Advertisement
০৪ মে ২০২৪

চিত্পুরে লরির চাকায় পিষ্ট শিশু, জনতার রোষে পুড়ল ঘাতক লরি

স্কুলে যাওয়ার পথে গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল এক শিশুর। দুর্ঘটনার পড়ে উত্তেজিত জনতা আগুন লাগিয়ে দিল ঘাতক লরিতে। শুক্রবার সকাল ৭টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে চিৎপুর থানা এলাকার চিড়িয়া মোড়ে। লরির চালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিযোগ, পুলিশের তোলাবাজি এড়াতে সিগন্যাল না মেনেই লরিটি এগিয়ে এসেছিল।

এখানেই দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় সিনিধির। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

এখানেই দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় সিনিধির। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৫ ১১:৩৭
Share: Save:

স্কুলে যাওয়ার পথে গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল এক শিশুর। দুর্ঘটনার পড়ে উত্তেজিত জনতা আগুন লাগিয়ে দিল ঘাতক লরিতে। শুক্রবার সকাল ৭টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে চিৎপুর থানা এলাকার চিড়িয়া মোড়ে। লরির চালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিযোগ, পুলিশের তোলাবাজি এড়াতে সিগন্যাল না মেনেই লরিটি এগিয়ে এসেছিল।

পুলিশ সূত্রের খবর, মৃত স্কুল পড়ুয়া ওই শিশুটির নাম সিনিধি পাণ্ডে। কাশীপুরের নিউ ঝিল রোড়ের বাসিন্দা সিনিধি পার্ক সার্কাসের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। এ দিন সকালে স্কুলে যাবে বলেই মায়ের সঙ্গে বেরিয়েছিল সে। রাস্তা পারাপার করার সময়ই দুর্ঘটনাটি ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, চিড়িয়া মোড়ের কাছে খগেন্দ্র চ্যাটার্জি রোডে মায়ের হাত ধরে রাস্তা পারাপার করছিল সিনিধি। সে সময় সিগন্যাল না মেনে ঘাতক লরিটি খগেন্দ্র চ্যাটার্জি রোড থেকে বিটি রোডের দিকে ঘুরছিল। স্থানীয়দের অভিযোগ, তীব্র গতিতে লরিটি সিনিধির সামনে চলে আসায় টাল সামলাতে না পেরে রাস্তাতেই পড়ে যায় সে। লরির সামনের চাকাতে স্পিষ্ট হয়ে যায় তার মাথা। সিনিধিকে আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

পুলিশ জানিয়েছে, এর পরেই উত্তেজিত জনতা লরিটি ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়। এমনকী সেই সময়ে রাস্তা দিয়ে যাওয়া আরও কয়েকটি লরিতেও ভাঙচুর চালায় জনতা। আগুনে পুড়ে গিয়েছে ঘটনাস্থলে থাকা একটি গাছও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চিৎপুর থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। ঘটনাস্থলে আসে দমকলের দু’টি ইঞ্জিনও। দমকলের একটি গাড়িতেও উত্তেজিত জনতা ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।

এই দুর্ঘটনায় পরোক্ষ ভাবে পুলিশকেই দায়ী করেছেন স্থানীয়েরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, ঘটনাস্থলের কাছেই পুলিশ ছিল। কিন্তু কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীরা যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেননি, উপরন্তু তাঁরা রাস্তার প্রায় সমস্ত গাড়ি থেকেই বেআইনি ভাবে টাকা তুলছিল। পুলিশকে ফাঁকি দেওয়ার জন্যই গাড়িটি সিগন্যাল না মেনে খুব দ্রুত বি টি রোড দিয়ে বেরিয়ে যেতে যায়। যদিও বিষয়টি মানতে চাননি পুলিশ কর্তারা।

পরিবার সূত্রের খবর, রোজ স্কুলের পুল কারে করেই স্কুলে যেত সিনিধি। সামনে মাসির বিয়ে উপলক্ষে উত্তরপ্রদেশে মামার বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল তাদের। সে কারণেই স্কুলে ছুটির কথা বলার জন্য মা সরোজদেবী এ দিন মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন।

এ দিন শিশুটির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয়েরা বাড়ির বাইরে ভিড় করেছেন। ঝিল রোডের ওই বাড়িতে একে একে এসে পৌঁছেছেন সিনিধির আত্মীয়-স্বজনেরাও। চোখের সামনে মেয়েকে লরির চাকায় পিষ্ট হতে দেখেছেন মা সরোজদেবী। মেয়ের মৃত্যুর খবরটা তখনও তিনি জানেন না। কখনও কাঁদছেন আবার কখনও ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে রয়েছেন অন্যান্যদের দিকে। হাসপাতালে মেয়ে কেমন আছে জানতে চাইছেন বারবার। মেয়ে যে মারা গিয়েছে সে খবরটা দুপুর পর্যন্তও তাঁকে জানানোর সাহস পাননি পরিবারের লোকেরাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE