Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
judge

বিচারক ও বিচারপতির পার্থক্য কী? কী উপায়েই বা হয় নিয়োগ?

সমস্ত বিচারপতিই আসলে বিচারক, কিন্তু সমস্ত বিচারক বিচারপতি নন।

বিচারক ও বিচারপতি

বিচারক ও বিচারপতি সংগৃহীত ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২২ ২২:০৮
Share: Save:

অনেকেরই হয়তো আইন বিষয়ে পড়াশোনার আগ্রহ রয়েছে। অনেকেই স্বপ্ন দেখেন এজলাসে বিচারক বা বিচারপতির আসনে বসার। কিন্তু সে ক্ষেত্রে কখনও কখনও 'বিচারক' ও 'বিচারপতি'দের মধ্যে ঠিক কী পার্থক্য, কী ভাবেই বা তাঁদের নিয়োগ হয়, সেই সংক্রান্ত ধোঁয়াশা তৈরী হয় তাঁদের মধ্যে। এই লেখায় সেই সমস্ত তথ্যই সবিস্তারে দেওয়া হল।

প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক, বিচারক ও বিচারপতিদের মধ্যে ঠিক কী পার্থক্য?

সাধারণ ভাবে বলতে গেলে, নিম্নতন আদালতে যাঁরা বিচারব্যবস্থার দায়িত্বে থাকেন, তাঁদের 'বিচারক' বলা হয়। বিচারপতিদের আবার উচ্চ আদালত ও শীর্ষ আদালতেই কেবলমাত্র নিয়োগ করা হয়। যথেষ্ট অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যাক্তিদেরই কেবল মাত্র বিচারপতি পদে নিয়োগ করা হয়। নিম্নতন আদালতে বিচারকদের উচ্চ আদালতের পরমার্শ মেনে রাজ্যপাল নিয়োগ করেন। অন্য দিকে উচ্চ আদালত ও শীর্ষ আদালতের বিচারপতিরা কলেজিয়ামের সুপারিশ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিদের দ্বারা নিযুক্ত হন। সমস্ত বিচারপতিই আসলে বিচারক, কিন্তু সমস্ত বিচারক বিচারপতি নন। এ ছাড়া, যে কোনও জনস্বার্থ মামলার শুনানি কেবল মাত্র বিচারপতিরাই করতে পারেন, বিচারকরা পারেন না।

সাধারণত নিম্নতন আদালতে বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর পদোন্নতির মাধ্যমে উচ্চ আদালতে বিচারপতি পদে আসীন হতে পারেন তাঁরা। তাই এখানে বিচারকদের নিয়েই মূলত আলোচনা করা হবে।

বিচারকদের কর্তব্য ও দায়িত্ব:

সমাজে বিচারকের পদটি খুবই সম্মাননীয় পদ। বিচারকেরা বিচারালয়ে সমস্ত মামলা-মোকদ্দমার শুনানির পর দু'পক্ষের বাদানুবাদের নিরপেক্ষ বিচার করে চূড়ান্ত রায় দান করেন। বিচারালয়ে একজন বিচারককে নানাবিধ ভূমিকা পালন করতে হয়। যেমন--

১. বিচারকদের প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যপ্রমাণ মন দিয়ে শুনতে হয়।

২. ভারতের সংবিধানের রক্ষক হিসেবেও বিচারকদের ভূমিকা পালন করতে হয়।

৩. অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত দু'পক্ষের বক্তব্যকেই গুরুত্ব সহকারে শুনতে হয়।

৪. শুনানি চলাকালীন একজন নিরপেক্ষ রেফারির ভূমিকা পালন করতে হয়।

৫. সমস্ত জুরিদের নির্দেশ দিতে হয়।

৬. অভিযুক্তরা নির্দোষ না দোষী, তা খতিয়ে দেখতে হয়।

৭. দোষী প্রমাণিত হলে তাঁদের সাজা ঘোষণা করা।

৮. শুনানির সময় আসামীদের সাজার মেয়াদ স্থির করা।

৯. আসামীদের অধিকার সম্পর্কে তাঁদের সচেতন করা।

১০. প্রমাণের গ্রহণযোগ্যতা সংক্রান্ত নিয়মাবলি তাঁদের জানতে হয়।

১১. মামলাটি নিয়ে বিচারককে অনেক পড়াশোনাও করতে হয়।

১২. আদালতে চূড়ান্ত আইনি ক্ষমতার অধিকারী হওয়ায় চূড়ান্ত রায় ঘোষণাও বিচারককে করতে হয়।

১৩. এই রায় যাতে নিরপেক্ষ থাকে, সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হয়।

বিচারকের পদে আসীন হতে গেলে চাকরিপ্রার্থীদের নির্দিষ্ট কিছু যোগ্যতারও প্রয়োজন হয়। সেগুলি হল--

শিক্ষাগত যোগ্যতা:

প্রার্থীদের স্নাতক স্তরে ৫ বছরের বা ৩ বছরের এলএলবি ডিগ্রি থাকতে হবে। আবেদনের জন্য প্রার্থীদের এলএলএম ডিগ্রি বা মাস্টার্স ডিগ্রি পাশ করার দরকার হয় না। যাঁদের আইনসংক্রান্ত কোনও ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট কোর্স করা আছে, তাঁরা বিচারকের চাকরির জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না।

প্রবেশিকা পরীক্ষা:

এ ছাড়া, প্রার্থীদের জুডিশিয়াল সার্ভিসেস এগজামিনেশন বা প্রভিন্সিয়াল সিভিল সার্ভিস জুডিশিয়াল এগজামিনেশনও দিতে হয়। আইনে স্নাতক হওয়ার পর প্রার্থীরা এই পরীক্ষাটি দিতে পারবেন। এই পরীক্ষাটিতে পাশ করলে প্রার্থীরা নিম্নতন আদালতে যোগদান করতে পারবেন। এই পরীক্ষায় আবার লোয়ার জুডিশিয়াল সার্ভিস এবং আপার জুডিশিয়াল সার্ভিস-- এই দু'টি ভাগ থাকে।

পরীক্ষার ধরন:

জুডিশিয়াল সার্ভিসেস পরীক্ষায় প্রিলিমিনারি, মেন এবং ইন্টারভিউ-- এই তিনটি পর্যায়ে পরীক্ষার্থীদের যোগ্যতা যাচাই করা হয়।

কাজের অভিজ্ঞতা:

জেলা আদালতের বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার জন্য প্রার্থীদের সাত বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। উচ্চ আদালতে বিচারপতি হিসাবে নিযুক্ত হওয়ার জন্য ১০ বছর উচ্চ আদালতের আইনজীবী হিসাবে কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। শীর্ষ আদালতে বিচারপতি হিসাবে নিযুক্ত হওয়ার জন্য প্রার্থীদের উচ্চ আদালতে পাঁচ বছর বিচারক পদে কাজের অভিজ্ঞতা বা ১০ বছর উচ্চ আদালতের আইনজীবী হিসাবে কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এ ছাড়াও, রাষ্ট্রপতির মতে যদি কেউ উল্লেখযোগ্য আইনজ্ঞ বলে বিবেচিত হন, তাঁকেও শীর্ষ আদালতের বিচারপতি হিসাবে নিযুক্ত করা হয়।

প্রয়োজনীয় দক্ষতা:

আবেদনকারীদের কথা শোনার, কথা বলার, লেখার, যুক্তিসম্মত চিন্তার, আইন বিষয়ক জ্ঞান, বিশ্লেষণী ক্ষমতা, মধ্যস্থতা করার ক্ষমতা, নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি, খুঁটিয়ে দেখার ক্ষমতা, সহমর্মিতা-র মতো গুণাবলি থাকা জরুরি।

বিচারকদের প্রকারভেদ:

বিচারকদেরও শ্রেণিবিভাগ রয়েছে। সেগুলি হল--

১.জেলা আদালতের বিচারক

২.দেওয়ানি আদালতের বিচারক

৩.দায়রা আদালতের বিচারক

৪.উচ্চ আদালতের বিচারপতি

৫.শীর্ষ আদালতের বিচারপতি

বেতন কাঠামো:

নিম্নতন আদালতের বিচারকদের বেত্নে রাজ্য বিশেষে তারতম্য থাকে। উচ্চ আদালতের বিচারপতিরা পান মোটামুটি ভাবে মাসিক ২,২৫,০০০ টাকা এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা পান মোটামুটি ভাবে মাসিক ২,৫০,০০০ টাকা।

পশ্চিমবঙ্গের উল্লেখযোগ্য আইন শিক্ষার কলেজগুলি হল:

১. ওয়েস্ট বেঙ্গল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ জুরিডিক্যাল সায়েন্সেস

২. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়

৩. সাউথ কলকাতা ল কলেজ

৪. সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটি

৫. আইআইটি খড়্গপুর

এই সম্মাননীয় পদগুলিতে চাকরির জন্য চাকরিপ্রার্থীরা উপরে উল্লিখিত সমস্ত তথ্য দেখে, নিজেদের যোগ্যতা যাচাই করে চাকরির আবেদন জানাতে পারেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE