই স্কুলেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা তনুশ্রী দাস। তাঁর স্কুলের ভিতরেই রয়েছে স্কুল পড়ুয়াদের জন্য ব্যাঙ্ক ও শুশ্রূষা হাসপাতাল। স্কুলের আলমারিতে সাজানো রয়েছে লক্ষ্মীর ভাঁড়। সেই ভাঁড়গুলিতে নাম লেখা থাকে পড়ুয়াদের। সেখানেই প্রতিদিন তাতে ১-২ টাকা করে জমায় তারা। প্রত্যন্ত এই এলাকার বেশির ভাগ পরিবারই আর্থিক ভাবে পিছিয়ে। পড়ুয়ারা যাতে প্রাথমিক স্কুল থেকে বেরিয়ে অন্য স্কুলে উঁচু ক্লাসে ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় টাকা বা বইপত্র কেনার জন্য সেই অর্থ ব্যবহার করতে পারে, সে জন্যই এই সঞ্চয় ব্যবস্থা। এ ছাড়াও স্কুলে রয়েছে সব্জি বাগান বা কিচেন গার্ডেন, ফলের বাগান, ভেষজ উদ্যান। প্রতিটি ক্লাসরুমে রাখা আছে বিষয়ভিত্তিক অসংখ্য টিচিং লার্নিং ম্যাটেরিয়াল।
দিল্লি পাবলিক স্কুলের মধুরিমা আচার্যও নানা অভিনব উপায়ে হাতেকলমে পড়ুয়াদের পাঠদানের ব্যবস্থা করেন। সাহায্য নানারকম নিত্যনতুন প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী পদ্ধতির।