অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠা। কোনও ক্রমে দিন গুজরান। এ বার পরিবারের এক মাত্র মেয়েই ‘দিশা’ দেখাল। অর্থাভাবের অন্ধকারাচ্ছন্ন সংসার ভরে উঠল আশার আলোয়। মাধ্যমিকে ৭০০-এর মধ্যে ৬১৩ নম্বর পেয়ে সফল সুন্দরবনের মেয়ে দিশা দপ্তরী।
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার মথুরাপুর অঞ্চলেই বসবাস তফসিলি জাতির দপ্তরী পরিবারের। দিশার মা গৃহবধূ। বাবা দিনমজুর। পরিবারে সবার ছোট দিশা। মাথার উপরে রয়েছে বড় দুই দাদা। বাবা-মা শিক্ষিত না হলেও দাদারা উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ। স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়ার। বোন দিশাও ভালবাসে বিজ্ঞান। সবচেয়ে পছন্দের বিষয় অঙ্ক। আর সেই অঙ্কেই ৯০-এর বেশি নম্বর ওঠেনি বলে, এত ভাল ফলের পরেও হতাশ দিশা। ফোনের ওপার থেকে বলল, “আরও ভাল ফল হবে ভেবেছিলাম। অঙ্কের প্রশ্ন এত কঠিন এল! পরীক্ষা যদিও ভালই হয়েছিল।” তা হলে কী স্ক্রুটিনি করবে? অসন্তুষ্ট গলায় উত্তর এল, “নাহ, ওসব করতে অনেক টাকা লাগে। আমি করব না।”

দিশা দপ্তরী। নিজস্ব চিত্র।
মথুরাপুর কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাই স্কুলের দিশা অঙ্ক ছাড়া বাকি সব বিষয়ে ‘লেটার’ মার্কস বা ৮০-র উপর নম্বর পেয়েছে। বাংলা, পদার্থবিজ্ঞান, ইতিহাস এবং ভূগোলে তার প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৪, ৯০,৯৪ এবং ৯৩। দিশা জানিয়েছে, স্কুলশিক্ষক, গৃহশিক্ষক এবং বাড়িতে দাদাদের সাহায্যেই তার এই সাফল্য।
আরও পড়ুন:
কৃষ্ণচন্দ্র পুর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক, চন্দন মাইতি বলেন, ‘‘দিশা কঠোর পরিশ্রম করে এই সাফল্য এনেছে। আগামী দিনে ওর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি। আমরাও সাধ্যমতো ওর পাশে বিগত দিনে দাঁড়িয়েছি, আগামী দিনেও থাকার চেষ্টা করব।’’
দিশা জানিয়েছে, কোনও ‘হবি’ নেই তার। শুধুই পড়তে ভাললাগে। তাই সুযোগ পেলেই পড়াশোনা করে। কেননা, নুন আনতে পান্তা ফুরনোর সংসারে মন ভাল রাখার কোনও শৌখিন ‘হবি’-র জন্য সময় বরাদ্দ করতে অপারগ সে। বিজ্ঞান নিয়েই সে উচ্চ শিক্ষা করতে চায়। কারণ, এখন তার একটাই লক্ষ্য, যেনতেন প্রকারে প্রতিষ্ঠালাভ করা। সংসারে দারিদ্র্য ঘোচাতে মা-বাবার পাশে দাঁড়ানো। আপাতত, অ্যাজবেটাসের ছাউনির বাড়িতে থেকে আকাশ ছোঁয়ার জন্য প্রস্তুত দিশা।

মাধ্যমিকে প্রথম তিন।