প্রায় প্রতি বছর স্টেট এলিজিবিলিটি টেস্ট (সেট) হচ্ছে এ রাজ্যে। কলেজ সার্ভিস কমিশন (সিএসসি)-এর তত্ত্বাবধানে চলতি বছরের সেট পরীক্ষা হতে চলেছে আগামী ১৪ ডিসেম্বর। আবেদন গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই, শেষ দিন ৩১ অগস্ট। কিন্তু তার পর? কী হবে উত্তীর্ণদের পেশাগত ভবিষ্যৎ?
হিসাব বলছে, ২০২০ সালের পর থেকে কলেজ সার্ভিস কমিশন বা পাবলিক সার্ভিস কমিশন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদে কোনও নিয়োগ করেনি। নিয়োগ হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও। বছরের পর বছর চাকরির প্রত্যাশায় যুব সম্প্রদায়।
আরও পড়ুন:
সিএসসি-র ওয়েবসাইট বলছে, ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত রাজ্যে মোট ১০ বার সেট হয়েছে। অতিমারি আবহে শুধুমাত্র ২০২০ সালে সেট পরীক্ষা বন্ধ ছিল। আবার কলেজে, কলেজে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদে শেষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিও বেরিয়েছিল সেই ২০২০-এই। সে বার মোট শূন্যপদ ছিল ১১৪১টি। পূরণ করা গিয়েছিল ১০৩১টি পদ। গত ৫ বছরে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি।
আরও পড়ুন:
উল্লেখ্য, কলেজ শিক্ষক পদে ইন্টারভিউয়ে আবেদন করার যোগ্যতা নির্ণয় করে নেট বা সেট। ২০২০ সালের আগে যাঁরা এই যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পেরেছিলেন, শুধু তাঁরাই সে বছরের সিএসসি ইন্টারভিউয়ে আবেদন করতে পেরেছিলেন। হিসাব বলছে, ২০২০ থেকে এখনও পর্যন্ত সেট পাশ করে চাকরির অপেক্ষা করছেন প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার প্রার্থী। এর মধ্যে অনেকেরই বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে। যোগ্যতা থাকলেও নতুন করে তাঁরা আর আবেদন করতে পারবেন কি না তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
এ প্রসঙ্গে কলেজ সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান দীপক কর বলেন, “কমিশনের কাজ সেট পরীক্ষা গ্রহণ করা। তা নিয়মিত হচ্ছে। তার পর সরকার শূন্যপদের সংখ্যা প্রকাশ করলে আমরা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করব। সেই অনুযায়ী নিয়োগ করা হবে।” কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, সেট উত্তীর্ণদের অনেকেই বেসরকারি কলেজগুলিতে পড়াচ্ছেন। কারণ, ওই সব কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্য আবেদন করা যায় সেট শংসাপত্র থাকলে। ফলে আগ্রহীরা সেখানেও আবেদন করতে পারেন।
এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে গবেষকদের মধ্যে। বর্তমানে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করছেন সৌরদীপ মণ্ডল। ২০২২-এ তিনি সেট পাশ করেছিলেন। তার পর থেকে চাকরির অপেক্ষায় রয়েছে। তাঁর আশা, সরকারি বা সরকার পোষিত কোনও কলেজেই শিক্ষকতা করবেন। সৌরদীপ বলেন, “নিয়ম করে পরীক্ষা তো নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু নিয়োগ কবে হবে? স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই কলেজ সার্ভিস কমিশনের। কেনই বা বেসরকারি কলেজের ভরসায় থাকব। আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে জানা নেই।”
গবেষকদের একাংশের দাবি, নেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তবু গবেষণা ভাতা পাওয়া সম্ভব। কিন্তু সেট–এ উত্তীর্ণ হলে রাজ্যের সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজের শিক্ষকতার চাকরি ছাড়া অন্য কোনও সুযোগ নেই। সেট পরীক্ষা নিতেও সরকারি অনুমতি জরুরি। সিএসসি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে না পারলে, শুধু শুধু সেট নেওয়াটা অর্থহীন!’
নিখিলবঙ্গ অধ্যক্ষ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আশুতোষ কলেজের অধ্যক্ষ মানস কবি বলেন, “যে সব কলেজে স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়, সেখানে নতুন পদ তৈরি করা আশু প্রয়োজন। এতে পড়ুয়াদেরও উপকার হবে। আবার নতুন প্রজন্মের কর্মসংস্থানও হবে।”