গবেষণাগার নেই, নেই পর্যাপ্ত পরিকাঠামো। এমনকি দ্বাদশ শ্রেণিতে উঠেও পড়ুয়ারা হাতে পায়নি বই! এমনই অভিযোগ উঠছে রাজ্যের টেকনিক্যাল, ভোকেশনাল এবং স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্সের ক্লাস নিয়ে। এ রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেন বৃত্তিমূলক কোর্সের ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতি, তার উত্তর নেই কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের কাছেও!
উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট কাউন্সিল অফ টেকনিক্যাল অ্যান্ড ভোকেশনাল এডুকেশন অ্যান্ড স্কিল ডেভেলপমেন্ট (ডব্লিউবিএসসিটিভিইএসডি )-এর অধীনে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে মূলত পাঁচটি বিভাগে পড়ুয়াদের ভর্তি নেওয়া হয়। সেগুলি হল— ১) ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, ২) বিজনেস অ্যান্ড কমার্স, ৩) এগ্রিকালচার, ৪) হোম সায়েন্স এবং ৫) হেলথকেয়ার। এই বিষয়ের অন্তর্গত মোট ২৫টি বৃত্তিমূলক বিষয় বেছে নেওয়ার সুযোগ পায় পড়ুয়ারা। পাশাপাশি, অন্য ৪২টি বিষয়ে ‘শর্ট টার্ম’ বা স্বল্পমেয়াদি কোর্স করারও সুযোগ থাকে।
২০২২ সাল পর্যন্ত বৃত্তিমূলক বিষয়ের পাঠ্যক্রম যা ছিল, তার থেকে অনেকখানি বদলে গিয়েছে বর্তমান পাঠ্যক্রম। জাতীয় শিক্ষানীতি মেনে এই পরিবর্তন করা হয়েছে। ২০২৪-’২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে বৃত্তিমূলক এবং টেকনিক্যাল বিষয়ে কোর্সের ক্ষেত্রে বার্ষিক ব্যবস্থার বদলে সেমেস্টার ব্যবস্থা চালু করেছে কাউন্সিল। কিন্তু তার পর এক বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত, পরিকাঠামোর উন্নতি করা যায়নি।
আরও পড়ুন:
ইতিমধ্যে সেমিস্টার পদ্ধতিতে একাদশ শ্রেণিতে এক বছরে ক্লাস হয়ে গিয়েছে। বই বলতে শুধুমাত্র কাউন্সিলের তরফ থেকে দেওয়া বাংলা এবং ইংরেজি-র ভাষাভিত্তিক বই রয়েছে পড়ুয়াদের হাতে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই শুরু হবে তৃতীয় সেমেস্টারের ক্লাস। অভিযোগ, এখনও সমস্ত বিষয়ের বই পড়ুয়াদের হাতে আসেনি। আপাতত তাদের ভরসা করতে হচ্ছে শিক্ষকদের তৈরি করে দেওয়া উত্তরের উপরেই। অথচ, শিক্ষকদের মধ্যেও পাঠ্যক্রম নিয়ে রয়েছে দ্বন্দ্ব।
এ প্রসঙ্গে কালনা মহারাজা উচ্চ বিদ্যালয়ের বৃত্তিমূলক বিষয়ের শিক্ষক হীরক চক্রবর্তী বলেন, “কী ভাবে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পড়ুয়াদের পড়াশোনা হবে, তা নিয়ে শিক্ষকদের কিছুই জানা নেই। পড়ুয়ারাও যথেষ্ট চিন্তায় রয়েছে বই না থাকায়।” পাশাপাশি অভিযোগ উঠছে, উচ্চ মাধ্যমিকে বৃত্তিমূলক বিষয়ের ফল ঘোষণা হলেও মার্কশিট হাতে পায়নি পড়ুয়ারা।
ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে ২০২৫ সালের মাধ্যমিকের ফল। যে সমস্ত পড়ুয়ারা উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বৃত্তিমূলক বিষয় নিয়ে প়়ড়বে, তাদের ক্লাস শুরু হবে চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে। শিক্ষকমহলে প্রশ্ন উঠছে, নতুন পড়ুয়াদের পঠনপাঠনও কি চলবে একই ভাবে?
এ প্রসঙ্গে কাউন্সিলের চেয়ারম্যান পুর্ণেন্দু বসু-র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন, “আমি এখনও জানি না কেন বই আসেনি বা এই মুহূর্তে বইয়ের কী অবস্থা! বিষয়টি সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করার আগে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।”
উল্লেখ্য, রাজ্যের ২৬৩১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন বৃত্তিমূলক বিষয় পড়ানো হয়। প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ হাজার পড়ুয়া এই শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত। বর্তমান পরিস্থিতির সমাধান কী ভাবে হবে? শিক্ষক থেকে পড়ুয়া— সকলেই তাকিয়ে কাউন্সিলের দিকে।