বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরকালীন আর্থিক সুযোগ-সুবিধাও এ বার নিয়ন্ত্রণ করতে চায় রাজ্য সরকার। এই মর্মে রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নির্দেশিকা পাঠালো উচ্চশিক্ষা দফতর।
সরকারের তরফ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে যে চিঠি পাঠানো হয়েছে তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রভিডেন্ট ফান্ড, পেনশন, গ্র্যাচুইটি-সহ যে সমস্ত আর্থিক সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা, তা তারা নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। এর পর থেকে রাজ্যের অর্থ দফতর বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে।
আরও পড়ুন:
তবে এই প্রথম নয়। অবসরকালীন সুযোগ সুবিধার নিয়ন্ত্রণের আগে সরকারের তরফ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মাসিক বেতন, বদলি এবং ছুটি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে ‘হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’(এইচআরএমএস) ব্যবস্থা চালুর কথা জানিয়েছিল। সরকারেরে তরফে দাবি করা হয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অ্যাকাউন্ট থেকে কর্মীদের মধ্যে বেতন বণ্টনের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই অনিয়ম দেখা যায়। মাসের প্রথম দিনে অনেকেই হাতে বেতন পান না বলে অভিযোগ ওঠে। সেই ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতেই উচ্চশিক্ষা দফতরের উদ্যোগী হয়েছে।
সে সময়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সংগঠনগুলি দাবি করেছিল, সরকারি ভাবে কর্মীদের বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা চালু হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নিজস্ব আর্থিক পরিচালন ব্যবস্থা সরাসরি সরকারের হাতেই চলে যাবে। স্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির যাবতীয় তথ্য সরকারের হাতেই থাকবে। ফলে এক দিকে যেমন অধ্যাপক ও কর্মীদের যত্রতত্র বদলি করার সম্ভাবনা তৈরি হবে। তেমনই, বছরের পর বছর কর্মী নিয়োগ না করে কর্মী সঙ্কোচন করা হবে। আবার কর্মীদের গ্র্যাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড, পেনশন-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সুযোগসুবিধাগুলি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের বদলে সরকারি কোষাগারের নিয়ন্ত্রণে চলে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনার সিদ্ধান্তও নেবে সরকার।
এ বার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পেনশন নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারি নির্দেশিকা আসার পরেই সরব হয়েছেন অধ্যাপকেরা। তাঁদের দাবি, প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় স্বশাসিত। সরকার অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধার দায় নিজের হাতে নিয়ে সেই স্বাধিকার নষ্ট করার চেষ্টা করছে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতন দেয় না, রক্ষণাবেক্ষণের এর জন্য টাকাও দেয় না, পড়াশোনা-গবেষণার জন্যও আর্থিক অনুমোদন নেই, রেজিস্ট্রার-ফিনান্স অফিসার-সহ সব পদে নিয়োগ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এ বার অবসরকালীন সমস্ত কিছু নিজেদের হাতে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধিকার সম্পূর্ণরূপে নষ্ট করতে চায় রাজ্য সরকার।”
এ প্রসঙ্গে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শঙ্করকুমার নাথ বলেন, “আমরা চিঠি পেয়েছি। এই চিঠি নিয়ে আমরা কর্ম সমিতির বৈঠকে আলোচনা করব। সরকারের এই নির্দেশ নিয়ে আমরা এখনই মন্তব্য করব না। আলোচনার পরেই আমরা এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য জানাতে পারব।”