আদালত তাঁর স্বেচ্ছামৃত্যুতে সায় দেয়নি। কিন্তু, সোমবার সেই মৃত্যুর কোলেই ঢলে পড়লেন ৬৬ বছরের অরুণা শানবাগ। কোমায় আচ্ছন্ন ছিলেন দীর্ঘ ৪২ বছর। অবশেষে সোমবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান তিনি। গত সপ্তাহে নিউমোনিয়ায় সংক্রমিত হন তিনি। ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল তাঁকে।
কে এই শানবাগ?
কর্নাটকের হলদিপুরের বাসিন্দা অরুণা ১৯৭৩-এ জুনিয়র নার্স হিসাবে কাজে যোগ দেন মুম্বইয়ের পারেলে কিং এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হাসপাতালে। ওই বছরের ২৭ নভেম্বর রাতে হাসপাতালেরই এক সাফাইকর্মী সোহনলাল ভর্তা বাল্মিকী তাঁকে ধর্ষণ করে। জানা যায়, হাসপাতালের খাবার চুরি করার জন্য সোহনলালকে ভর্ত্সনা করেছিলেন অরুণা। কিন্তু সেই ভর্ত্সনার খেসারত যে এত ভয়ঙ্কর হবে সেটা তিনি আঁচ করতে পারেননি।
কাজ শেষে তখন বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন অরুণা। বেসমেন্টে পোশাক বদলানোর সময় তাঁর উপর পাশবিক অত্যাচার চালায় সোহনলাল। ধর্ষণ করার পর কুকুরের চেন দিয়ে তাঁকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার চেষ্টাও করে সে। তার পর সেখান থেকে চম্পট দেয় সোহনলাল। প্রায় ১১ ঘণ্টা পরে বেসমেন্ট থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় অরুণাকে। চেন দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করার ফলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। দৃষ্টিশক্তিও চলে যায়। সম্পূর্ণ কোমায় চলে যান অরুণা। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন থেকেই হাসপাতালের চার নম্বর ঘরটিই তাঁর স্থায়ী ঠিকানা হয়ে দাঁড়ায়।
ডাকাতি ও হত্যার চেষ্টার অভিযোগ এনে সোহনলালকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার সাত বছরের সাজা হয়। অরুণার উপর পাশবিক অত্যাচারের প্রতিবাদে দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায়। একই কারণে প্রতিবাদমুখর হন মুম্বইয়ের নার্সরা।
অরুণার শারীরিক পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে তাঁরই সাংবাদিক বন্ধু পিঙ্কি বিরানি ২০১০-এর ১৭ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের কাছে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানান। তাঁর শারীরিক অবস্থা খতিয়ে দেখতে সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে তিন সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। তবে শীর্ষ আদালত অরুণার স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন বাতিল করে দেয়। আদালতের যুক্তি ছিল, হাসপাতালের কর্মীরা অরুণাকে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করছে, তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। পিঙ্কি বিরানির সেই আবেদনের বিরোধিতা করেন অরুণার সহকর্মীরাও। দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে চিকিত্সা চলছিল তাঁর। শারীরিক অবস্থার উত্থান-পতনের মধ্য দিয়েই দিন-মাস-বছর গড়াচ্ছিল। অবশেষে এ দিন সকালে সেই লড়াইয়ে ইতি পড়ল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy