Advertisement
E-Paper

সাধারণ না কি ফলিত মনোবিদ্যা! কোন বিষয়ে স্নাতকোত্তর করলে পেশাগত সুযোগ মিলবে কেমন?

দ্বাদশের পরীক্ষায় কলা বা বিজ্ঞান বিভাগে উত্তীর্ণ হলেই মনোবিদ্যায় উচ্চশিক্ষা করা যায়।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:০১
প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

ক্রমশ বাড়ছে মনের অসুখ। চলতি বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, বিশ্বের প্রায় ১০০ কোটি মানুষ কোনও না কোনও মানসিক অসুস্থতায় ভুগছেন। কিন্তু সেই তুলনায় মনোবিদের সংখ্যা উদ্বেগজনক ভাবে কম। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি এক লক্ষ মানুষের জন্য রয়েছেন ১৩ জন মনোবিদ।

তবে, নতুন প্রজন্মের পড়ুয়ারা অনেকেই উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে বেছে নিতে চাইছেন মনোবিদ্যার মতো বিষয়। ২০২৬ উচ্চমাধ্যমিকের তৃতীয় সেমেস্টারে নবম স্থানাধিকারি অদ্রিজা গণেরও স্বপ্ন মনোবিদ হওয়ার। সে পড়তে চায় ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি। কী এই বিষয়টি, কাজের সুযোগ রয়েছে কেমন?

কারা স্নাতকস্তরে পড়তে পারবেন? কোন ডিগ্রি লাভ করা যায়?

দ্বাদশের পরীক্ষায় কলা বা বিজ্ঞান বিভাগে উত্তীর্ণ হলেই মনোবিদ্যায় উচ্চশিক্ষা করা যায়। তবে মনোবিদ্যায় স্নাতকে ডিগ্রি অর্জন করলে শাখা অনুযায়ী এমএ বা এমএসসি হয়। যাঁরা কলা বিভাগ থেকে দ্বাদশের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, তাঁরা মনোবিদ্যায় ব্যাচেলর অফ আর্টস (বিএ) ডিগ্রি লাভ করেন। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হলে মনোবিদ্যায় ব্যাচেলর অফ সায়েন্স (বিএসসি) ডিগ্রি অর্জন করা যায়।

স্নাতকোত্তরে কেমন সুযোগ?

রাজ্যের অন্যতম প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯১৫ সালেই প্রথম সাইকোলজি বা মনোবিদ্যা বিভাগ গড়ে তোলা হয়। সেই বিভাগের পিওর সাইকোলজি-র শিক্ষিকা দীপশিখা রায় বলেন, “প্রথমে একটিই বিভাগ থেকে শুধু মনোবিদ্যা পড়ানো হলেও বর্তমানে নানা কারণে পিওর এবং অ্যাপ্লায়েড (ফলিত)— এই দু’টি বিভাগ রয়েছে। পড়ুয়ারা দু’টি বিভাগ থেকেই এমএ এবং এমএসসি করার সুযোগ পান।”

বিশেষজ্ঞদের মতে দু’টি বিষয়ে বেশ খানিকটা মিল থাকলেও পার্থক্যও অনেক। মূলত পিওর সাইকোলজির ক্ষেত্রে মানুষের মন এবং আচরণগত দিকের নানা দিকের তাত্ত্বিক বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করা হয়। অন্য দিকে, অ্যাপ্লায়েড সাইকোলজির ক্ষেত্রে সেই তত্ত্ব বা নীতিনৈতিকতার দিকগুলি বাস্তব জীবনে কী ভাবে প্রয়োগ করা যায়, তা পড়ানো হয়। যাতে মানুষের মানসিক সুস্থতা এবং বিশ্বের নানা সমস্যার গোড়ায় গিয়ে তা সমাধান করা সম্ভব হয়।

দীপশিখা জানান, স্নাতকোত্তরের প্রথম বছরে দু’টি বিষয়ে এমএ এবং এমএসসি-র প্রায় এক থাকলেও দ্বিতীয় বছরে তা পালটে যায়। কেননা, তৃতীয় সেমেস্টার থেকে শুরু হয় স্পেশ্যালাইজ়েশন।

পিওর এবং অ্যাপ্লায়েড সাইকোলজি-র ক্ষেত্রে রাজ্যে কোন কোন বিষয়ে স্পেশ্যালাইজ়েশন করা যায়?

পিওর সাইকোলজি:

১) ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি— এ ক্ষেত্রে মনের নানা রকম অসুখ, সেই রোগ নির্ণয় এবং নিরাময়ের পদ্ধতি নিয়ে পড়ানো হয়।

২) রিসার্চ মেথোডলজি (কোয়ান্টিটেভ এবং কোয়ালিটেটিভ) —যেখানে মন এবং মস্তিস্ক বোঝার জন্য নানা তত্ত্বের বাস্তব প্রয়োগের জন্য গবেষণাগার নির্ভর প্রযুক্তি, সফটঅয়্যার, রাশিবিজ্ঞান-এর সাহায্য নেওয়া-সহ নানা খুঁটিনাটি পড়ানো হয়।

৩) সোশ্যাল সাইকোলজি—মানুষের মন বোঝাই যে হেতু মনোবিদ্যার মূল উদ্দেশ্য, তাই এই বিশেষপত্রে আগ্রাসী মনোভাব, ক্ষমতা, নাশকতামূলক কাজের জন্য যুক্ত থাকার প্রবণতা, লিঙ্গ বৈষম্যের মতো নানা বিষয়ের তাত্ত্বিক দিক নিয়ে চর্চা করা হয়।

অ্যাপ্লায়েড সাইকোলজি:

অ্যাপ্লায়েড সাইকোলজি বিষয়ের ক্ষেত্রেও তিনটি বিশেষপত্র বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় প্রধান ঈশিতা চট্টোপাধ্যায়। একইসঙ্গে বলেন, “কোনও সময়ে পড়ুয়ার সংখ্যা বেশি হলে আমরা হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট সাইকোলজি বিষয়েও স্পেশ্যালাইজ়েশন করার সুযোগ দিয়ে থাকি।”

১) ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি— পিওর সাইকোলজি-র মতোই এ ক্ষেত্রে পাঠ্যক্রমে কোনও পরিবর্তন হয় না। পড়ানো হয় একই বিষয়।

২) স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি— বর্তমানে যে হারে মানসিক চাপ বাড়ছে, তার সমাধান খোঁজার জন্য পড়ানো হয় স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট। এ ক্ষেত্রে কাউন্সেলিং কতটা উপকারি, তা-ও আলোচনা করা হয়।

৩) ইনডাস্ট্রিয়াল সাইকোলজি (অর্গানাইজেশনাল এবং এনভায়রনমেন্টাল সাইকোলজি)— অর্গানাইজেশনাল সাইকোলজিতে কোনও সংস্থা এবং তার কর্মীদের মানসিক সাস্থ্যের দিকে খেয়াল রেখে কী ভাবে তা সুপ্রতিষ্ঠিত করা যায়, তা পড়ানো হবে। আবার জলবায়ু পরিবর্তন, বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং দূষণের মানুষের মনকে কী ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং তা সমাধানের উপায় কী, তা পড়ানো হয় এনভায়রনমেন্টাল সাইকোলজিতে।

৪) হিউম্যান রিসোর্স সাইকোলজি— কোনও সংস্থার মানবসম্পদ (হিউম্যান রিসোর্স) ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কোন কোন জিনিস মাথায় রাখা উচিত, তা পড়ানো হয় এই স্পেশ্যাল পেপারে।

পেশাগত দিক কী কী?

দীপশিখা রায় বলেন, “পিওর সাইকোলজি-র রিসার্চ মেথডলজি বিষয়টি যাঁরা পড়েন, তাঁরা মূলত গবেষণা (পিএইচডি) এবং শিক্ষকতাকেই পেশা হিসাবে বেছে নেন।”

অন্য দিকে, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিষয়টি যে হেতু অনুশীলন নির্ভর। তাই এই বিষয়ে আগ্রহীরা ভবিষ্যতে এমফিল ডিগ্রি অর্জন করে এবং রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (আরসিআই)-এর স্বীকৃতি পেলে নিজস্ব ক্লিনিক, হাসপাতাল, নার্সিং হোমের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন।

বাকি বিষয়ে আগ্রহীরা ভবিষ্যতে এডুকেশন কাউন্সেলর, স্কুল কাউন্সেলর, স্বেচ্ছাসেবি সংস্থা বা এনজিও, বেসরকারি সংস্থা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাইকোলজিস্ট, এইচআর এক্‌জ়িকিউটিভ, স্পোর্টস সাইকোলজিস্ট, অকুপেশনাল সাইকোলজিস্ট, হেলথ সাইকোলজিস্ট-এর মতো নানা পেশায় বেছে নেওয়ার সুযোগ পান।

Psychology M.Sc. in Pure Psychology M.Sc. in Applied Psychology PG Course
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy